Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
দশমীতে ছেদ পড়ছে শোভাযাত্রার ঐতিহ্যের
Idol Immersion

বিসর্জনের পথ আলোকসজ্জাহীন

অন্যান্যবার নবমীর দুপুরে নাওয়া-খাওয়ার ফুরসত থাকে না মুস্তাফাদের। বিসর্জনের শোভাযাত্রার জন্য ট্রাকে আলো সাজাতে দিন কাবার হয়ে যায়।

কাজ নেই, টিভির সামনে অালোকশিল্পীরা। ছবি: তাপস ঘোষ

কাজ নেই, টিভির সামনে অালোকশিল্পীরা। ছবি: তাপস ঘোষ

গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায় ও প্রকাশ পাল
চন্দননগর শেষ আপডেট: ২৪ নভেম্বর ২০২০ ০৫:২৯
Share: Save:

দিনে সূর্যের আলো, রাতে পথবাতির— আজ দুই আলোতে বিসর্জনের পথে যাবে ‘আলোর শহর’ চন্দননগরের জগদ্ধাত্রী। ছেদ পড়বে দীর্ঘদিনের ঐতিহ্যের। হবে না আলোকসজ্জা নিয়ে রাতভর শোভাযাত্রা।

হা-হুতাশ আছে। আক্ষেপ আছে। কিন্তু কোভিড সচেতনতায় এ বার ঐতিহ্যের সঙ্গে তাঁরা আপস করে নিয়েছেন। না হলে আলোকশিল্পী মহম্মদ মুস্তাফা কেন বলবেন, ‘‘শোভাযাত্রা না হওয়ায় আমাদের কারবারের ক্ষতি হল বটে, তবে আক্ষেপ নেই। করোনা বিদেয় হলে আবার ব্যস্ততার দিন ফিরবে।’’

অন্যান্যবার নবমীর দুপুরে নাওয়া-খাওয়ার ফুরসত থাকে না মুস্তাফাদের। বিসর্জনের শোভাযাত্রার জন্য ট্রাকে আলো সাজাতে দিন কাবার হয়ে যায়। সোমবার দুপুরে তিনি গুটিকয়েক কারিগরকে নিয়ে নিজের স্টুডিয়োতে টিভিতে খবর দেখছিলেন। কাজ নেই।

গোটা চন্দননগরেই নবমীর চিরকালীন ব্যস্ততা যেন হারিয়ে গিয়েছিল এ দিন! তেমাথা থেকে বেশোহাটা, চারমন্দিরতলা, দৈবকপাড়া, মনসাতলা, ভুবনেশ্বরীতলা, নোনাটোলা— রাস্তা জুড়ে সার দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা আলোর ট্রাকের চেনা ছবিটা এ বার উধাও। কেন্দ্রীয় জগদ্ধাত্রী পুজো কমিটি এবং প্রশাসনের সিদ্ধান্তমতো প্রতিটি বারোয়ারির জন্য এ বার একটিমাত্র ট্রাক বরাদ্দ হয়েছে। তাতে শুধু প্রতিমা থাকবে আর কিছু বারোয়ারির লোক। সেই ট্রাকই মণ্ডপ থেকে সরাসরি পৌঁছবে গঙ্গার ঘাটে।

নবমীর বিকেলে দৈবকপাড়ায় কথা হচ্ছিল প্রৌঢ় সমীর গুহমল্লিক, বিজয় গুহমল্লিকের সঙ্গে। তাঁদের কথায়, ‘‘নবমীতে এই সময় এখান দিয়ে হাঁটার জো থাকে না। অথচ, আজ সাধারণ দিনের মতো দিব্যি গাড়ি চলছে।’’ দৈবকপাড়া সর্বজনীনের কর্মকর্তা অমিত ঘোষ বলেন, ‘‘নবমীতে মূল পুজো। দুপুরে পল্লিবাসী এখানে ভোগ খান। তার সঙ্গেই চলে বিসর্জনের প্রস্তুতি। যেন মহাযজ্ঞ! এ বার পুজোটাই শুধু রয়েছে।’’

আজ, মঙ্গলবার বেলা ১২টা থেকে বিসর্জন শুরু। সব মিলিয়ে প্রায় দু’শো প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হবে। ভাসান-পর্ব শেষ হতে রাত গড়িয়ে যেতে পারে বলে পুলিশ-প্রশাসন থেকে পুজো-উদ্যোক্তারা মনে করছেন। বিসর্জন চলবে কাল, বুধবারেও। প্রত্যেক বারোয়ারিকে বিসর্জনের নির্দিষ্ট সময় দেওয়া হয়েছে। এ জন্য ঘাটও নির্দিষ্ট হয়েছে। কেন্দ্রীয় কমিটির কর্তারা জানান, পুরসভাকে ঘাটে যাওয়ার রাস্তায় বাড়তি আলো লাগানোর কথা বলা হয়েছে।

ফুলমালা-সহ আনুষঙ্গিক জিনিসপত্র ফেলার জন্য পুরসভার পক্ষ থেকে ঘাটগুলিতে পাত্র রাখা থাকছে। কোনও জিনিস যাতে জলে মিশে যেতে না পারে, সে জন্য ঘাটে জাল লাগানো হচ্ছে বলে জানান চন্দননগরের পুর-কমিশনার স্বপন কুণ্ডু। তাঁর কথায়, ‘‘বিসর্জনের জেরে গঙ্গায় যাতে এতটুকু দূষণ না হয়, সেটা আমরা দেখব। পুরকর্মীরা গঙ্গা থেকে প্রতিমার কাঠামো দ্রুত সরিয়ে ফেলবেন।’’ পুলিশ জানিয়েছে, ঘাটে পর্যাপ্ত আলো থাকবে। নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে অন্তত আড়াইশো পুলিশকর্মী থাকছেন। গঙ্গায় পুলিশের লঞ্চ থাকবে। থাকবে বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীও।

এক সময়ে গ্যাসের বাতির আলোয় দশমীর শোভাযাত্রা দেখেছে এ শহর। তার পরে ক্রমাগত আলোর বিবর্তন ঘটেছে। বাল্ব থেকে টুনি, তারপরে এলইইডি। নিজের শহরে বিসর্জনের শোভাযাত্রা চন্দননগরের আলোকশিল্পীদের কাছেও অঘোষিত মর্যাদার লড়াই। সেই লড়াই এ বার স্থগিত।

সূর্য অস্ত গেলে দেবী বিসর্জনের পথে যাবেন পথবাতির আলোয়।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy