Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪

অতিরিক্ত পণ্যে স্বাস্থ্যহানি সেতুর

বেনিয়মের ওভারলোডিং কার্যত নিয়মে পরিণত হয়ে গিয়েছে।রাজ্যের নানা জায়গার মতো হুগলি জেলার বিভিন্ন সেতুকেও সইতে হচ্ছে বাড়তি পণ্য বোঝাই ট্রাকের চাপ

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নিজস্ব চিত্র।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নিজস্ব চিত্র।

প্রকাশ পাল
চুঁচুড়া শেষ আপডেট: ০৭ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০১:৪১
Share: Save:

বহুচর্চিত প্রশ্নটি ফের উসকে দিয়েছে মাঝেরহাট সেতু দুর্ঘটনা।
নিয়মের তোয়াক্কা না-করে অতিরিক্ত পণ্য বহনকারী ট্রাকের জন্য নড়বড়ে হচ্ছে সেতুর কাঠামো, নানা মহলে এই অভিযোগ ছিলই। বৃহস্পতিবার নবান্নে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বৈঠকেও প্রসঙ্গটি ওঠে। সেই অভিযোগ মেনে নিচ্ছেন ট্রাক-মালিকদের একাংশও। তাঁদের বক্তব্য, বিষয়টি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই জেলা থেকে রাজ্য প্রশাসনের বিভিন্ন জায়গায় দরবার করে এসেছেন তাঁরা। কিন্তু কোনও কাজ হয়নি। বেনিয়মের ওভারলোডিং কার্যত নিয়মে পরিণত হয়ে গিয়েছে।
রাজ্যের নানা জায়গার মতো হুগলি জেলার বিভিন্ন সেতুকেও সইতে হচ্ছে বাড়তি পণ্য বোঝাই ট্রাকের চাপ। আরামবাগে দ্বারকেশ্বর নদের উপর রামকৃষ্ণ সেতু, হরিণখোলায় মুণ্ডেশ্বরীর উপর রামমোহন সেতু, চাঁপাডাঙায় দামোদরের উপর বিদ্যাসাগর সেতু, ডানকুনি উড়ালপুল, শ্রীরামপুর উড়ালপুল— কোনওটিই পুরোপুরি ‘সুস্থ’ নয় বলে সাধারণ মান‌ুষের অভিযোগ। এই সব সেতুর উপর দিয়ে প্রতিদিন হাজার হাজার পণ্যবাহী ট্রাক চলে। বালি-পাথর থেকে শুরু করে বিভিন্ন কল-কারখানার সামগ্রী— সবই নিয়ে যাওয়া হয়। অভিযোগ, ট্রাকগুলি বহন ক্ষমতার তুলনায় দ্বিগুণ, তিন গুণ পণ্য নিয়ে যায়। এর ফলে রাস্তা যেমন ভাঙে, তেমনই তার প্রভাব পড়ে সেতুতেও। আর তার জেরেই নড়বড়ে হচ্ছে সেতুর কাঠামো।
জেলা ট্রাক-মালিকদের সংগঠন ‘ইউনাইটেড ট্রাক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব হুগলি’র সাধারণ সম্পাদক প্রবীর চট্টোপাধ্যায়ের অভিযোগ, ‘‘অসাধু ব্যবসায়ীদের সঙ্গে পুলিশ এবং প্রশাসনের বিভিন্ন দফতরের একাংশের যোগসাজশে ওভারলোডিং বন্ধ হয় না। তার ফলে সেতুর ক্ষতি তো হচ্ছেই।’’
রামকৃষ্ণ সেতু সংস্কারের কাজ চলছে। বুধবার থেকে ওই সেতু দিয়ে মালবাহী গাড়ি যাতায়াত বন্ধের বিজ্ঞপ্তি জারির জন্য জেলা প্রশাসনের কাছে সুপারিশ করেছে পূর্ত দফতর। অপেক্ষাকৃত নতুন হলেও ডানকুনি উড়ালপুলের স্বাস্থ্য নিয়েও প্রশ্ন উঠে গিয়েছে। অভিযোগ, দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়েতে টোল-ট্যাক্স ফাঁকি দিতে অতিরিক্ত পণ্যবোঝাই বহু ট্রাক অহল্যাবাই রোড হয়ে এই সেতু ধরেই কলকাতায় যায়। শ্রীরামপুর উড়ালপুল দিয়েও প্রচুর ভারী গাড়ি চলে।
জেলা আঞ্চলিক পরিবহণ অধিকর্তা শুভেন্দুশেখর দাসের দাবি, ‘‘ওভারলোডিং রুখতে নিয়মিত অভিযান হয়। অভিযান বাড়ানোর পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে।’’ চন্দননগর কমিশনারেটের এডিসিপি (ট্রাফিক) মৃণালকান্তি মজুমদারের বক্তব্য, ‘‘ওভারলোডিংয়ের বিরুদ্ধে অভিযানে আঞ্চলিক পরিবহণ দফতরকে পুলিশ দিয়ে সাহায্য করা হয়।’’ তবে, পুলিশ আধিকারিকদের অনেকেই মানছেন, যে পরিমাণ ওভারলোডেড গাড়ি চলে, মামলা করার সংখ্যা সেই তুলনায় নগণ্য। এক পুলিশ অফিসারের কথায়, ‘‘ওভারলোডিং আটকানোর দায়িত্ব পরিবহণ দফতরের। পুলিশের নয়। ঘটনা হচ্ছে, কাজের উপযুক্ত পরিকাঠামো ন‌েই।’’
ওভারলোডিংয়ের কারণে সেতুর ক্ষতি হতে পারে? রাজ্য পূর্ত দফতরের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘সেতুর নির্দিষ্ট নকশা থাকে। সেই অনুযায়ী সেতুর নির্দিষ্ট ভার বহন করার ক্ষমতা থাকে। অতিরিক্ত ভার পড়লে ক্ষতি হওয়াটাই তো স্বাভাবিক।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Bridge Kolkata Flyover Collapse Majerhat
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE