Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪

বাবা পুজো করেন, মা জরির কাজ, পবিত্রর স্বপ্ন বিজ্ঞানী হওয়া

বাবা পুজো করে যা পান, তা দিয়েই চলে সংসার। একটাই ঘর। সেখানেই খাওয়া-দাওয়া, পড়াশোনা আর রাতের ঘুম। একচিলতে দালানে জরির কাজ করেন মা। আর সঙ্গী বলতে রয়েছে অনটন।

 মায়ের হাতে মিষ্টিমুখ পবিত্র চক্রবর্তীর। —নিজস্ব িচত্র

মায়ের হাতে মিষ্টিমুখ পবিত্র চক্রবর্তীর। —নিজস্ব িচত্র

সুব্রত জানা
আমতা শেষ আপডেট: ১৭ জুলাই ২০২০ ০৫:৫৪
Share: Save:

বাবা পুজো করে যা পান, তা দিয়েই চলে সংসার। একটাই ঘর। সেখানেই খাওয়া-দাওয়া, পড়াশোনা আর রাতের ঘুম। একচিলতে দালানে জরির কাজ করেন মা। আর সঙ্গী বলতে রয়েছে অনটন। এই সব নিয়েই পবিত্র চক্রবর্তীর সংসার। ‘নেই’-এর তালিকা যত দীর্ঘ হয়েছে, ‘কিছু করে দেখানোর লড়াইয়ে’ জেদও তত বেড়েছে পবিত্রর। সমস্ত প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে লড়াই করে আমতা ১ ব্লকের শিবেরহানা হাইস্কুলের ওই ছাত্র এখন জঞ্জালীচক গ্রামের সকলের কাছে উদাহরণ। মাধ্যমিকে ৬৭৭ নম্বর পেয়েছে পবিত্র।

পবিত্রর বাবা মলয় চক্রবর্তী পুরেহিত। পুজোঅর্চনা করেই সংসার চালান। ছেলের রেজাল্ট শুনে বলেন, ‘‘ভাল খেতে দিতে পারিনি ছেলেকে। পুজো করে যা পাই, সেই দিয়েই সংসার চলে। ছেলে ভাল রেজাল্ট করেছে। ওকে উচ্চশিক্ষিত করবই। প্রয়োজনে লোকের কাছে সাহায্য চাইবো। আধপেটা খেয়ে বাঁচব।’’ আর মা জয়ন্তীদেবী বলেন, ‘‘ও আমাদের একমাত্র ছেলে। ওকে বড় করার জন্য দিনরাত কাজ করব। ছেলে বড় হয়ে রোজগার করে সংসারের অভাব মেটাবে।’’ পবিত্রর স্কুলের প্রধান শিক্ষক তাপস শীল বলেন, ‘‘দারিদ্রের সঙ্গে লড়াই করে আমাদের স্কুলের নাম উজ্জ্বল করেছে পবিত্র। আগামী দিনে ও অনেক বড় হবে। ও আমাদের গর্ব।’’

বুধবার সকাল থেকেই উৎকণ্ঠায় ছিল পবিত্রর পরিবার। পাশের বাড়ির কাকার মোবাইলে মাধ্যমিকের রেজাল্ট দেখে সে। মোবাইলের স্ক্রিনে নামের পাশে নম্বরটা দেখে আর নিজেকে ধরে রাখতে পারেনি। দৌড়ে গিয়ে বাবা-মাকে বলে, ‘‘আমি সব সাবজেক্ট-এ লেটার নিয়ে ৬৭৭ নম্বর পেয়েছি।’’সেই মুহূর্তটার কথা বলতে গিয়ে চোখ ঝাপসা হয়ে আসে তার বাবা-মায়ের। গণিত এবং ভূগোলে ১০০ পেয়েছে পবিত্র। বাকি সব বিষয়েই প্রাপ্ত নম্বর ৯০-এর বেশি। সব থেকে কম (৯৩) পেয়েছে ইংরেজিতে।

গ্রামেরই প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়াশোনা শুরু করেছিল পবিত্র। স্কুলের পরীক্ষায় প্রথম হওয়াটা অভ্যাসে পরিণত করে ফেলেছিল

সে। বিজ্ঞানী হতে চায় পবিত্র। এ বার পড়াশোনার খরচ চালানোর জন্য গৃহ-শিক্ষকতা করবে। পবিত্র বলে, ‘‘অভাবের জন্য গৃহ-শিক্ষক ছিল না। গ্রামের পাশেই একটি কোচিং সেন্টার রয়েছে। সেখানে পড়াশোনা করেছি। আমার থেকে ওঁরা পয়সা নেননি। তবে স্কুলের শিক্ষকেরা সব সময় সাহায্য করেছেন।’’ ওই কোচিং সেন্টার-এর শিক্ষক গৌতম জেলে বলেন, ‘‘ছোট থেকেই পবিত্র মেধাবী। সংসারে অভাব থাকলেও ছেলেকে পড়াশোনা করানোর অদম্য ইচ্ছা ছিল ওর বাবা-মায়ের।’’

অন্য বিষয়গুলি:

madhyamik exam 2020 student
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy