Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪

আরও ঈশান গড়তে তৎপর চন্দননগর

চন্দননগরের ক্রিকেট-কর্তারা চাইছেন, বঙ্গ ক্রিকেট তথা দেশের প্রথম সারির ক্রিকেটারদের ‘সাপ্লাই লাইন’ হয়ে উঠুক এ শহর। রাজ্যের ক্রীড়া মানচিত্রেও নিজের জায়গা করে নিক। তাই খুদে প্রতিভাদের ঠিকমতো তুলে ধরতে আয়োজনের অন্ত নেই।

সম্মান: চন্দননগর পুলিশ কমিশনারেটের উদ্যোগে ঈশান পোড়েলকে সংবর্ধনা কমিশনার অজয় কুমারের। ছবি: তাপস ঘোষ

সম্মান: চন্দননগর পুলিশ কমিশনারেটের উদ্যোগে ঈশান পোড়েলকে সংবর্ধনা কমিশনার অজয় কুমারের। ছবি: তাপস ঘোষ

প্রকাশ পাল
চন্দননগর শেষ আপডেট: ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০১:১৬
Share: Save:

ঘরের ছেলে ঈশান পোড়েল অনূর্ধ্ব-১৯ ক্রিকেটে বিশ্ব দাপিয়ে এলেন। তাঁরই জ্যাঠতুতো ভাই অভিষেক অনূর্ধ্ব-১৬ বাংলা দলের অধিনায়ক। প্রতিভা ছড়িয়ে রয়েছে আরও।

পাশে সিএবি। চন্দননগরের ক্রিকেট-কর্তারা চাইছেন, বঙ্গ ক্রিকেট তথা দেশের প্রথম সারির ক্রিকেটারদের ‘সাপ্লাই লাইন’ হয়ে উঠুক এ শহর। রাজ্যের ক্রীড়া মানচিত্রেও নিজের জায়গা করে নিক। তাই খুদে প্রতিভাদের ঠিকমতো তুলে ধরতে আয়োজনের অন্ত নেই। তাদের প্রশিক্ষণ চলছে বছরভর। পিচের দেখভাল হচ্ছে নিয়মিত। নতুন সংযোজন শহরের ইন্ডোর স্টেডিয়াম।

বুধবার ঈশানকে নিয়ে যখন গোটা শহর ব্যস্ত, তখন চন্দননগর স্পোর্টিং অ্যাসোসিয়েশনের ক্রিকেট সচিব রাজীব ঘোষ এবং সাব-কমিটির সদস্যেরা উৎকণ্ঠায় ছিলেন তাঁদের সিনিয়র দলের অফস্পিনার মহম্মদ আরসাদকে নিয়ে। মঙ্গলবার দক্ষিণ ২৪ পরগনা ক্রীড়া সংস্থার বিরুদ্ধে সিএবি পরিচালিত আন্তঃজেলা সিনিয়র লিগে ফিল্ডিংয়ের সময় আহত হন তিনি। চন্দননগর হাসপাতালে তাঁর ঠোঁটে আটটি সেলাই পরে। পরে শহরেরই একটি নার্সিংহোমে তাঁকে স্থানান্তরিত করানো হয়। সিএবি-ও আরসাদদের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছে বলে জানিয়েছেন রাজীব।

জেলায় জেলায় ছড়িয়ে থাকা ক্রিকেট প্রতিভার বিকাশের জন্য বছর চারেক আগে সিএবি ‘ভিশন-২০২০’ কর্মসূচি নেয়। অর্থাৎ, ২০২০ সালের মধ্যে জেলাগুলিতে যথাযথ ক্রিকেট পরিকাঠামো তৈরি করে বাংলা দলে নিয়মিত ভাল খেলোয়াড়ের জোগান যাতে নিশ্চিত হয়। চন্দননগর অবশ্য অনেক আগে থেকেই এ কাজে নেমে পড়েছিল। এক সময়ে বয়সভিত্তিক রাজ্য দলে খেলেছে এ শহরের রঞ্জন সরকার, সতীন্দ্রনাথ নন্দী, অমিত মান্না, তিলক অধিকারীরা। ১৯ বছর আগে বয়সভিত্তিক কোচবিহার ট্রফি জিতেছিল বাংলা দল। সেই দলে ছিলেন এ শহরের ক্রিকেটার প্রশান্ত সিংহরায় (চলতি মরসুমেও দ্বিতীয় বার ওই ট্রফি জিতল বাংলা। যে দলের সদস্য ছিলেন ঈশান)। এমন উদাহরণ আরও রয়েছে।

ভবিষ্যৎ: শহরের একটি অনুশীলন কেন্দ্রে। ছবি: তাপস ঘোষ

এখন সিএবি পাশে দাঁড়ানোয় বাড়তি ভরসা পেয়েছেন এ শহরের ক্রিকেট কর্তারা। সিএবি-র সাড়ে ১২ লক্ষ টাকায় ইন্ডোর স্টেডিয়াম তৈরি হয়েছে কুঠির মাঠে। ফলে, বর্ষাকালেও প্র্যাকটিসে ছেদ পড়বে না। মাঠ দেখভালের জন্য কুঠির মাঠে তিন জন এবং মেরির মাঠে দু’জন মালি নিয়োগ হয়েছে। ঘরোয়া ক্রিকেটে অনূর্ধ্ব- ১৬, টি-টোয়েন্টি, সুপার ডিভিশন এবং প্রথম ডিভিশন ক্রিকেট প্রতিযোগিতা হচ্ছে। এমনকী, সিএবি-র তত্ত্বাবধানে স্কুল-সহ নানা স্তরের ক্রিকেটেরও আয়োজন হচ্ছে। এখন সিএবি-র আন্তঃজেলা সিনিয়র লিগ চলছে এই শহরে। আন্তঃজেলা অনূর্ধ্ব-১৪ এবং অনূর্ধ্ব-১৯ প্রতিযোগিতা হয়েছে। বৃহস্পতিবার থেকে অনূর্ধ্ব-১৬ আন্তঃক্লাব প্রতিযোগিতাও শুরু হয়েছে। ক্রিকেট কর্তা বিশ্বজিৎ ঘোষ জানান, সামনেই বাংলাদেশের অনূর্ধ্ব-১৫ ক্রিকেট দল রাজ্যে আসছে। মার্চের গোড়ায় চন্দননগরে একটি ওয়ান-ডে ম্যাচ খেলবে তারা।

নিয়মিত ম্যাচ পাওয়ায় এখানকার ক্রিকেটাররা সমৃদ্ধ হচ্ছে বলে মনে করছেন ক্রিকেট-কর্তারা। বিশ্বজিতের দাবি, ‘‘ঈশানের সাফল্যে চন্দননগর স্পোর্টিং অ্যাসোসিয়েশনের যথেষ্ট ভূমিকা আছে। কুঠির মাঠের উন্নয়ন নিয়ে মন্ত্রী ইন্দ্রনীল সেনের সঙ্গে কথা হয়েছে। উন্নত মানের ড্রেসিংরুম, ফেন্সিং লাগানো এবং ইন্ডোর স্টেডিয়ামে ফ্লাডলাইট লাগানোর ব্যাপারে আমরা আবেদন জানাচ্ছি।’’ কুঠির মাঠের পিচ নিয়ে উচ্ছ্বসিত সিএবি-র তরফে আন্তঃজেলা ক্রিকেট পর্যবেক্ষক পৃথ্বীজিৎ ঘোষ। তিনি বলেন, ‘‘অসম্ভব ভাল উইকেট। সে জন্যই প্রচুর রান উঠছে। যোগ্য হিসেবেই চন্দননগর বাংলাদেশ ম্যাচ পেয়েছে। তবে আউটফিল্ডটা আর একটু ভাল করতে হবে। খেলোয়াড়দের খাওয়া-দাওয়ার ক্ষেত্রেও ঠিকঠাক পদক্ষেপ করছেন এখানকার
ক্রিকেট-কর্তারা।’’

গত কয়েক বছরে অ্যাসোসিয়েশনের অনুষ্ঠানে এসেছেন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় এবং অভিষেক ডালমিয়া। ক্রিকেটের পরিকাঠামো ঢেলে সাজতে তাঁদের যথেষ্ট ভূমিকা রয়েছে বলে জানাচ্ছেন ক্রিকেট-কর্তারা। অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক বামাপদ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আরও কয়েকটা ঈশান তৈরি করাই আমাদের লক্ষ্য। যারা এখান থেকে বেরিয়ে বাংলার হয়ে খেলবে। তার পরে দেশের জার্সিতে মাঠ মাতাবে।’’

চন্দননগরে এখন ক্রিকেটের জোয়ার।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE