Advertisement
০৩ নভেম্বর ২০২৪
হুগলি জেলা পরিষদ

সভাধিপতি না সরা পর্যন্ত বৈঠকে নারাজ সদস্যরা

জেলা পরিষদের সভাধিপতির সঙ্গে দলীয় সদস্যদের সম্পর্ক ক্রমে তলানিতে ঠেকেছে। সভাধিপতির আচরণে ‘অপমানিত’ সদস্যরা এ বার ঠিক করলেন, তাঁর ঘরে কেউ ঢুকবেন না। সভাধিপতি পদ থেকে মেহবুব রহমানকে না সরানো পর্যন্ত কোনও বৈঠকেও যোগ দেবেন না বলেও তাঁরা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। শুধু সাধারণ সদস্যরাই নন, একাধিক কর্মাধ্যক্ষও ওই সিদ্ধান্তে সায় দিয়েছেন। এই পরিস্থিতিতে হুগলি জেলা পরিষদের কাজকর্ম কতটা সচল থাকবে, তা নিয়েই প্রশ্ন উঠে গিয়েছে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শ্রীরামপুর শেষ আপডেট: ২৭ মার্চ ২০১৫ ০২:৫০
Share: Save:

জেলা পরিষদের সভাধিপতির সঙ্গে দলীয় সদস্যদের সম্পর্ক ক্রমে তলানিতে ঠেকেছে। সভাধিপতির আচরণে ‘অপমানিত’ সদস্যরা এ বার ঠিক করলেন, তাঁর ঘরে কেউ ঢুকবেন না। সভাধিপতি পদ থেকে মেহবুব রহমানকে না সরানো পর্যন্ত কোনও বৈঠকেও যোগ দেবেন না বলেও তাঁরা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। শুধু সাধারণ সদস্যরাই নন, একাধিক কর্মাধ্যক্ষও ওই সিদ্ধান্তে সায় দিয়েছেন। এই পরিস্থিতিতে হুগলি জেলা পরিষদের কাজকর্ম কতটা সচল থাকবে, তা নিয়েই প্রশ্ন উঠে গিয়েছে।

মঙ্গলবার হরিপালের মালিয়ায় জেলা পরিষদের বেশ কিছু তৃণমূল সদস্য এবং কর্মাধ্যক্ষ নিজেদের মধ্যে বৈঠক করেন। সেখানেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, সভাধিপতির ‘একনায়কতন্ত্রের’ বিরুদ্ধে যত দূর যেতে হয় তাঁরা যাবেন। গোটা পরিস্থিতি সম্পর্কে মুখ্যমন্ত্রী তথা দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে চিঠি দিয়ে সভাধিপতিকে সরানোর আর্জি জানানো হবে। মাস কয়েক আগেও অবশ্য একই দাবিতে মমতাকে চিঠি দিয়েছিলেন ৩২ জন সদস্য। অনাস্থা আনারও তোড়জোড় নেওয়া হয়। কিন্তু দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দল ধামাচাপা দিতে তৃণমূল নেতৃত্ব তাঁদের সে কাজে বিরত করেন। পরিস্থিতি সামাল দিতে জেলা সভাপতি তপন দাশগুপ্তকে চেয়ারম্যান করে মনিটরিং কমিটি গড়া হয় দলের তরফে। সমস্যা মেটাতে কমিটির নেতারা বৈঠক করে দু’পক্ষকে সমন্বয় সাধন করে কাজ করার কথা বলেন। কিন্তু তার পরেও যে পরিস্থিতি বিশেষ বদলায়নি, বলাই বাহুল্য।

সভাধিপতি অবশ্য বলেন, ‘‘মালিয়ায় কোনও বৈঠক হয়েছে বলে আমি জানি না। ফলে এ নিয়ে কিছু বলতেও পারবও না।” তপনবাবু জানান, আগামী ২৮ মার্চের পরে আলোচনার মাধ্যমে বিষয়টি মিটমাটের চেষ্টা করা হবে।

হুগলি জেলা পরিষদ একচ্ছত্র ভাবে বামেদের দখলেই ছিল। এ বারই প্রথম নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে জেলা পরিষদ দখল করেছে অ-বাম কোনও দল। মোট ৫০টি আসনের মধ্যে তৃণমূলের দখলে রয়েছে ৪৬টি আসন। বাকি চারটি বামেদের। কিন্তু সংখ্যাতত্ত্বের বিচারে এমন সুবিধাজনক পরিস্থিতিতেও দলীয় অন্তর্দন্দ্বই জেলা পরিষদ সুষ্ঠুভাবে চালানোর পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

পুরশুড়ার বিধায়ক ও মুকুল রায়ের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত পারভেজ রহমানের ভাই মেহবুবকে সভাধিপতি করার দিন থেকেই দলে ক্ষোভ রয়েছে। জেলা পরিষদের কাজকর্ম নিয়ে দলের অভিজ্ঞ সদস্যরাই দলের ভিতরে-বাইরে উষ্মা প্রকাশ করছেন। জেলা পরিষদের ভিতরে ঠিকাদারদের অবাধ আনাগোনা নিয়ে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। কাজকর্ম বণ্টন করা নিয়ে শ্রীরামপুর মহকুমাকে বঞ্চিত করা হচ্ছে বলে সেখানকার সদস্যরা অভিযোগ তুলেছেন। সব মিলিয়ে সভাধিপতির বিভিন্ন কাজ নিয়ে ক্রমেই সরব হয়েছেন সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যরা। সম্প্রতি সভাধিপতির আপ্ত সহায়কের (সিএ) বিরুদ্ধে ফোনে এক ব্যক্তির কাছ থেকে বাড়ির নক্শা অনুমোদনের জন্য টাকা চাওয়ার অভিযোগ ওঠে। সেই নিয়ে জেলা পরিষদের বৈঠকে হইচই বাধে। দিন কয়েক আগে এক সভায় ফের বিষয়টি উত্থাপিত হলে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। সভাধিপতির সঙ্গে সদস্যদের বচসা বাধে। আপ্ত সহায়ককে সভাধিপতি আড়াল করছেন বলে অভিযোগ ওঠে। রেগে গিয়ে সভাধিপতি এক সদস্যকে তুই-তোকারি করেন বলে অভিযোগ। সভাধিপতির ব্যবহার নিয়ে প্রকাশ্যেই সরব হন সদস্য-কর্মাধ্যক্ষরা।

ওই ঘটনার পরেই সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যরা সিদ্ধান্ত নেন, এ বার তাঁরা শেষ দেখে ছাড়বেন। মঙ্গলবার মালিয়ায় বৈঠকে সদস্যদের প্রায় সকলেই জানিয়ে দেন, এ বার দল কোনও ব্যবস্থা না নিলে তাঁরা ইস্তফার রাস্তা বেছে নেবেন। বৈঠকে এক কর্মাধ্যক্ষ জানান, এক তরফা ভাবে সভাধিপতি জেলা পরিষদ চালাচ্ছেন। সিপিএমের আমলে যিনি সভাধিপতির আপ্ত সহায়ক ছিলেন, এখনও তাঁকেই রাখা হয়েছে। সেই লোকই আবার জেলা পরিষদে বসে ফোন করে লোকের থেকে টাকা চাইছেন! এত অনিয়ম তাঁরা মানবেন না। শ্রীরামপুর থেকে নির্বাচিত এক সদস্যের কথায়, তালিকা ফেলে তিনি দেখিয়ে দিতে পারেন, উন্নয়নের ক্ষেত্রে এই মহকুমাকে কি ভাবে বঞ্চিত করা হয়েছে। এটা চলতে পারে না। সদর মহকুমার এক সদস্যের বক্তব্য, পুরসভার নির্বাচন পর্যন্ত অপেক্ষা করা হবে। তাঁদের আশা তার মধ্যেই দল উপযুক্ত পদক্ষেপ করবে। না হলে তাঁদের অন্য পথ ভাবতে হবে।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE