Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪

ভিজে মাটি ও নগদে টান, দুই ফলায় বিদ্ধ আলু চাষ

গত মরসুমে প্রবল বৃষ্টি। সেই সঙ্গে সময়মত নগদের জোগানের অভাব। দুইয়ের সাঁড়াশি আক্রমণে এ বার রাজ্যে আলুর ফলন কম হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।

জমিতে আলু বসানো হচ্ছে।—নিজস্ব চিত্র।

জমিতে আলু বসানো হচ্ছে।—নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
চুঁচুড়া শেষ আপডেট: ০৭ ডিসেম্বর ২০১৬ ০০:৪৮
Share: Save:

গত মরসুমে প্রবল বৃষ্টি। সেই সঙ্গে সময়মত নগদের জোগানের অভাব। দুইয়ের সাঁড়াশি আক্রমণে এ বার রাজ্যে আলুর ফলন কম হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।

আলু সময় নির্ভর চাষ। এই চাষে আলু জমিতে বসানোর সময়ের তারতম্যে উৎপাদনে হেরফের হতে পারে। কল্যাণী কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক বিশেষজ্ঞের মতে, ‘‘অনেকেই শুধু নগদের কথা বলছেন। কিন্তু এর পাশাপাশি গতবার প্রচুর বৃষ্টি হয়েছে। আলু চাষের জন্য জমির মাটি শুকনো হওয়া অত্যন্ত জরুরি। এবার অনেক ক্ষেত্রে চাষের জমির মাটি না শুকানোয় সময়মতো আলু বসানো যায়নি।’’

বস্তুত অক্টোবর মাস থেকে নভেম্বরের ১৫ তারিখের মধ্যে আলু বসানোর আদর্শ সময়। বড়জোর ২০ তারিখ পর্যন্ত অপেক্ষা করা যেতে পারে। পশ্চিমবঙ্গে যে সময়ে ঠান্ডা পড়ে তার ভিত্তিতেই আলু বসানোর সময় নির্ধারিত হয়। কিন্তু এ বার পরিস্থিতি ভিন্ন। আলুর জমি বহু ক্ষেত্রেই শুকনো পাননি চাযিরা। যাই যাই করেও বর্ষা এ বার দীর্ঘায়িত হয়েছে। তার উপর নগরায়নের ঠেলায় কৃষিজমির লাগোয়া বসতবাড়ি গড়ে উঠছে। তার জেরে জমির নিকাশি ব্যবস্থার সমস্যা হচ্ছে। ফলে চাষের জমি ভিজে থাকছে।

এই অবস্থায় নগদের জোগানের অস্থির পরিস্থিতি আলু চাষকে আরও সংশয়ের মুখে ঠেলে দিয়েছে। গ্রামাঞ্চলে চাষের মরসুমে কৃষি সমবায়গুলির ঋণের উপর চাষিরা অনেকাংশে নির্ভরশীল। এ বার প্রয়োজনের সময়ে সমবায়গুলিতে টাকার হাহাকার। টাকার জন্য দরবার করে সমবায় কর্তারা টাকা পাননি। হুগলি জেলার ৩৭২টি সমবায়ে একই পরিস্থিতি। হুগলি বাদে রাজ্যের আলু উৎপাদন জেলার মধ্যে রয়েছে বর্ধমান এবং পশ্চিম মেদিনীপুর। ওই দুই জেলাতেও আলু চাষের পরিস্থিতি এবার ভাল নয়।

গত মরসুমে রাজ্যে আলু উৎপাদন হয়েছিল ৯০ লক্ষ মেট্রিক টন। এ বার এখন পর্যন্ত যা পরিস্থিতি তাতে গতবারের চেয়ে এবার রাজ্যে আলুর উৎপাদন কম হওয়ার সম্ভাবনা। রাজ্য কৃষি দফতরের এক কর্তা জানান, এখনও পর্যন্ত আলু বসানোর কাজ করছেন চাষিরা। তাই ঠিক কতটা পরিমাণ জমিতে আলু বসানো হচ্ছে তা নিশ্চিত করে এখনই বলা সম্ভব নয়। তারকেশ্বরের এক আলু চাষি বলেন, ‘‘প্রাথমিকভাবে পরিস্থিতি খুব খারাপ ছিল। তবে পরে কৃষি সমবায়গুলি থেকে সার এবং বীজের টাকা পাওয়া গিয়েছে। চাষির চাহিদা অনুয়ায়ী মেলেনি এটা ঘটনা। তাই আলুর চাষের জমির পরিমাণ এ বার কমেছে।’’

হুগলি জেলা কৃষি সমবায়ের কর্তা শাশ্বত বসুচোধুরী বলেন, ‘‘সার্বিকভাবে হয়তো আলু চাষের জমির পরিমাণ এবার কিছুটা কমবে। তবে পরিস্থিতি যা ছিল, তার অনেকটাই সামলে নেওয়া গিয়েছে। এখনও জমিতে আলু বসানোর কাজ চলছে।’’

তবে সব দোলাচল মিটিয়ে শেষ পর্যন্ত রাজ্যে আলুর চাষের পরিমাণ কত তা জানতে আরও কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে। তার উপরই নির্ভর করবে সামনের বছরে আলুর দাম।

অন্য বিষয়গুলি:

wet soil and lack of cash Potato farming
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE