ভগ্নাবশেষ: পোড়ো মন্দির।
একটি পোড়ো মন্দিরই এই এলাকার প্রাচীনত্বের সাক্ষ্য দেওয়ার পক্ষে যথেষ্ট। তার উপর মন্দিরের পাশেই রয়েছে বাঁশঝাড়ে ঘেরা ঢিবি। যার আশেপাশে বাসিন্দারা একসময়ে দেখতে পেতেন সরু ইটের টুকরো, আর মাটির তৈরি দৈন্দনিন ব্যবহারের জিনিসপত্র। তবে এলাকাটি বন্যাপ্রবণ। ফলে দামোদরের জল কেড়ে নিয়েছে ইতিহাসের অনেক নিদর্শন। কিন্তু নদী ইতিহাসের উপাদান কেড়ে নিলেও, মানুষের মন থেকে তা মুছে ফেলা যায়নি। আর আছে বহু পুরনো মন্দিরটি। নদীপৃষ্ঠ থেকে অনেক উঁচুতে হওয়ায় যাকে ভাসিয়ে নিয়ে যেতে পারেনি দামোদর। এইটুকুকে সম্বল করেই উদয়নারায়ণপুরের গড়ভবানীপুরকে হাওড়া জেলায় পর্যটন মানচিত্রে স্থান করে দিতে উদ্যোগী হয়েছে বিভিন্ন মহল। কাজ শুরু হয়েছে পুরোদমে। চলছে শৌচাগার, পর্যটকদের জন্য বিশ্রামাগার, সুসজ্জিত পার্ক এবং মিউজিয়াম তৈরির কাজ। সোনার কাঠির ছোঁওয়ায় ধীরে ধীরে চোখ মেলছে ইতিহাস। জেগে উঠছে গড়ভবানীপুর।
এলাকাটি এক সময়ে ছিল ভুরসুট পরগনার অধীন। হাওড়া জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর, এই ভুরসুট পরগনায় রাজত্ব করতেন রায় পরিবার। সেই রাজত্বেরই রাজধানী ছিল গড়ভবানীপুর। চারিদিকে পরিখা দিয়ে ঘেরা এই গ্রামে ছিল রাজপ্রাসাদ, যা এখন ঢিবিতে পরিণত। রাজপরিবারের আরাধ্য দেবতা ছিলেন গোপীনাথ জিউ। সেই দেবতারই মন্দির এখন পড়ে আছে জীর্ণ অবস্থায়। সেখানে নিত্যপুজো হয়। রাজ্য প্রত্নতত্ব বিভাগ সূত্রে খবর, এটি তৈরি হয়েছিল ১৭০০ সালের গোড়ায়। বহুবছর ধরেই স্থানীয় বাসিন্দারা এলাকায় খননকার্য চালিয়ে ইতিহাসের উপাদানগুলি উদ্ধার করার দাবি জানিয়ে আসছেন। ২০১০ সালে রাজ্য প্রত্নতত্ব বিভাগ মন্দিরের কাছে খননকার্য চালিয়ে কিছু উপাদান সংগ্রহ করে। তবে সেগুলি সব মধ্যযুগের বলে জানিয়ে দেয় দেয় প্রত্নতত্ব বিভাগ। এই দফতর সূত্রের খবর, প্রাচীন যুগের উপাদান থাকলে তবেই তারা খননকার্য চালাতে পারে। কিন্তু এখানে প্রাচীন যুগের কোনও উপাদান মেলেনি। তারপরেই থেমে যায় খননকার্য।
নতুন-সাজে: পর্যটক টানতে চলছে নির্মাণ।
স্থানীয় বাসিন্দারা কিন্তু থেমে থাকেননি। এই এলাকায় একটি পর্যটনকেন্দ্র গড়ার লক্ষ্য নিয়ে তাঁরা বিভিন্ন মহলে দাবি জানাতে থাকেন। সেইসঙ্গে জীর্ণ মন্দির-সহ পুরো এলাকাকে হেরিটেজ ঘোষণা করার দাবি জানান তাঁরা। স্থানীয় বাসিন্দা সুখেন চন্দ্র বলেন, ‘‘আমাদের দাবি, মন্দিরটিকে রক্ষা করুক হেরিটেজ কমিশন। একইসঙ্গে এটিকে একটি ইতিহাস সমৃদ্ধ পর্যটনকেন্দ্র হিসাবে গড়ে তোলা হোক। আমরা খুশি সেই কাজ শুরু হয়েছে।’’
গড়ভবানীপুরকে পর্যটনকেন্দ্র হিসাবে গড়ে তুলতে প্রশাসনের তরফে যিনি মুখ্য ভূমিকা নিয়েছেন সেই উদয়নারায়ণপুরের বিধায়ক সমীর পাঁজা বলেন, ‘‘আমার বিধায়ক কোটা, উলুবেড়িয়ার সাংসদ সুলতান আহমেদের সাংসদ কোটার টাকা, জেলা পরিষদ এবং রাজ্য কৃষি বিপণন দফতরের টাকা নিয়ে এখানে পর্যটনকেন্দ্র গড়ার কাজ চলছে। আরও টাকার জন্য বিভিন্ন মহলে আমরা আবেদন জানিয়েছি।’’ উল্লেখ্য, রায় পরিবারের দোর্দন্ডপ্রতাপ ছিলেন রানি ভবশঙ্করী। পর্যটনকেন্দ্রটি গড়া হচ্ছে তাঁরই নামে। বীরত্বের জন্য তিনি মোগল সম্রাটদের কাছ থেকে রায়বাঘিনী উপাধি পেয়েছিলেন। সমীরবাবু বলেন, ‘‘আমরা যখন যেমন টাকা পাচ্ছি তেমন কাজ হচ্ছে। তবে যেভাবে পরিকল্পনা করা হয়েছে তাতে আগামী ২ বছরের মধ্যে জেলার পর্যটন মানচিত্রে উল্লেখযোগ্য স্থান করে নেবে গড়ভবানীপুর।’’
—নিজস্ব চিত্র।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy