Advertisement
০৪ নভেম্বর ২০২৪
উদয়নারায়ণপুর ও আমতা: বস্তাপিছু দাম মিলছে ৯০-১১৫ টাকা

ক্ষতির মুখে আলুচাষিরা

গত বছরেও এই সময় মাঠ থেকে আলু বিক্রি হয়েছে ৪০০ টাকা বস্তা। অথচ এ বার তার অর্ধেক দামও পাচ্ছেন না আলুচাষিরা। মাঠ থেকে আলু বিক্রি হচ্ছে বস্তাপিছু ৯০ থেকে ১১৫ টাকা দরে।

বস্তাবন্দি হচ্ছে মাঠের আলু। —নিজস্ব চিত্র

বস্তাবন্দি হচ্ছে মাঠের আলু। —নিজস্ব চিত্র

কলকাতা
নুরুল আবসার শেষ আপডেট: ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০২:৫৩
Share: Save:

গত বছরেও এই সময় মাঠ থেকে আলু বিক্রি হয়েছে ৪০০ টাকা বস্তা। অথচ এ বার তার অর্ধেক দামও পাচ্ছেন না আলুচাষিরা। মাঠ থেকে আলু বিক্রি হচ্ছে বস্তাপিছু ৯০ থেকে ১১৫ টাকা দরে। গতবারের তুলনায় এ বার আলুর ফলন ভাল হওয়াতেই এমন সমস্যা বলে জানিয়েছেন হাওড়ার উদয়নারায়ণপুরের আলুচাষিরা।

জেলার আমতা-২ ও উদয়নারায়ণপুর—এই দুই ব্লকে আলুর চাষ বেশি। গত বছর ভাল দাম পাওয়ায় এ বার দুই ব্লকের বহু চাষিই আলু চাষ করেছিলেন। তাঁরা জানিয়েছেন, নোট বাতিলের জেরে এ বার সমবায় সমিতি থেকে ঋণ পাননি। ফলে মহাজনের কাছ থেকে ধারে তাঁরা আলু বীজ কেনেন। ধারে সার পেয়েছিলেন সমবায় সমিতি থেকে। ট্রাক্টর ও মজুরের খরচ জোগাড়ে কেউ ঘরের গয়না বন্ধক রেখেছিলেন। কেউ মহাজনদের থেকে চড়া সুদে টাকা ধার করেন। ভেবেছিলেন গতবারের মতো আলুর দাম পাবেন। কিন্তু যা অবস্থা দাঁড়িয়েছে তাতে মহাজনের ধার শোধ তো দূরের কথা চাষের খরচ উঠবে কি না তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে।

আলুচাষিরা জানান, এক বিঘা জমিতে আলু চাষে খরচ পড়ে ২০ হাজার টাকা। অধিকাংশ চাষি নিজেরাই জমিতে খাটেন। আগের বার বিঘাপ্রতি ৫৫ থেকে ৬০ বস্তা আলু উঠেছিল। বস্তাপিছু ৪০০ টাকা দরে (এক বস্তায় থাকে ৫০ কিলোগ্রাম আলু) মাঠ থেকেই আলু বেচে বিঘাপ্রতি খরচ বাদ দিয়ে তাঁদের হাতে এসেছিল ৪-৫ হাজার টাকা। কিন্তু এ বার ফলন ভাল হলেও আগের দাম মিলছে না। এ বার মাঠ থেকে বস্তাপিছু দাম পাচ্ছেন ৯০-১১৫ টাকা। সেই হিসাবে তাঁদের বিঘাপ্রতি জমিতে লোকসানের পরিমাণ ১০-১৫ হাজার টাকা। এই অবস্থায় কী ভাবে তাঁরা মহাজনের ঋণ শোধ করবেন তা নিয়েই চিন্তায় চাষিরা।

উদয়নারায়ণপুরের সীতাপুর গ্রামে গিয়ে দেখা গেল চাষিরা এসে লাইন দিয়ে মহাজনদের কাছে জমি থেকেই আলু বিক্রি করছেন। শ্রীমন্ত কোলে নামে ওই মহাজন বলেন, ‘‘কী করব। আলুর দাম নেই। ফলে কম দামে আমরা আলু কিনতে বাধ্য হচ্ছি। গত বার এই সময় আলুর কিলোপ্রতি ৮টাকা দাম ছিল। এবার তা ২ টাকায় নেমেছে।’’

এক বিঘা জমিতে বীজ লাগে এক কুইন্টাল। দাম দু হাজার টাকা। শর্ত হল, আলু উঠলে যিনি ধারে বীজ দিয়েছেন সেই মহাজনকেই আলু বিক্রি করতে হবে। নবকুমার ভৌমিক নামে এক চাষিকে দেখা গেল সাইকেলে করে মাঠ থেকে আলু তুলে প্রায় ২ কিলোমিটার দূরে পৌঁছে দিচ্ছেন মহাজনের ট্রাকে। বস্তাপ্রতি মজুরি ১৪ টাকা। নবকুমারবাবু বলেন, ‘‘এ বার আলুর যা দাম পেয়েছি তাতে অন্য খরচ তো দূরের কথা মহাজনের বীজের দেনাই শোধ হবে না। তাই সাইকেলে করে আলু বয়ে দিচ্ছি। মজুরিবাবদ যে টাকা পাব সেটাও মহাজনকে দিয়ে দিতে হবে। এ ভাবেই ঋণ শোধ করতে হচ্ছে।’’ একই হাল আমতা ২ ব্লকের চাষিদেরও।

কেন এই অবস্থা?

জেলা কৃষি দফতর সূত্রে খবর, প্রতি বছর বৃষ্টি বা শিলাবৃষ্টির কারণে কিছু আলু নষ্ট হয়ে যায়। ফলে ফলনের সঙ্গে দামের একটা সামঞ্জস্য থাকে। গত বছরেও চাষিরা আলুর ভাল দাম পেয়েছিলেন। যা দেখে এ বছর প্রচুর চাষি আলু চাষে নেমে পড়েন। এমনকী নোট বাতিলের পরে টাকার সমস্যাও তাঁদের দমাতে পারেনি। এ বছর আবহাওয়া বেশ অনূকুল ছিল। ফলে আলুর ফলন যথেষ্ট ভাল হয়েছে। বেশি ফলনেরই খারাপ প্রভাব পড়েছে দামের উপরে। দফতরের এক কর্তা জানান, এখন যে আলু উঠছে তা সুপার সিক্স (এস ১) প্রজাতির। জ্যোতি ও চন্দ্রমুখী এখনও ওঠেনি। ওই আলু উঠলে দাম কোথায় নামবে তা ভেবেই শিউরে উঠতে হচ্ছে।

তবে উদয়নারায়ণপুর, আমতায় আলুচাষিদের এমন সমস্যা নিয়ে সরব হয়েছে আমতার বিধায়ক অসিত মিত্র। তাঁর দাবি, ‘‘সমস্যার সমাধানে রাজ্য সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে। অবিলম্বে ন্যূনতম সহায়ক মূল্যে সরকার আলু না কিনলে হাজার হাজার চাষি ক্ষতির মুখে পড়বেন।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Potato farmer Potato Loss
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE