Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
New Farmer's Bill

কৃষি আইন বোঝাতে এসে চাষিদের ক্ষোভের কথা শুনলেন লকেট

কেন্দ্রের নয়া কৃষি আইনের পক্ষে কৃষকদের সমর্থন আদায়ে ‘শুনুন চাষি ভাই’ কর্মসূচি নিয়েছে বিজেপি। সেই কর্মসূচিতে বৃহস্পতিবার সিঙ্গুরে আসা লকেটকে দু’-চার কথা শুনিয়ে দিলেন চাষিরা।

‘শুনুন চাষি ভাই ’ কর্মসূচিতে সিঙ্গুরের বামুনপাড়াতে চাষিদের সাথে কথা বলছেন সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায়। —নিজস্ব চিত্র।

‘শুনুন চাষি ভাই ’ কর্মসূচিতে সিঙ্গুরের বামুনপাড়াতে চাষিদের সাথে কথা বলছেন সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায়। —নিজস্ব চিত্র।

দীপঙ্কর দে
সিঙ্গুর শেষ আপডেট: ২৭ নভেম্বর ২০২০ ০০:৪৮
Share: Save:

নয়া কৃষি আইনের ‘সুফল’ বোঝাতে সিঙ্গুরে এসেছিলেন। ঘরোয়া সভায় বিজেপি সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায়কে আইনের ‘খারাপ দিক’ চিনিয়ে দিলেন এক চাষি। আর এক চাষি সাংসদকে সরাসরি বলেই বসলেন, ‘‘যে আলু আমরা ১০টাকা কেজিতে বিক্রি করেছি, তা এখন ৪০ টাকা কেজিতে কিনে খেতে হচ্ছে।’’

কেন্দ্রের নয়া কৃষি আইনের পক্ষে কৃষকদের সমর্থন আদায়ে ‘শুনুন চাষি ভাই’ কর্মসূচি নিয়েছে বিজেপি। সেই কর্মসূচিতে বৃহস্পতিবার সিঙ্গুরে আসা লকেটকে দু’-চার কথা শুনিয়ে দিলেন চাষিরা। এ দিন সিঙ্গুরে ঢুকেই হুগলির সাংসদ সোজা চলে যান আনন্দনগর পঞ্চায়েতের বামুনপাড়ায়। সেখানে জনা পনেরো চাষিকে নিয়ে ঘরোয়া বৈঠক শুরু করেন লকেট। চাষিরা তাঁদের ক্ষোভের কথা বলতে শুরু করেন। রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধেও বেশ কিছু অভিযোগ ওঠে সেই সভায়। আলুচাষিদের দুরবস্থার কথা তুলে ধরতে গিয়ে এক চাষি বলেন, ‘‘আলুবীজের দাম অনেক বেড়ে গিয়েছে। হয় (আমাদের) গলায় দড়ি দিতে হবে, না-হয় বিষ খেতে হবে।’’ তারপর যোগ করেন, ‘‘যে আলু আমরা ১০ টাকা করে বিক্রি করেছি, তা ৪০ টাকা কেজি দরে কিনতে হচ্ছে।’’ সেই চাষিকে থামিয়ে লকেট বলেন, ‘‘তোমরা ১০ টাকা কেজিতে আলু বিক্রি করছ, আমি ওখানে ৫০ টাকায় তা কিনছি। তাহলে মাঝের এই টাকাটা কোথায় যাচ্ছে? এই জায়গাগুলির জন্যই আইন তৈরি করা হয়েছে। অনেক কিছু করা হচ্ছে তোমাদের জন্য। কৃষকদের ৬ হাজার টাকা করে দেওয়া হবে।’’ এরপরে রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে সুর চড়িয়ে সাংসদ বলেন, ‘‘এই (রাজ্য) সরকার কোনও চাষির নাম পাঠায়নি। কারণ, নাম পাঠালেই সরাসরি তাঁদের অ্যাকাউন্টে টাকা আসবে। ওরা কাটমানি পাবে না। যে দিন আমাদের সরকার আসবে, সেদিনই আমরা এই প্রকল্প এখানে চালু করব। এখানে আমাদের সরকার না হলে পারব না।’’ কয়েক জন কৃষক সাংসদের কাছে অভিযোগ করেন, ‘‘বিজেপি করার জন্য সরকার তাঁদের নাম পাঠায়নি।’’

লকেটের অভিযোগ নিয়ে হরিপালের তৃণমূল বিধায়ক বেচারাম মান্নার প্রতিক্রিয়া, ‘‘উনি অভিনয় করতেন। এই ভাবে অভিনয় করে রাজনীতি করা যায় না, মানুষকে বোঝানো যায় না। নতুন কৃষি আইন বলবৎ করে কী উপকার হচ্ছে, তা আলুচাষিরা বুঝতে পারছেন।’’ তাঁর দাবি, ‘‘কেন্দ্রের এই কালা আইনের জন্যই দাম বেড়ে যাচ্ছে।’’

চাষিদের সঙ্গে লকেটের ঘরোয়া বৈঠকে চলে আসে সিঙ্গুরে শিল্প-প্রসঙ্গ। সাংসদ প্রশ্ন তোলেন, ‘‘কী করেছে (তৃণমূল) কৃষকের জন্য। কিছুই করেনি। সিঙ্গুরের কৃষকদের কাঁধে বন্দুক রেখে নিজেরা ক্ষমতায় গিয়েছেন।’’ সাংসদের সুরে সুর মেলান সঙ্গী বিজেপি নেতারা। তারপরেই কাটে তাল। কথায় কথায় ফের কৃষি আইনের প্রসঙ্গ আসতেই এক কৃষক বলেন, ‘‘ আইনটা যতক্ষণ না কার্যকর হবে, ততক্ষণ বোঝা যাবে না। তবে যেটা বোঝা যাচ্ছে, তাতে ফসল আমরা সমস্ত বাজার যাচাই করে বিক্রি করতে পারব না। এক জন আন্তর্জাতিক ব‍্যবসায়ী আসবে, সে বলবে এই দামে বিক্রি কর। যার ভাল আছে, তার খারাপ দিকও আছে।’’

সভার পরে লকেট দাবি করেন, ‘‘সিঙ্গুরের কৃষকেরা আমাদের সঙ্গে আছেন। তাঁরা সকলে নরেন্দ্র মোদীর দিকে তাকিয়ে আছেন।’’ এ দিন সিঙ্গুরে যখন কৃষি আইনের পক্ষে চাষিদের সমর্থন কুড়োতে ব্যস্ত ছিলেন লকেট, তখনই পঞ্জাব-হরিয়ানায় বিক্ষোভে সামিল হয়েছিলেন চাষিরা। এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়া চাইলে সাংসদ বলেন, ‘‘পঞ্জাবে অনেকের অনেক জমি ছিল। তাদের কোটি কোটি টাকা আসত। এই আইনের ফলে তাদের কাছে আর টাকা আসবে না। তাই তারা এ সব করছে।’’

এ দিন আনন্দনগরে কৃষ্ণনারায়ণ দাস নামে এক চাষির বাড়িতে মধ্যাহ্নভোজ সারেন লকেট। মেনুতে ছিল মুগের ডাল ও তিন রকমের ভাজা মাছ। বিকেলে দলুইগাছায় একটি কর্মিসভাও করেন।

অন্য বিষয়গুলি:

New Farmer's Bill Locket Chatterjee Singur
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy