Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪

পথের আয়েই ভাঁড়ার ভরছে রোগীকল্যাণ

যাঁরা দিনের পর দিন হাসপাতাল চত্বরের যত্রতত্র সার দিয়ে সাইকেল, মোটরবাইক, স্কুটার রেখে দিচ্ছেন বেআইনি ভাবে।

উপায়: বেআইনি ভাবে রাখা গাড়ির থেকে পার্কিং-ফি আদায়ে বসানো হয়েছে এই বোর্ড। শুক্রবার, হাওড়া জেলা হাসপাতাল চত্বরে। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার

উপায়: বেআইনি ভাবে রাখা গাড়ির থেকে পার্কিং-ফি আদায়ে বসানো হয়েছে এই বোর্ড। শুক্রবার, হাওড়া জেলা হাসপাতাল চত্বরে। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার

পারিজাত বন্দ্যোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০২:৩১
Share: Save:

অবৈধ পার্কিং ঠেকাতে না পেরে এ বার তা থেকেই রোজগারের পন্থা বার করে ফেলেছেন হাওড়া জেলা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। সেই টাকাতেই ভরে উঠছে রোগীকল্যাণ সমিতির ভাঁড়ার। মুচকি হেসে কর্তারা বলছেন, ‘‘এ হল চোরের উপরে বাটপাড়ি!’’

‘চোর’ কারা?

যাঁরা দিনের পর দিন হাসপাতাল চত্বরের যত্রতত্র সার দিয়ে সাইকেল, মোটরবাইক, স্কুটার রেখে দিচ্ছেন বেআইনি ভাবে। স্বাস্থ্য ভবনের নির্দেশ অনুযায়ী, সরকারি হাসপাতালে বাইরের গাড়ি থাকতে পারে না। হাসপাতালের চিকিৎসক ও কর্মীদের গাড়ি রাখার ক্ষেত্রেও কিছু নিয়ম মেনে চলতে হয়। কিন্তু হাওড়া হাসপাতালে অনেক চেষ্টা করেও বেআইনি পার্কিং বন্ধ করা যায়নি। এ বার তাই সেখান থেকেই পার্কিং-ফি আদায় করতে শুরু করেছে হাসপাতাল। এবং সেই কাজ হচ্ছে একেবারে পেশাদার পদ্ধতিতে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানান, পার্কিং-ফি আদায় করতে একটি বেসরকারি সংস্থা নিয়োগ করা হয়েছে। পার্কিং লটের ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব থেকে টাকা আদায়— সবটাই করছে ওই সংস্থা। এক ঘণ্টার জন্য একটি সাইকেলের পার্কিং-ফি ১০ টাকা। মোটরবাইক হলে সেটাই ১৫ টাকা। ঘণ্টা বাড়লে টাকা বাড়ে। নিয়মভঙ্গকারীদের উপরে এটাই হাসপাতালের ‘বাটপাড়ি!’

পার্কিং থেকে আয়ের টাকা জমা পড়ছে হাসপাতালের রোগীকল্যাণ সমিতিতে। গত ছ’মাসে ওই টাকার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ন’হাজারের মতো। হাওড়ার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক ভবানী দাস বললেন, ‘‘একটি বেসরকারি সংস্থাকে পার্কিং সামলানোর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। চুক্তি অনুযায়ী, তারা নিজেদের লাভ রেখে প্রতি মাসে ১৫০০ টাকা হাসপাতালকে দিচ্ছে। রোগীকল্যাণ সমিতিতে সেই টাকা রেখে রোগীদের প্রয়োজনে ইমার্জেন্সি ওষুধপত্র কিনতে বা হাসপাতালের পরিকাঠামোর উন্নয়নে তা খরচ করা হবে।’’ যা শুনে স্বাস্থ্য-অধিকর্তা অজয় চক্রবর্তীর মন্তব্য, ‘‘অদ্ভুত ব্যাপার! এ রকম কখনও শুনিনি।’’

হাসপাতালে বাইরের গাড়ি রাখাই যখন নিষিদ্ধ, তখন সেখান থেকে টাকা আদায় কি করতে পারে হাসপাতাল?

ভবানীর দাবি, তাঁরা চেষ্টা করেছিলেন অবৈধ পার্কিং বন্ধের। কিন্তু হাসপাতালটি হাওড়ার এমন একটি ব্যস্ত অঞ্চলে, যেখানে প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ ও যানবাহন যাতায়াত করে। রবিবার থেকে মঙ্গলবার— তিন দিনই মঙ্গলাহাটের জন্য সেই ভিড়ের চাপ দ্বিগুণ হয়ে যায়। অথচ, এলাকায় গাড়ি রাখার জায়গা প্রায় নেই। ফলে হাসপাতাল চত্বরেই অনেকে সাইকেল-বাইক-গাড়ি রেখে দেন। স্বাস্থ্য আধিকারিকের বক্তব্য, ‘‘কেউ কথা শোনে না। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কত বারণ করবেন? তাঁরা হাসপাতাল সামলাবেন, না কি অবৈধ পার্কিং বন্ধ করতে ছুটে বেড়াবেন? তাই অনেক ভেবে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তা ছাড়া, তিন চাকা বা চার চাকার গাড়ি রাখার অনুমোদন দেওয়া হয়নি।’’

সে যা-ই হোক না কেন, হাওড়া হাসপাতালের এই পন্থায় বাকি বহু হাসপাতালই চমৎকৃত এবং কৌতূহলী। তাদের বক্তব্য, সমস্ত পরিষেবা এবং
শয্যা ‘ফ্রি’ হওয়ার পরে রোগীকল্যাণ সমিতিতে টাকা জোগানোই দুষ্কর। তাই পার্কিং থেকে টাকা রোজগারে তারাও আগ্রহ দেখাচ্ছে। আরজিকর, এনআরএস বা এসএসকেএমের মতো হাসপাতালের একাধিক কর্তার মতে, তাঁদের হাসপাতাল চত্বরে পার্কিং চালু হলে এত গাড়ি আসবে যে, সমিতিতে টাকা উপচে পড়বে। বাম জমানায় হাসপাতালের অডিটোরিয়াম ভাড়া দিয়েও টাকা নেওয়া হয়েছে। তৃণমূল জমানায় কি সেই জায়গা নেবে পার্কিং?

অন্য বিষয়গুলি:

Rogi Kalyan Samiti Income Parking Parking Fees
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE