হাওড়াকে সাজিয়ে তুলতে দু’টি স্তরে কাজ করার পরামর্শ দিয়েছিলেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী। সেই মতো শহর সাজাতে স্বল্পমেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার রূপরেখা তৈরি করে হাওড়া পুরসভা।
স্বল্পমেয়াদি পরিকল্পনা মতো পুর এলাকার সমস্ত রাস্তার কাজ, নর্দমা তৈরি ও সৌন্দর্যায়ন প্রায় শেষ পর্যায়ে। এ বার দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা ‘ভিশন-২০২১’-এর প্রথম পর্যায়ের কাজ শুরু করল পুরসভা। সম্প্রতি সেই কাজ নিয়ে জেলার মন্ত্রী, পুলিশ-প্রশাসনের কর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন মেয়র রথীন চক্রবর্তী। এই কাজের জন্য যেমন রাজ্য সরকার আর্থিক সহযোগিতা করছে তেমন পুরসভাও নিজস্ব তহবিল থেকে খরচ করবে।
ইতিমধ্যেই রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সেখানে নানা প্রকল্পের সূচনার পাশাপাশি কাজের অগ্রগতির বিষয়েও খোঁজ নিচ্ছেন। যে কোনও সময় হাওড়াতেও আসতে পারেন তিনি। পাশাপাশি ২০১৮-য় রয়েছে হাওড়া পুরসভার নির্বাচন। এ সবের আগে ‘ভিশন-২০২১’-এর পরিকল্পনা ফের ঝালিয়ে নিতেই এই বৈঠক বলে মনে করছেন জেলা প্রশাসনের কর্তারা।
যদিও রথীনবাবু বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর কথাতেই দু’টি স্তরে উন্নয়নের কাজ করা হচ্ছে। পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমও শহর সাজানোর জন্য পরামর্শ দিয়েছেন। সব মিলিয়ে সারা বছরই কাজ চলছে। কোনও কিছুকে সামনে রেখে নয়, জরাগ্রস্ত শহরটা সারাতে কী কী দাওয়াই দেওয়া যায়, তা নিয়েই আলোচনা করা হল।’’ মেয়র আরও জানান, দীর্ঘমেয়াদি কাজটি করা হবে ‘জোন’ ভাগ করে। অর্থাৎ এক একটি জায়গার গুরুত্ব বুঝে সেখানকার উন্নয়ন করা হবে।
যেমন, মধ্য হাওড়ায় রয়েছে জেলার সমস্ত প্রশাসনিক দফতর। তাই সেটিকে প্রশাসনিক জোন বলে চিহ্নিত করা হয়েছে। আবার ডুমুরজলা স্টেডিয়াম সংলগ্ন এলাকাকে খেলাধুলোর জোন হিসেবে ধরা হয়েছে। বেলুড়-বালির একটি অংশকে শিক্ষা ও শিল্প জোন হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। আবার গঙ্গার পাড়ে থাকা হাওড়া স্টেশন সংলগ্ন বাসস্ট্যান্ড ঘিরে গড়ে তোলা হবে স্টেশন জোন। কী কী কাজ হবে এই ‘ভিশন ২০২১’-এ?
পুরসভা সূত্রে খবর, মেগা সিটি হাওড়া গড়ে তুলতে গেলে নিকাশি, পানীয় জল ও যোগাযোগ ব্যবস্থাকে প্রথমে উন্নত করতে হবে। ইতিমধ্যেই নিকাশি ব্যবস্থার আমূল সংস্কারের জন্য রাজ্য সরকার ১৮৫ কোটি টাকা দিয়েছে। ভূগর্ভস্থ নিকাশি ব্যবস্থা কেমন হবে, তার রূপরেখাও তৈরি করছে কেএমডিএ। ১৫৭ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছে আরও তিনটি নতুন জলপ্রকল্প তৈরির জন্য। এখন হাওড়ায় ৬০ মিলিয়ন গ্যালন পানীয় জল পাওয়া যায়। পদ্মপুকুর ও বালিতে নতুন প্রকল্প তৈরি হলে আরও ৩০ মিলিয়ন গ্যালন জল বেশি পাওয়া যাবে।
ডুমুরজলা জোনে ইন্ডোর ও আউটডোর স্টেডিয়াম-সহ তৈরি করা হচ্ছে সঙ্গীত-নৃত্য অ্যাকাডেমি। আবার, উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে তৈরি করা হবে দু’টি রিং রোড-সহ তিনটি বড় উড়ালপুল ও কয়েকটি ছোট উড়ালপুল। একটি রিং রোড হবে হাওড়া স্টেশন থেকে ফোরশোর রোড হয়ে কোনা এক্সপ্রেসওয়ে পর্যন্ত। সেখান থেকে ড্রেনেজ ক্যানাল রোড হয়ে চ্যাটার্জিপাড়ার কাছে একটি ফ্লাইওভারের মাধ্যমে বঙ্কিম সেতুতে মিশবে রাস্তাটি। আরেকটি কোনা এক্সপ্রেসওয়ে, দুই ও ছয় নম্বর জাতীয় সড়ক হয়ে বালি জিটি রোড ধরে হাওড়া স্টেশন পৌঁছবে। আরও দু’টি ফ্লাইওভার হবে আরুপাড়া ও বাকসাড়াতে। তৈরি করা হচ্ছে নতুন হাসপাতাল, কলেজও। মঙ্গলাহাটের জন্য বিকল্প জায়গা বাছা হতে পারে। কিন্তু দখলদারের সমস্যা মিটবে কি করে? রথীনবাবু বলেন, ‘‘দখলদারদের ঠিকমতো বুঝিয়ে নিশ্চিত বিকল্প জায়গার ব্যবস্থা করে দিলে তাঁরাই সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেবেন। তাই এটা কোনও সমস্যা নয়।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy