Advertisement
১৯ নভেম্বর ২০২৪

বেপরোয়া লরির বলি মা-ছেলে

শনিবার তৃতীয়ার সকালে এমন ভাবেই বিষণ্ণতা নেমে এল বেলুড়ের পারেখ পরিবারে। পুলিশ জানায়, লিলুয়া ছোট গেটের কাছে পেট্রোল পাম্পের সামনে দুর্ঘটনায় মৃত মায়ের নাম বন্দনা পারেখ (৪১) ও ছেলের নাম মেহুল পারেখ (১৮)। তাঁরা বেলুড়ের গাঙ্গুলি স্ট্রিটের কাছে জিটি রোডের উপরে একটি আবাসনে থাকেন।

বন্দনা পারেখ ও মেহুল পারেখ

বন্দনা পারেখ ও মেহুল পারেখ

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০১:১৫
Share: Save:

ভোরে ঘুম থেকে উঠে তাড়াতাড়ি করে বাপের বাড়ি যাওয়ার জন্য বেরিয়েছিলেন মা। স্টেশনে এগিয়ে দিতে যাওয়া ছেলেকে পিছনে বসিয়ে নিজেই চালাচ্ছিলেন স্কুটি। কিন্তু বাড়ি থেকে কয়েকশো মিটার দূরে যেতেই সব ওলটপালোট হয়ে গেল। বেপরোয়া দশ চাকার লরির সঙ্গে সংঘর্ষে মৃত্যু হল মা ও ছেলের।

শনিবার তৃতীয়ার সকালে এমন ভাবেই বিষণ্ণতা নেমে এল বেলুড়ের পারেখ পরিবারে। পুলিশ জানায়, লিলুয়া ছোট গেটের কাছে পেট্রোল পাম্পের সামনে দুর্ঘটনায় মৃত মায়ের নাম বন্দনা পারেখ (৪১) ও ছেলের নাম মেহুল পারেখ (১৮)। তাঁরা বেলুড়ের গাঙ্গুলি স্ট্রিটের কাছে জিটি রোডের উপরে একটি আবাসনে থাকেন। মেহুল স্থানীয় একটি বেসরকারি ইংরাজি মাধ্যম স্কুলের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র। পুলিশ জানিয়েছে, দু’জনের মাথাতেই হেলমেট ছিল না।

এ দিন সকালে ঘুসুড়ির জায়সবাল হাসপাতালে বন্দনাদেবীর স্বামী ললিত পারেখ কান্নায় ভেঙে পরে জানান, ছেলেমেয়েদের স্কুলের ছুটি শুরু গিয়েছিল। তাই পুজোর ছুটি কাটাতে মেয়ে তানিশাকে নিয়ে সাঁইথিয়ায় বাপের বাড়ি যাওয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন স্ত্রী। সেই মতো এ দিন সকালে বন্দনাদেবী ও তানিশাকে লিলুয়া স্টেশনে পৌঁছে দিতে বেরিয়েছিলেন ললিত ও মেহুল। মেয়েকে নিজের মোটরবাইকের পিছনে বসিয়ে স্টেশনের দিয়ে এগিয়ে গিয়েছিলেন ললিত। আর মেহুল নিজে স্কুটি চালাতে জানলেও তাঁকে না দিয়ে বন্দনাদেবীই সেটি চালাচ্ছিলেন। পরিকল্পনা ছিল লিলুয়া থেকে বন্দনাদেবী ও তানিশা ট্রেন ধরে হাওড়া গিয়ে সাঁইথিয়া যাওয়ার জন্য দূরপাল্লার ট্রেন ধরবেন।

স্থানীয় সূত্রের খবর, এ দিন সকাল ৭টা নাগাদ বেলুড়ের দিক থেকে লিলুয়ার দিকে নীল রঙের স্কুটি চালিয়ে আসছিলেন বন্দনাদেবী। পিছনেই বসেছিল মেহুল। তখন লিলুয়ার দিক থেকে আসা একটি খালি লরি বেপরোয়া গতিতে আচমকাই জিটি রোডের ডান দিকে মোড় নিয়ে পেট্রোল পাম্পে ঢুকতে যায়। কোনও ইন্ডিকেটর না দিয়ে আচমকা লরিটি ঘুরে যাওয়াতেই ঘটে বিপত্তি। স্কুটি নিয়ে সোজা লরির সামনে ধাক্কা মারেন বন্দনাদেবী। স্কুটির সামনের অংশ দুমড়ে-মুচড়ে গিয়ে তিনি লরির নিচে ঢুকে যান। সামনের চাকাতেই পিষে যান বন্দনাদেবী। মেহুলও রাস্তায় পড়ে মাথায় চোট পান। এরপরে পথচারীরা ছুটে এসে লরিচালককে নামিয়ে মারধর শুরু করেন। লরিতে কোনও খালাসি ছিল না।

খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন কিছুটা দূরে জিটি রোডে কর্তব্যরত বালি ট্র্যাফিক গার্ডের দুই কনস্টেবল তরুণ চক্রবর্তী ও সহদেব চন্দ। তাঁরা একটি টোটোতে মা ও ছেলেকে তুলে নিয়ে জায়সবাল হাসপাতালে পৌঁছন। পুলিশ মা ও ছেলেকে নিয়ে হাসপাতালে পৌঁছলে চিকিৎসকেরা পরীক্ষা করে জানান ঘটনাস্থলেই বন্দনাদেবীর মৃত্যু হয়েছে। গুরুতর আশঙ্কাজনক অবস্থায় মেহুলকে মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে তাঁরও মৃত্যু হয়। বেলুড় থানার পুলিশ জিতু যাদব নামে ওই লরি চালককে গ্রেফতার করেছে। পুলিশের দাবি, ওই চালক মত্ত অবস্থায় ছিলেন।

মর্মান্তিক: এই লরিটিই ধাক্কা মারে স্কুটারে। শনিবার, লিলুয়ায়। নিজস্ব ছবি

এ দিকে বন্দনাদেবীদের স্কুটি দুর্ঘটনায় পড়লেও তা প্রথমে জানতে‌ও পারেননি ললিতবাবু। তিনি মেয়েকে নিয়ে প্রায় লিলুয়া স্টেশনের সামনে পৌঁছে যেতেই পরিচিত এক জন ফোনে খবর দেন। খবর পেয়ে এ দিন থানায় হাজির হন স্থানীয় কাউন্সিলর কৈলাশ মিশ্র। তিনি দেহ দু’টি ময়না তদন্তে পাঠানোর ব্যবস্থা করেন। থানায় উপস্থিত ললিতবাবুর কাকা রতনলালবাবু বলেন, ‘‘বাপের বাড়ি যাওয়ার আগেই এক মা ও ছেলের এমন ভাবে বিসর্জন হয়ে গেল। এ কষ্ট মানতে পারছি না।’’

পুলিশ জানায়, এ দিন লরিটি বেপরোয়া গতিতে আচমকা ঘুরতে যাওয়ায় প্রথমে বন্দনাদেবীদের স্কুটির সঙ্গে ধাক্কা লাগে। এর পরেই পিছনে থাকা আরও একটি কালো রঙের স্কুটিও লরিটিতে ধাক্কা মেরে উল্টে যায়। তাতে থাকা দুই যুবকের মাথা ফেটে যায়। তাঁদের শ্রমজীবী হাসপাতালে নিয়ে যান স্থানীয়েরা। আরও একটি বাইকের আরোহীও লরিতে ধাক্কা মেরে পায়ে চোট পেয়েছেন।

এ দিন ওই পেট্রোল পাম্পে গিয়ে দেখা যায়, রাখা রয়েছে দুমড়ে যাওয়া স্কুটি। রাস্তায় রক্ত ও চাকা ঘষটানোর দাগ স্পষ্ট। রয়েছে বন্দনাদেবীর হাত ব্যাগ ও পোশাকের ব্যাগ। কি ভাবে দুর্ঘটনা ঘটল তা জানতে পেট্রোল পাম্পের সিসিটিভি পরীক্ষা করতে যান তদন্তকারী অফিসারেরা। কিন্তু ক্যামেরাতে দুর্ঘটনা ধরা পড়েনি বলেই দাবি মালিক প্রসেনজিৎ শূরের। তিনি বলেন, ‘‘ক্যামেরায় মূলত পাম্পের ভিতরেই দেখার ব্যবস্থা রয়েছে।’’ তবে জি টি রোডের উপর পাম্পে সব সময়ে লরি, বাস-সহ অন্য গাড়ি ঢোকা-বেরনো করলেও নিজস্ব নিরাপত্তারক্ষী নেই কেন? ‘‘ট্র্যাফিক সামলাতে গেলে তো মানুষ দুর্ব্যবহার করেন’’ দাবি প্রসেনজিতের।

অন্য বিষয়গুলি:

road accident Belur
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy