পা়ড়েই ভিজিয়ে দেওয়া হচ্ছে প্রতিমা। নিজস্ব চিত্র
পুজো মিটলে শ’য়ে শ’য়ে প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হয় গঙ্গায়। তাতে গঙ্গা দূষিত হয়। সেই দূষণ আটকাতে গঙ্গায় প্রতিমা না-ফেলে হোস পাইপের মাধ্যমে গঙ্গার জল দিয়েই তা গলিয়ে ফেলার ব্যবস্থা করেছে কোন্নগর পুরসভা। মাটি ধোওয়া জল শোধন করে তা গঙ্গাতেই ফেলা হচ্ছে। এ বছর এই নয়া উদ্যোগে সাড়া দিলেন কোন্নগরের সাতটি পুজোর উদ্যোক্তারা। খুশি পরিবেশপ্রেমীরা।
পুর-কর্তৃপক্ষ জানান, মাসদুয়েক আগে বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন পুজো কমিটির কাছে আবেদন করা হয়েছিল। প্রাথমিক ভাবে পাঁচটি কমিটি সাড়া দেয়। পরে আরও দু’টি কমিটি যোগাযোগ করে। বিসর্জনের সন্ধ্যায় শোভাযাত্রা করে এসে তারা পুর-কর্তৃপক্ষের হাতে প্রতিমা তুলে দেয়। শহরের হাতিরকুল এলাকায় লোকনাথ ঘাটে নয়া ব্যবস্থায় ‘বিসর্জন’-এর ব্যবস্থা করা হয়েছিল।
পুরপ্রধান বাপ্পাদিত্য চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘অনেক পুজো কমিটি যোগাযোগ করছে। কালীপুজোয় আরও বেশি সংখ্যক প্রতিমা এ ভাবে নিরঞ্জনের চেষ্টা করব।’’
পুরসভার সাফাই বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত অলোক মুখোপাধ্যায় জানান, লোকনাথ ঘাটের কিছুটা জায়গা জুড়ে প্রায় পনেরো ফুট চওড়া এবং দশ ফুট লম্বা অংশে ফুটতিনেক গর্ত খুঁড়ে প্রথমে ঝামা বিছানো হয়। তার পরে পাথুরে ইট, চুন ব্লিচিং, বালি ফেলে আরও তিনটি স্তর করা হয়। ফের চুন-ব্লিচিং এবং বালির দানা বিছানো হয়। শেষ ধাপে ইট বিছানো হয়। এখানেই প্রতিমা রেখে গঙ্গা থেকে জল তুলে হোস পাইপের মাধ্যমে প্রতিমা গলিয়ে ফেলা হয়। বালি, ইট, ঝামা, বালির মোটা দানা, চুন-ব্লিচিংয়ের স্তরের মধ্য দিয়ে মাটি ধোয়া জল, শোধিত হয়ে গঙ্গায় মেশে। কাঠামো সরিয়ে রাখা হয় প্রতিমা শিল্পীদের জন্য। ফুল-বেলপাতা, শোলার সাজ, অস্ত্রশস্ত্র খুলে কঠিন বর্জ্য প্রতিস্থাপন প্রকল্পে পাঠানো হয়।
পুরসভার তরফে সুজিত রায় জানান, দেবপাড়া সর্বজনীন, কোন্নগর অগ্রণী, ১৬-র পল্লি, শারদ সম্মেলন, আমরা সকলে-সহ মোট সাতটি পুজোর প্রতিমা এই ভাবে নিরঞ্জন করা হয়। পুরসভার তরফে তাদের শংসাপত্রও দেওয়া হয়েছে। ‘আমরা সকলে’র অন্যতম কর্তা অশোক দেব ১৬-র পল্লির সম্পাদক রঞ্জিৎ ভট্টাচার্য, দেবপাড়া সর্বজনীনের সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য স্বরূপ বন্দ্যোপাধ্যায়রা জানান, পুরসভার প্রস্তাবে এলাকার সকলেই স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে সায় দিয়েছেন। সকলেরই বক্তব্য, কোন্নগর পুরসভা দৃষ্টান্ত স্থাপন করল। অন্যান্য জায়গাতেও এই ব্যবস্থা করা উচিত। অশোকবাবুর কথায়, ‘‘প্রতিমা ফেললে গঙ্গা দূষিত হয়। আখেরে ক্ষতিটা আমাদেরই হয়। সংস্কার নিশ্চয়ই আছে। কিন্তু বিজ্ঞানকে অস্বীকার করে নয়। আমরা বিজ্ঞানকে মেনে নিয়েছি।’’
পরিবেশবিদ বিশ্বজিৎ মুখোপাধ্যায়ও কোন্নগর পুরসভার উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘পুজো সংক্রান্ত বর্জ্য যাতে গঙ্গায় না মেশে, তার জন্য পরিবেশ অ্যাকাডেমির তরফে বিভিন্ন পুরসভাকে আবেদন করা হয়েছিল। কোন্নগর পুরসভা তারিফযোগ্য কাজ করেছে। এ ব্যাপারে কোন্নগরকে মডেল করা উচিত। পরিবেশ মেলায় বিষয়টি আমরা তুলে ধরব। রাজ্য সরকারকে অনুরোধ করব, যাতে অন্য জায়গাতেও এই ব্যবস্থা করা হয়।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy