কাজ চলছে। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য
ছিন্নমস্তা গাছও কিন্তু ফেলনা নয়! বরং উপরের অংশ ছেটে ফেলার পরে ভাঙাচোরা ডালপালা নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা গাছকেও দৃষ্টিনন্দন করে তোলা যায়। সেই কাজই এ বার শুরু করেছে পূর্ব রেল। মাথা ছাঁটা বিভিন্ন গাছকে ব্যবহার করেই এখন প্ল্যাটফর্মের সৌন্দর্য বাড়ানোর কাজ চলছে হাওড়া ডিভিশনের বালি-বেলুড় স্টেশনে। ছ’-আট ফুটের গাছের গুঁড়ি, ডালপালা ব্যবহার করে তৈরি হচ্ছে শিম্পাঞ্জি, বেজি, হনুমানের মডেল।
পূর্ব রেলের হাওড়া ডিভিশনের ডিআরএম আর বদ্রীনারায়ণ বলেন, ‘‘উন্নয়ন ও যাত্রীদের স্বার্থে গাছের বেশ কিছু অংশ ছাঁটতে হয়েছে। কিন্তু বাকি অংশ দিয়েই প্ল্যাটফর্মের সৌন্দর্য বাড়াতে তৈরি হচ্ছে এই মডেল।’’ কাটা গাছকে ব্যবহার করে পশুপাখি, জীবজন্তুর ভাস্কর্য বানানোর ক্ষেত্রে হাওড়া ডিভিশনকেই মডেল হিসেবে বাছা হয়েছে বলে জানান ডিআরএম।
বছর খানেক আগে হাওড়া ডিভিশনের বালি, বেলুড়, লিলুয়া, কোন্নগর, বৈদ্যবাটী-সহ বিভিন্ন স্টেশনে যাত্রী শেড বানানোর জন্য ও ঝড়ের সময়ে যাত্রীদের নিরাপত্তার কথা ভেবে প্ল্যাটফর্মে থাকা গাছগুলিকে প্রয়োজন মতো ছাঁটা হয়েছে। তবে প্রথম থেকেই গাছগুলি গুঁড়ি থেকে না কেটে ছয়-আট ফুট রেখে তার উপরের অংশ ছেটে ফেলার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন রেল কর্তারা। পূর্ব রেল সূত্রে খবর, বন দফতরের অনুমতি নিয়ে সমস্ত নিয়ম মেনেই গাছের কিছু অংশ কাটা হয়েছিল। এর পরে শেড তৈরি হয়ে গেলেও গাছগুলি পরিত্যক্ত অবস্থাতেই রয়ে গিয়েছে প্ল্যাটফর্মের মধ্যে। তবে মাস পাঁচেক ধরে সেই সমস্ত গাছ ব্যবহার করেই শিল্পকলা ফুটিয়ে তুলছেন বসিরহাটের রঘুনাথপুরের বাসিন্দা বিশ্বজিৎ প্রামাণিক।
দু’বছর ধরে শান্তিনিকেতনের পৌষ মেলায় নিজের কাঠের কাজের সম্ভার নিয়ে হাজির থাকেন বিশ্বজিৎবাবু। এক বছর আগে সেই মেলায় গিয়েছিলেন হাওড়ার ডিআরএম। সেখানেই তাঁর সঙ্গে বিশ্বজিৎবাবুর পরিচয় হয়। বিশ্বজিৎবাবু বলেন, ‘‘কাজ দেখে ডিআরএম সাহেবের পছন্দ হয়েছিল। আমাকে ওঁর অফিসে দেখা করতে বলেন।’’ আরও জানান, তাঁকে ওই কাটা গাছের বিষয়ে জানানো হয়। এবং গাছের গুঁড়ি অক্ষত রেখে তাতে মডেল বানানো যাবে কি না তা জানতে চান রেল কর্তারা। বছর চল্লিশের বিশ্বজিৎবাবু তাতে রাজি হলে পরে যোগাযোগ করা হবে জানিয়ে দেন রেল কর্তারা।
এর পাঁচ মাস পরে বিশ্বজিৎবাবুকে হাওড়ায় ডেকে পাঠিয়ে পরীক্ষামূলক ভাবে বালিতে একটি মডেল তৈরির করে দেখাতে বলেন রেল কর্তারা। বিশ্বজিৎবাবু বলেন, ‘‘বালিতে ওই গাছের অংশ ব্যবহার করে একটি শিম্পাঞ্জি বানাই। কাজ করার সময়েই যাত্রীরা খুব প্রশংসা করেছেন।’’ আরও জানান, যাত্রীদের পছন্দ হওয়াতেই রেলের তরফে আরও ১২টি গাছে ওই কাজের বরাত দেওয়া হয়েছে। গাছ প্রতি কাজের জন্য শিল্পীকে দেওয়া হবে ২৫ হাজার টাকা। এই মুহূর্তে বেলুড়ে একটি আট ফুটের গাছের অংশ হাতুড়ি, ছেনি, বাটালি দিয়ে খোদাই করে দু’টি ‘মিয়ারক্যাট’ বানাচ্ছেন বিশ্বজিৎ। তিনি জানান, মডেল বানানোর পরে তাতে বিশেষ রাসায়নিক ব্যবহার করা হবে। সব শেষে হবে ভার্নিশ। আগামী দিনে কোন্নগর, বৈদ্যবাটী স্টেশনেও তৈরি হবে নানা মডেল।
বালি ও বেলুড় স্টেশনের নিত্যযাত্রীরা অবশ্য ভাস্কর্য দেখে খুব খুশি। বালি স্টেশনের এক নিত্যযাত্রী নন্দদুলাল দে বলেন, ‘‘গাছ কেটে ফেলার সময় খুব খারাপ লাগছিল। কিন্তু ট্রেন, ঘোষণা, হকারের বাইরেও যে প্ল্যাটফর্মকে দৃষ্টিনন্দন করে তোলা যায় তা এটা দেখে বোঝা যাচ্ছে।’’ ডিআরএম আর বদ্রীনারায়ণ বলেন, ‘‘সকলের পছন্দ হলে ও রেলের তরফে অনুদান মিললে আরও কাজ করা হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy