আশঙ্কা: উদয়নারায়ণের বকপোতা সেতুর কাছেই জলস্তর। ছবি: সুব্রত জানা
কয়েক দিনের টানা বৃষ্টি থেমেছে। মঙ্গলবার বিকেলে পুজোর বাজার করতে বেরোবেন বলে ঠিক করেছিলেন উদয়নারায়ণপুরের কুর্চি-শিবপুর পঞ্চায়েতের ঘড়ুইপাড়ার বাসিন্দা আশা ঘড়ুই। কিন্তু সকালেই বাক্স-প্যাটরা নিয়ে সপরিবারে বাড়ি ছাড়তে হল তাঁকে। কেননা, ঘরে ঢুকেছে বন্যার জল। অনেকের মতোই ওই পরিবারের এখন ঠিকানা— টোকাপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ত্রাণশিবির। আকাশ পরিষ্কার। শুকনো খটখটে আবহাওয়া । তাহলে বন্যা কেন?
সৌজন্যে ডিভিসি। ডিভিসির ছাড়া জলে দামোদর ফুঁসছে। বাঁধ উপছে জলমগ্ন কুর্চি-শিবপুর, হরালি-উদয়নারায়ণপুর, আরডিএ (রামপুর ডিহিভুরসুট আসন্ডা), সিংটি পঞ্চায়েত এলাকা। মুণ্ডেশ্বরীর জলে প্লাবিত আমতা-২ ব্লকের ভাটোরা এবং ঘোড়াবেড়িয়া-চিৎনান পঞ্চায়েত এলাকা। প্রশাসন সূত্রের খবর, উদয়নারায়ণপুরে ১৩টি ত্রাণশিবির খুলে জলমগ্ন শ’চারেক পরিবারকে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে। সকালে এখানে পরিস্থিতি দেখে যান জেলাশাসক মুক্তা আর্য। তিনি বলেন, ‘‘ত্রাণের অভাব হবে না। শিশুখাদ্য, পানীয় জল, ওষুধপত্র পর্যাপ্ত রয়েছে। বাঁধের ফাটল মেরামতের জন্য বালির বস্তা মজুদ আছে।’’ আমতাতেও জলমগ্ন এলাকায় যান জেলাশাসক।
উদয়নারায়ণপুরের বিধায়ক সমীর পাঁজার কাছে বন্যা পরিস্থিতির খোঁজ নিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সমীরবাবু জানান, মুখ্যমন্ত্রী সবরকম সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছেন।
রবিবার বিকেল থেকে দফায় দফায় জল ছাড়ে ডিভিসি। প্রথমে ৭০ হাজার কিউসেক জল ছাড়া হয়। পরে তা বাড়িয়ে ১ লক্ষ ৩ হাজার কিউসেক করা হয়। মঙ্গলবার সকালে ৬৮ হাজার কিউসেক জল ছাড়া হয় বলে সেচ দফতরের অধীন নিম্ন দামোদর নির্মাণভূক্তির কর্তারা জানান। এ দিন ভোর থেকে বকপোতার কাছে বাঁধ ছাপিয়ে কুর্চি-শিবপুর পঞ্চায়েতের পূর্ব টোকাপুর গ্রামে জল ঢুকতে থাকে। জলের চাপে আরডিএ পঞ্চায়েতের ডিহিভুরসুট স্লুইস গেটের কাছে বাঁধ ভাঙে। জেলাশাসকের কাছে গ্রামবাসীরা অভিযোগ করেন, জল ছাড়ার খবর আগাম প্রচার করা হয়নি। সেখ রমজান আলি নামে এক গ্রামবাসী বলেন, ‘‘ভোরে ঘরে জল ঢোকে। বেরিয়ে দেখি, বাঁধ উপছে যাচ্ছে। জিনিসপত্র সরানোর সময় পাইনি।’’ বিধায়ক সমীরবাবু, ‘‘আমরাও জল ছাড়ার খবর হঠাৎ পেয়েছি। প্রধান রাস্তাগুলিতে মাইক-প্রচার হয়েছে। পাড়ায় পাড়ায় ঢোকা হয়নি।’’
উদয়নারায়ণপুর এবং আমতা-২ ব্লকে দামোদরের ডান দিকে। ডিভিসির ছাড়া জল বেরনোর জন্য এই দিকে বড় বাঁধ নেই। পুরনো আমলের নীচু বাঁধ সংস্কার করা হলেও তাতে খুব একটা লাভ হয় না। আমতার থলিয়া থেকে বাগনানের বাকসি পর্যন্ত একটি খাল কাটা হয় যাতে ডিভিসি-র ছাড়া বাড়তি জল এখান দিয়ে বেরিয়ে রূপনারায়ণে পড়ে। প্রথমে খালের জলধারণ ক্ষমতা ছিল ৩০ হাজার কিউসেক। গত বছর সংস্কারের পরে জলধারণ ক্ষমতা বেড়ে দ্বিগুন হয়। সেচ দফতরের বক্তব্য, ডিভিসি সর্বোচ্চ ৮০ হাজার কিউসেক পর্যন্ত জল ছাড়লেও উদয়নারায়ণপুর ও আমতা-২ নম্বর ব্লকে বন্যা আটকানো সম্ভব। ওই পরিমান ১ লক্ষ কিউসেক ছাড়ালে তা সম্ভব নয়।
সেচ দফতরের খবর, বকপোতায় পুরনো একটি সেতুর জন্যও সমস্যা হচ্ছে। সেতুটি দামোদরের বিরাট অংশ জুড়ে আছে। তার থামে জল ধাক্কা খেয়ে জল উপছে পড়ছে। এটির পাশে নতুন সেতু তৈরি হচ্ছে। জেলাশাসক বলেন, ‘‘নতুন সেতু চালু হলেই পুরনোটির অংশবিশেষ ভেঙে সরিয়ে নিয়ে নদী খালি করতে বলা হয়েছে পূর্ত দফতরকে।’’
ভাটোরা এবং ঘোড়াবেড়িয়া-চিৎনান পঞ্চায়েত এলাকায় জল ঢুকে অনেকেই ঘরবন্দি। পর্যাপ্ত ত্রাণের ব্যবস্থার দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় কংগ্রেস বিধায়ক অসিত মিত্র। আমতা-২ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি সুকান্ত পাল বলেন, ‘‘১২টি ত্রাণশিবির প্রস্তুত রাখা হয়েছে।’’ জলের তোড়ে মুণ্ডেশ্বরীর চারটি এবং দামোদরের তিনটি ঘাটের বাঁশের সাঁকো ভেঙে গিয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy