চোলাইয়ের প্যাকেটে ভরেছে কুলগাছিয়া স্টেশনের পাশের জমি। ছবি: সুব্রত জানা
এ যেন হিতে বিপরীত হল!
মদের ঠেক বন্ধ হয়েছে। সুরাপ্রেমীরা বেছে নিয়েছেন রাস্তার ধার।
মাসছয়েক আগে গ্রামীণ হাওড়ার প্রায় সব বেআইনি মদের ঠেক বন্ধ করে দেয় আবগারি দফতর। তাই কয়েক মাস ধরে বাগনান, উলুবেড়িয়া, কোলাঘাট, আমতা, সাঁকরাইল -সহ গ্রামীণ হাওড়ার বিভিন্ন এলাকায় দেখা যাচ্ছে, খোলা জায়গায় মদ্যপানের আসর বসছে। বাদ নেই মুম্বই
রোডের ধারও। কেউ কেউ অবশ্য চোলাইয়ের ঠেকেও যাচ্ছেন। বাগনানে ওই সড়কের ধারে নিয়মিত মদের আসরে আসছেন, এমন কয়েকজন যুবকের দাবি, ঠেকে বসে মদ খাওয়ার খরচ কম। কিন্তু এখন ঠেক নেই, তাই রাস্তার ধারই ভরসা। পানশালায় গেলে দ্বিগুণ-তিন গুণ খরচ। কে দেবে? প্রশ্ন তাঁদের।
জেলা জুড়ে প্রকাশ্যে মদ্যপান বাড়ায় পুলিশ প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে অবশ্য প্রশ্ন তুলেছেন সাধারণ মানুষ। জেলা আবগারি দফতরের এক কর্তা জানান, এটা দেখা পুলিশের কাজ। বেআইনি মদের ঠেক আর চলতে দেওয়া হবে না। হাওড়া (গ্রামীণ) জেলা পুলিশ সুপার গৌরব শর্মার দাবি, ‘‘রাস্তার ধারে বসে কেউ মদ খেলে তাঁকে ধরে আনা হয়।’’ কিন্তু সব সময় নজরদারি কতটা সম্ভব, সে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।
ছ’মাস আগেও সলপ থেকে কোলাঘাট পর্যন্ত মুম্বই রোডের ধারের বহু হোটেল, ধাবা, পানের দোকানের পিছনের গোপন কুঠুরিতে বেআইনি ভাবে মদের ঠেক চলত। গ্রামের দিকেও বসত। লাইসেন্স করা দোকান থেকে মদ কিনে এনে ওই সব ঠেকে ঢুকে মৌতাত জমাতেন মানুষ। কিন্তু আবগারি দফতরের অভিযানে তেমন অন্তত ৬০টি ঠেক বন্ধ হয়ে যায়। যার মধ্যে ৪০টি ছিল শুধু মুম্বই রোডের ধারেই। এর পিছনে পানশালা-মালিকদের একাংশের ‘ভূমিকা’ রয়েছে বলে মনে করছেন ওই ঠেক-মালিকেরা।
কেন?
গত অর্থবর্ষ থেকে পানশালার ‘লাইসেন্স ফি’ অনেকটা বেড়েছে। এখন ছ’মাস অন্তর ওই লাইসেন্স পুনর্নবীকরণ করাতে হয়। এ জন্য প্রতি মাসে টাকা দিতে হয়। পানশালা-মালিকদের একটা বড় অংশের অভিযোগ, বর্ধিত হারে ‘লাইসেন্স ফি’ দিতে হলেও তাঁদের ক্রেতা সে ভাবে বাড়েনি। লোকসানের ধাক্কায় কেউ কেউ পানশালা বন্ধ করে দিতে হবে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেন। বিষয়টি নিয়ে আবগারি দফতরের সঙ্গে পানশালা-মালিকদের বৈঠক হয়। সেই বৈঠকেই ঠেক ভেঙে দেওয়ার কথা ওঠে বলে আবগারি দফতরেরই একটি সূত্রের খবর।
আবগারি দফতরের কর্তাদের একাংশ জানান, পানশালা-মালিকেরা আশা প্রকাশ করেছিলেন, ঠেকগুলি তুলে দেওয়া হলে সেখানকার সুরাপ্রেমীরা পানশালায় আসবেন। ফলে, ‘লাইসেন্স ফি’ বাড়ানোর জন্য ক্ষতি তাঁরা পূরণ করতে পারবেন। এরপরেই মাসছয়েক আগের ওই অভিযান। কিন্তু এখন পানশালা-মালিকেরা মানছেন, ওই অভিযানের পরে তাঁদের মদ বিক্রি কিছুটা বাড়লেও প্রত্য়াশার ধারে-কাছে যাচ্ছে না। যদিও তা মানতে চায়নি আবগারি দফতর।
ঠেক তুলে দেওয়ার ফলে চোলাইয়ের রমরমা বেড়েছে বলেও দাবি করেছেন মদ কারবারিদের একাংশ। ডোমজুড়ের এক মদ কারবারির বলেন, ‘‘আবগারি দফতর মদের ঠেক তুলে দিল।
কিন্তু চোলাইয়ের ঠেক ভাঙল না।
যাঁরা মূলত দেশি মদ ঠেকে বসে খেতেন, তাঁরাই চোলাই খাচ্ছেন। আবার বিলেতি মদ যাঁরা খেতেন, তাঁদের জন্য কীটনাশক মিশিয়ে চোলাইয়ের নেশার মাত্রাও বাড়ানো হচ্ছে। কিন্তু এতে চোলাই থেকে বিষক্রিয়া হতে পারে।’’
জেলা আবগারি দফতরের কর্তাদের দাবি, হাওড়ায় চোলাইয়ের ঘাঁটি নেই বললেই চলে। তবে ঠেক কিছু আছে। সেগুলি বন্ধ করার জন্য নিয়মিত হানা দেওয়া হয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy