গত জুনে হুগলির চণ্ডীতলায় প্রশাসনিক বৈঠক করে গিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু সেখানে মণ্ডপ, এসি মেশিন বা খাবার জুগিয়েছিলেন যাঁরা, এখনও তাঁরা বকেয়া টাকা পাননি। যার পরিমাণ অন্তত ২২ লক্ষ টাকা। ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, প্রশাসনের কাছে বারবার দরবার করা হলেও সাড়া মেলেনি।
শুধু জেলা প্রশাসন নয়। চণ্ডীতলা পঞ্চায়েত সমিতির কর্তাদের কাছেও নিত্য তাগাদা দিয়ে জুতোর সুকতলা খোয়াচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। পঞ্চায়েত সমিতির এক কর্তার বক্তব্য, “আমরাই লজ্জায় পড়ে গিয়েছি। ওঁরা আমাদের দেখেই অনেক ক্ষেত্রে অগ্রিম টাকা না নিয়ে মালপত্র দিয়েছিলেন সরকারি কাজে। পুরোপুরি বিশ্বাসের ভিত্তিতে। ওঁদের মুখ চেয়ে প্রশাসনের কর্তাদের কাছে আমরাও বারবার অনুরোধ করেছি। কিন্তু সাড়া পাইনি।”
গত ৮ জুন চণ্ডীতলায় এসে হুগলি জেলার প্রশাসনিক বৈঠক করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ব্লক অফিস লাগোয়া সরকারি হলে সেই বৈঠক হয়। প্রশাসন সূত্রে খবর, হল ঠান্ডা করার জন্য অন্তত ১০০ টনের এসি মেশিন ভাড়া করা হয়েছিল। সাউন্ড সিস্টেমের ব্যবস্থা করা হয় নামী সংস্থাকে দিয়ে। পাঁচটি ভাল জেনারেটরও ভাড়া করা হয়েছিল। বর্ষার সময় হওয়ায় ব্লক অফিস লাগোয়া জায়গায় পাকা মণ্ডপ করে ঘেরা হয়। বৈঠকে আসা অফিসারদের খাওয়ার জন্য ভাল ক্যাটারিং সংস্থাকে বরাত দেওয়া হয়েছিল। এ ছাড়া আরও নানা সামগ্রী ভাড়া নেওয়া হয়।
প্রশাসন সূত্রের খবর, শেষ পর্যন্ত ওই বৈঠকের মোট খরচ দাঁড়ায় ২৭ লক্ষ টাকায়। তত্কালীন জেলাশাসক মনমীত নন্দা প্রস্তুতির প্রাথমিক খরচ বাবদ পাঁচ লক্ষ টাকা দিয়েছিলেন। বাকি পুরো টাকাই বকেয়া থেকে যায়। সেই সময়ে ব্যবসায়ীদের আশ্বস্ত করা হয়েছিল, সময়ে সব টাকা মিটিয়ে দেওয়া হবে। কিন্তু তা আর হয়নি। চণ্ডীতলার বিডিও সিদ্ধার্থ গুইন অবশ্য দাবি করেন, “ওই সমস্যা অনেকটাই মিটেছে। বকেয়া টাকার সংস্থান হয়ে গিয়েছে। ব্যবসায়ীরা বকেয়া টাকা পেয়ে যাবেন।” যা শুনে ভুক্তভোগী ব্যবসায়ীদের আক্ষেপ, এই ধরনের সরাকরি আশ্বাস তাঁরা প্রায় এক বছর ধরেই শুনে আসছেন।
প্রশাসনের একটি সূত্রের দাবি, ব্যবসায়ীরা বকেয়া টাকা না পাওয়ার নেপথ্যে রয়েছে স্থানীয় বিডিও-র সঙ্গে জেলা প্রশাসনের পদস্থদের মধ্যে দড়ি টানাটানি। ওই বৈঠকের পরই জেলা প্রশাসনের সর্বোচ্চ মহল থেকে বলা হয়েছিল, চণ্ডীতলার বিডিও-র নিজস্ব তহবিলে মিড-ডে মিল, ইন্দিরা আবাস যোজনা-সহ অন্য নানা খাতের প্রচুর টাকা রয়েছে, যা তখনই কাজে লাগবে না। ওই তহবিল থেকেই বকেয়া টাকা মিটিয়ে দিতে বলা হয়। কিন্তু বিডিও তাতে রাজি হননি। যুগ্ম বিডিও-কে জেলাসদরে পাঠিয়ে এই মর্মে লিখিত নির্দেশ আনতে বলেন তিনি। তাতেই ঝামেলা বেধে যায়। জেলা প্রশাসনের এক কর্তা দাবি করেন, বিডিও আগেই কোনও রকম লিখিত নির্দেশ ছাড়া ওই সব তহবিল থেকে নানা খাতে টাকা খরচ করেছেন। তা হলে, এ বার তিনি লিখিত নির্দেশ চাইছেন কেন, এই প্রশ্ন তোলা হয়। কিন্তু বিডিও এর কোনও ব্যাখ্যা দেননি। তাই জটও খোলেনি।
ইতিমধ্যে মনমীত নন্দা বদলি হয়ে নতুন জেলাশাসক হিসেবে এসেছেন সঞ্জয় বনশাল। কিন্তু তাতেও যে ব্যবসায়ীদের সমস্যার কোনও হিল্লে হবে, তেমন ইঙ্গিত এখনও মেলেনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy