একুশে: হাওড়ার খলিশানিতে মুম্বই রোডের উপরে সমাবেশমুখী বাসের লাইন।
দুর্ভোগের আশঙ্কা ছিলই। সেটাই শেষ পর্যন্ত সত্যি হল।
তৃণমূলের শহিদ দিবস, একুশে জুলাই জেলা থেকে দলীয় কর্মী-সমর্থক বোঝাই বাস ধর্মতলা ছোটার রেওয়াজ নতুন নয়। প্রতি বছরেই এই দিনে রাস্তা থেকে উধাও হয়ে যায় যানবাহন। দুর্ভোগে পড়েন সাধারণ মানুষ। সেই চেনা ছবিই ফিরে এল হাওড়া ও হুগলিতে। এ দিন মুম্বই রোড, হাওড়া-আমতা রোড, দিল্লি রোড, দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ে, অহল্যাবাঈ রোড উজিয়ে তৃণমূল কর্মী-সমর্থক বোঝাই একের পর এক বাস ধর্মতলার সমাবেশে গিয়েছে। হুগলিতে যাত্রিবাহী বাসের সংখ্যা ছিল অনেক কম। গ্রামীণ হাওড়ায় কিছু সরকারি বাস চললেও যাত্রী তেমন ছিল না।
বুধবার থেকেই আরামবাগ মহকুমার রাস্তা থেকে বাস প্রায় উধাও হয়ে গিয়েছিল। শুক্রবার সমস্যা চরম আকার নেয়। এ দিন রাস্তায় কার্যত কোনও বাস ছিল না। জরুরি প্রয়োজনে রাস্তায় বেরোনো লোকজনকে বেশি টাকা দিয়ে গাড়ি ভাড়া করতে হয়েছে। যানবাহন না থাকায় কর্মীদের অফিসে ঢুকতেও দেরি হয়। ফেরার গাড়ি না পাওয়ার আশঙ্কায় অনেকেই আগেভাগে অফিস থেকে বেরিয়ে গিয়েছেন। আরামবাগের মহকুমাশাসক প্রীতি গোয়েল অবশ্য জানান, এ দিন এই মহকুমার সরকারি অফিসগুলিতে প্রায় ১০০ শতাংশ হাজিরা ছিল।
তবে শ্রীরামপুর, উত্তরপাড়া, চুঁচুড়ার শহর এলাকায় এ দিন দুর্ভোগ তুলনায় কম হয়েছে। কারণ এই এলাকার বেশিরভাগ মানুষ সড়কপথের বদলে ট্রেন ব্যবহার করেন। তবে এ দিন সকালে ভিড়ের চাপে অনেকেই ট্রেনে উঠতে পারেননি। পান্ডুয়ার ভোটগ্রামের বাসিন্দা প্রণব কুমার দাস বলেন, ‘‘রোজ ন’টার ট্রেনে হাওড়া যাই। আজ সেই ট্রেনে ভি়ড়ের চাপে উঠতে পারিনি। পরের ট্রেন ধরেছি।’’ ধনেখালির মাকালপুরের বাসিন্দা অমর প্রামাণিক চুঁচুড়া আদালতে কাজ করেন। তিনি বলেন, ‘‘বাসে করে কর্মস্থলে যাই। আজ বাস চলেনি। বেশি টাকা দিয়ে গাড়ি ভাড়া করে চুঁচুড়া স্টেশনে গিয়েছি। সেখান থেকে টোটো করে আদালত যাই।’’
এ দিন গ্রামীণ হাওড়ার ছবিটা কিছুটা আলাদা ছিল। সরকারি বাস, ট্রেকার চললেও যাত্রীর সংখ্যা অন্য দিনের তুলনায় কম ছিল। বেশিরভাগ রাস্তাই ছিল শুনশান। বাগনান বাসস্ট্যান্ড-সহ কয়েকটি এলাকায় কিছু দোকানও বন্ধ ছিল। এ দিন সকাল থেকেই মুম্বই রোডের দখল নিয়েছিল সমাবেশমুখী বাস, ট্রাক ও ছোট গাড়ি।
বেলা ১১টা নাগাদ সুজয় দলুই নামে এক ব্যক্তি বাগনান বাসস্ট্যান্ডে ঘুরছিলেন। তিনি নবান্নে চাকরি করেন। ‘‘অফিস যাননি’’—এই প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘‘নবান্ন পর্যন্ত যাবো কীভাবে? তাই আজ ছুটি নিলাম।’’ সুজয়বাবুর মতো গ্রামীণ হাওড়ার অনেকেই এ দিন দুর্ভোগের আশঙ্কায় কর্মক্ষেত্রে যাননি।
ধর্মতলা-বাগনান, আমতা-ধর্মতলা, গড়ভবানীপুর-ধর্মতলার মতো বিভিন্ন রুটে সরকারি বাস চললেও যাত্রী তেমন ছিল না। উদয়নারায়ণপুরে এ দিন কোনও বেসরকারি বাস চলেনি। বিভিন্ন এলাকায় ট্রেকার চললেও তেমন ভিড় ছিল না। হাওড়াগামী লোকাল ট্রেনগুলিতে সাধারণ যাত্রীদের সংখ্যা অন্য দিনের তুলনায় কম ছিল।
এ দিন দুই জেলাতেই ‘সেফ ড্রাইভ, সেভ লাইফ’ কর্মসূচি শিকেয় ওঠে। সমাবেশমুখী বেশিরভাগ মোটরবাইক আরোহীর মাথাতেই হেলমেট ছিল না। অনেকে বাসের ছাদে বসেছিলেন। পুলিশ অন্য দিন বিনা হেলমেটের মোটরবাইক আরোহীদের ধরতে ধরপাকড় চালালেও এ দিন সেই তৎপরতা চোখে পড়েনি। এ দিন ডানকুনি টোল প্লাজায় টোল ট্যাক্স নেওয়া হয়নি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy