Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Howrah

দৃষ্টি ফিরিয়ে দিয়েছিলেন শিবপুরের হাজার-হাত কালী

স্থানীয়দের মতে, হাজার-হাত কালী খুবই জাগ্রত, ভক্তিভরে কেউ কিছু চাইলে কালী কাউকে ফিরিয়ে দেন না।

শিবপুরের হাজার-হাত কালী। নিজস্ব চিত্র।

শিবপুরের হাজার-হাত কালী। নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
হাওড়া শেষ আপডেট: ১৪ নভেম্বর ২০২০ ১৮:৪৯
Share: Save:

হাওড়ার শিবপুর ওলাবিবিতলায় হাজার-হাত কালীর মন্দির। শতাব্দী প্রাচীন এই মন্দিরে প্রতি বছর ধুমধাম করে পুজোর আয়োজন করা হলেও এ বছর করোনার কথা মাথায় রেখে বন্ধ রাখা হয়েছে উত্সব। মন্দিরকে ঘিরে হাজারো জনশ্রুতি। শোনা যায়, এই মন্দিরে প্রার্থনা করে দক্ষিণ ভারতীয় এক ব্যক্তি দৃষ্টিশক্তি ফিরে পেয়েছিলেন।

কলকাতার চোরবাগানের আশুতোষ মুখোপাধ্যায়ের উদ্যোগে এই মন্দির গড়ে ওঠে। লোকে তাঁকে তান্ত্রিক আশুতোষ তর্করত্ন নামেও চেনেন। আশুতোষ দেশের বিভিন্ন তীর্থস্থান ঘুরে বেড়াতেন। পুজোপাঠ, ধ্যান, সাধনা নিয়ে থাকতেন তিনি। এক বার স্বপ্নে কালীর এই হাজার-হাতের রূপ দেখতে পান আশুতোষ। ওলাবিবিতলায় যেখানে আজ এই মন্দির গড়ে উঠেছে সেই জায়গাটিরও স্বপ্ন দেখেন। সেই স্বপ্নাদেশ মতো মন্দির গড়ার জন্য ১২৫ টাকায় হালদার পরিবারের কাছ থেকে ৩ কাঠা জায়গা কিনে মাটির মন্দির তৈরি করেন আশুতোষ। ১৮৭০ সালে সেই মন্দির গড়ে ওঠে। কুমোরটুলির প্রিয়নাথ পাল বিগ্রহ বানান। চণ্ডীপুরাণ অনুযায়ী, অসুর বধের সময়ে দেবী দুর্গা অনেক রূপ ধারণ করেছিলেন। তার মধ্যে অন্যতম তাঁর হাজার-হাতের রূপ। চণ্ডীপুরাণের সেই বর্ণনা মতো হাজার-হাতের কালী মূর্তি তৈরি করা হয়।

প্রথমে মাটির মন্দির তৈরির পরিকল্পনা করা হয়। কিন্তু সেটাও তৈরির সামর্থ ছিল না আশুতোষের। এক সময় মন্দির নির্মাণে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে এগিয়ে আসেন স্থানীয় হালদার পরিবার এবং স্থানীয়েরা। মাটির প্রতিমা তৈরি করে বুদ্ধ পূর্ণিমার দিন প্রতিষ্ঠা হয় হাজার-হাত কালীমন্দির।

মন্দির নাকি এক বার ভেঙেও দেওয়া হয়। ফের মন্দির গড়ে তোলেন আশুতোষ। অনেক চেষ্টা করে পাকা মন্দির এবং সিমেন্টের প্রতিমা তৈরি হয়। বিশালাকার এই দেবী নীলবর্ণা। সিংহের উপরে ডান পা তুলে দাঁড়িয়ে দেবী। এখনও বংশানুক্রমে এই মন্দিরের সেবাইত আশুতোষ মুখোপাধ্যায়ের পরিবারের সদস্যরাই। বলির প্রথা নেই এই মন্দিরে।

শোনা যায়, প্রায় ৬০ বছর আগে শ্রাবণ মাসের শুক্লপক্ষের এক শুক্রবার দক্ষিণ ভারতের বাসিন্দা কৃষ্ণা সুব্রহ্মণ্যম এই মন্দিরে এসেছিলেন। তখন তিনি দৃষ্টিহীন। হাজার-হাত কালীর কাছে দৃষ্টি ফিরিয়ে দেওয়ার প্রার্থনা করেন। এক বছরের মধ্যে তিনি দৃষ্টিশক্তি ফিরে পান। তার পর থেকে তিনি মায়ের মাহাত্ম্য প্রচার শুরু করেন দক্ষিণ ভারত জুড়ে। এখন প্রচুর দক্ষিণ ভারতীয় শ্রাবণে শুক্লপক্ষের শুক্রবারে পুজো দেন।

এই মন্দিরে প্রতি দিন সকাল সাড়ে ৬টা, দুপুর ২টো এবং রাত সাড়ে ৮টায় পুজো হয়। রাতের আরতির পর প্রসাদ বিতরণ হয়। মায়ের নৈবেদ্যতে প্রতিদিন থাকে মাছ, ভাত, বিভিন্ন রকম ফল ও মিষ্টি। ভক্তদের দেওয়া প্রণামিতে মায়ের সেবা হয়। নিত্যপুজোর পাশাপাশি বুদ্ধ পূর্ণিমায় প্রতিষ্ঠা দিবসে এবং কালীপুজোর দিন বিশেষ হয় উৎসব। স্থানীয়দের মতে, হাজার-হাত কালী খুবই জাগ্রত, ভক্তিভরে কেউ কিছু চাইলে কালী কাউকে ফিরিয়ে দেন না।

করোনার কারণে দীর্ঘ ৬ মাস ভক্তদের জন্য বন্ধ ছিল মন্দির। বর্তমানে প্রতাপ মুখোপাধ্যায়-সহ অন্যেরা এই পুজো করে আসছেন। প্রতি বছর কালীপুজোর আগে মায়ের মূর্তিতে নতুন রং হলেও এ বছর অর্থের অভাবে তা করা সম্ভব হয়নি। তবুও কালীপুজোর দিন বিশেষ পুজো উপলক্ষে ভিড় নিয়ন্ত্রণ করতে সব রকমের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। গোটা মন্দির স্যানিটাইজ করা হয়েছে। পুজোর দিন বার বার স্যানিটাইজ করার ব্যবস্থা করা হয়েছে। পুজোর সময় সামাজিক দূরত্বের কথা মাথায় রাখা হবে বলে জানিয়েছেন প্রতাপ মুখোপাধ্যায়। তিনি জানান, এ বার উৎসব না হলেও প্রতি বারের মতো পুজো হবে নিষ্ঠা ভরে।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy