Advertisement
E-Paper

আনাজের আগুনে দামে নাভিশ্বাস

উলুবেড়িয়ার গৃহবধূ শিল্পা মণ্ডলের কথায়, ‘‘লকডাউনে অনেকেরই রোজগার কমেছে। আলুসেদ্ধ-ভাত খাওয়ার পরিস্থিতিও নেই। অন্য আনাজেও হাত দেওয়া যাচ্ছে না।

উলুবেড়িয়া নিমদিঘি বাজার। ছবি: aসুব্রত জানা

উলুবেড়িয়া নিমদিঘি বাজার। ছবি: aসুব্রত জানা

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০১ নভেম্বর ২০২০ ০৪:০৪
Share
Save

আলুই হোক বা পেঁয়াজ, কাঁচালঙ্কা বা শসা— হাত দেওয়ার উপায় নেই! অক্টোবরের শেষ সকালেও হাওড়া-হুগলির বিভিন্ন বাজারে আনাজের দামে ছ্যাঁকা লাগছে ক্রেতাদের।

মাসখানেক ধরে আলুর দাম নিয়ন্ত্রণে সরকারের তরফে নানা আশ্বাসবাণী শোনা গিয়েছে। কিন্তু নিয়ন্ত্রণ দূরঅঅস্ত্‌, বাড়তে বাড়তে শনিবার এক কেজি চন্দ্রমুখী আলুর দাম কেজিপ্রতি ৪০ টাকায় পৌঁছেছে। পেঁয়াজ, টোম্যাটো ১০০ টাকা ছুঁইছুই। বেগুন, পটল, ঝিঙে থেকে কুমড়ো— ৪০-৬০ টাকার নীচে মিলছে না কিছুই। অথচ, বাজার ব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত সংশ্লিষ্ট দফতরের লোকজন দাবি করেছিলেন, অক্টোবরের শুরুতে শীতকালীন আনাজ উঠতে শুরু করলে দাম কমবে। কিন্তু বাস্তবে সেই বক্তব্যের প্রতিফলন ঘটেনি। লাগামছাড়া দামে গৃহস্থ বিপাকে।

উলুবেড়িয়ার গৃহবধূ শিল্পা মণ্ডলের কথায়, ‘‘লকডাউনে অনেকেরই রোজগার কমেছে। আলুসেদ্ধ-ভাত খাওয়ার পরিস্থিতিও নেই। অন্য আনাজেও হাত দেওয়া যাচ্ছে না। সরকারের উচিত আনাজের দামের প্রতি নজর রাখা। এই ভাবে দাম বাড়তে থাকলে তো না খেয়ে মরতে হবে।’’

প্রতি মাসে রাজ্যবাসীর খাওয়ার জন্য ৫ লক্ষ টন আলু লাগে। ভিন রাজ্যে মাসে ১ লক্ষ টনের বেশি আলু রফতানি করা হয়। রাজ্যের ৪৬৫টি হিমঘরে ১৬০০ লক্ষ টন আলু এখনও মজুত। শনিবার বস্তাপ্রতি (৫০ কেজি) ১৬০০ টাকা দামে জ্যোতি এবং ১৮০০ টাকায় চন্দ্রমুখী আলু বিক্রি হয়েছে। অর্থাৎ, ৩২ টাকা কেজি জ্যোতি এবং ৩৬ টাকায় চন্দ্রমুখী আলু কিনেছেন পাইকাররা।

বাজারে দাম এত চড়া কেন?

রাজ্য আলু ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক লালু মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘ভিন্ রাজ্যে এ বার আলুর দাম খুব চড়া। ভাল দাম মিলছে। তাই রফতানিও হচ্ছে চড়া দামে। তার সাপেক্ষেই এ রাজ্যেও আলুর দাম চড়া। কেন্দ্রীয় সরকারের নতুন কৃষি আইনে এখন আনাজের উপরে রাজ্যের নিয়ন্ত্রণ নেই। আলুর দামও তাই বাড়ছে।’’

খুচরো ব্যবসায়ীদের অনেকে জানান, গত কয়েক দিন চাহিদা অনুযায়ী আলু মেলেনি। তার উপরে দাম অনেক বেশি। হুগলি জেলা নিয়ন্ত্রিত বাজার সমিতির সচিব শেখ ফিরদোসুর রহমানের বক্তব্য, কয়েক দিন হিমঘর বন্ধ থাকায় আলুর জোগান কম ছিল। আগামী মঙ্গলবার থেকে ‘সুফল বাংলা’র স্টলে ২৫ টাকা কেজি দরে আলু বিক্রি হবে। রাজ্য নাসিকের পেঁয়াজের উপরে নির্ভরশীল। জোগান কম থাকায় পেঁয়াজের দামও বেড়েছে।

বৈদ্যবাটী, ভদ্রেশ্বর প্রভৃতি জায়গার খুচরো ব্যবসায়ীদের একাংশ জানান, শেওড়াফুলি হাটে (এখন বৈদ্যবাটীতে বসছে) আনাজের জোগান কম। পাইকারদের একাংশের দাবি, নতুন হাটে পরিকাঠামোর সমস্যায় অনেকেই ভিন্ রাজ্যের আনাজ কম আমদানি করছেন। তাই জোগাম কমেছে। এই হাট হাওড়া, হুগলি, কলকাতা, উত্তর ২৪ পরগনার বিভিন্ন জায়গায় আনাজের জোগান দেয়। ‘শেওড়াফুলি কাঁচা সব্জি ব্যবসায়ী সমিতি’র সম্পাদক সুকল্যাণ চট্টোপাধ্যায়ের দাবি, প্রশাসন দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ।

আলু-পেঁয়াজের পাশাপাশি অন্য আনাজের দামও কেন কমছে না, সেই প্রশ্ন তুলছেন সাধারণ মানুষ। তেলিনিপাড়ার গৃহবধূ ঋত্বিকা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়, ‘’৫০-৬০ টাকার নীচে কোনও আনাজই নেই। কী দিন পড়ল! প্রশাসন নজর দিক।’’ চাঁপদানি বাজারের আনাজ বিক্রেতা উত্তম মণ্ডল শেওড়াফুলি থেকে আনাজ কেনেন। তাঁর ক্ষোভ, ‘‘দামে নিয়ন্ত্রণ নেই। প্রশাসনের নজর নেই। চড়া দামে আনাজ কিনছি। অল্প লাভে বেচছি।’’

ফিরদোসুরের দাবি, ‘‘কৃষি এবং উদ্যানপালন দফতর থেকে জানা গিয়েছে, চলতি মাসে বর্ষা সক্রিয় থাকায় বিভিন্ন জেলায় আনাজ চাষে ক্ষতি হয়েছে। শীতকালীন আনাজ উঠতে আরও ১০-১২ দিন সময় লাগবে। আশা করছি, ১০ নভেম্বরের পর আনাজের দাম স্বাভাবিক হবে।’’

Vegetables Potato Onion High Price

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}