অভিনন্দন: করোনা জয়ীকে শুভেচ্ছা প্রতিবেশীদের। ছবি: সুশান্ত সরকার
অ্যাম্বুল্যান্সের আওয়াজ পেতেই পাড়া-পড়শিরা ঘর থেকে বেরিয়ে পড়েছিলেন। গাড়ি থামতেই হাততালি। সাদা শাড়ি পরা ‘ঠাকুমা’ নামতেই হাতে ধরিয়ে দেওয়া হল ফুলের তোড়া, মিষ্টি। সঙ্গে শুকনো খাবার।
কোভিডকে পরাস্ত করে ফিরে আসা বছর বিরাশির ওই বৃদ্ধাকে মঙ্গলবার দুপুরে এ ভাবেই বরণ করলেন তাঁর পাড়া মগরা হাসপাতাল রোডের বাসিন্দারা। বৃদ্ধার আনন্দ দেখে কে!
বৃদ্ধা ভিক্ষা করেন। ছেলে-নাতিকে নিয়ে তাঁর সংসার। অসুস্থ ছেলে তেমন কাজ করতে পারেন না। নাতি হোটেলে ফাইফরমাস খাটেন। সম্প্রতি বৃদ্ধার শ্বাসকষ্ট হয়। গত ২২ অগস্ট এলাকাতেই সরকারি শিবিরে তাঁর লালারস সংগ্রহ করা হয়। ২৫ তারিখ রিপোর্ট এলে দেখা যায়— করোনা পজ়িটিভ। মগরা-১ পঞ্চায়েতের উপপ্রধান রঘুনাথ ভৌমিক এবং পাড়ার ছেলেদের তৎপরতায় পরের দিন বৃদ্ধাকে ব্যান্ডেল ইএসআই কোভিড হাসপাতালে ভর্তি
করানো হয়।
কোভিড-জয় করে ফেরার দিন শুধু নয়, গোটা-পর্বেই বৃদ্ধার পরিবারের খেয়াল রেখেছেন প্রতিবেশীরা। করোনা-কালে যখন নিজের পরিবারের লোকের প্রতিও এক শ্রেণির মানুষের মনোভাব নিয়ে নানা প্রশ্ন, তখন এই ঘটনা সমাজে সদর্থক বার্তা দেবে বলে অনেকেই মনে করেন।
বৃদ্ধার বিষয়ে যোগাযোগের জন্য পড়শি রাজু দাস এবং মাধাই দাসের ফোন নম্বর হাসপাতালে দেওয়া হয়েছিল। মাধব, রাজু নিজেরাও ফোন করে বৃদ্ধার অবস্থার খোঁজ নেন। রাজুর কথায়, ‘‘ঠাকুমাকে যে দিন হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়, ওঁর বয়সের জন্য ভয় পেয়েছিলাম। সুস্থ হয়ে ফিরে আসায় এটা বোঝা গিয়েছে, এই বয়সেও করোনাকে দিব্যি হারানো যায়। তাই, গোটা পাড়া খুশি।’’ বৃদ্ধা হাসপাতালে থাকাকালীন তাঁর ছেলে এবং নাতির খাবার পাড়ার ছেলেরাই পৌঁছে দিয়েছেন।
কিছু দিন আগে ওই এলাকাতেই এক ব্যক্তি সংক্রমিত হয়েছিলেন। আশপাশের কিছু লোক ওই পরিবারের সঙ্গে মেলামেশা কার্যত বন্ধ করে দেন। তখন রাজু, প্রশান্ত দাস, গৌর বাগ প্রমুখই এগিয়ে যান। ওই বাড়িতে প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রী পৌঁছে দিয়ে আসা হয়। রাজু চিত্রশিল্পী। ছবি আঁকা, সাইনবোর্ড লেখা তাঁর পেশা। তাঁর কথায়, ‘‘করোনা নিয়ে বিভ্রান্তির জন্য সামাজিক ক্ষেত্রে বিভেদের ছবিও দেখা গিয়েছে। এর উল্টো ছবিটাই কিন্তু সমাজকে বর্তে দিতে পারে। আমরা সেটাই চেয়েছি।’’
রঘুবাবু পঞ্চায়েতের ওই সংসদের সদস্য। কোভিড নিয়ে সাধারণ মানুষরে সচেতন করতে চেষ্টার কসুর করেন না তিনি। বৃদ্ধা হাসপাতাল থেকে ফেরার সময় তিনি নিজে হাজির থেকে মানুষের ভয় ভাঙানোর চেষ্টা করেছেন। ছিলেন অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী মিতা দে-ও। রঘুর কথায়, ‘‘নিজে সতর্ক থাকলেই রোগ থেকে দূরে থাকা যায়, এটা সবাইকে বুঝতে হবে। রাজু, মাধবরা এই কাজটাই করছেন। সংক্রমিতদের পাশে দাঁড়াচ্ছেন।’’
পাড়ার ছেলেদের সম্পর্কে বলতে গিয়ে বৃদ্ধা খুশিতে আত্মহারা! তাঁর কথায়, ‘‘হাসপাতালে ভালই যত্ন করেছে। পাড়ার ছেলেরা না থাকলে কী যে হতো! ওঁরা খুব ভাল।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy