Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Marriage Ceremony

ছেলের বৌভাতে রক্তদানের আয়োজন

বছর তেরো আগে পড়শির জন্য তিনি নিজের একটি কিডনি দান করেছেন। বছর পাঁচেক আগে এলাকার গরিব পরিবারের ছেলেমেয়েদের জন্য তিনি স্কুল গড়েছেন।

নজির: চলছে রক্তদান। নিজস্ব চিত্র

নজির: চলছে রক্তদান। নিজস্ব চিত্র

নুরুল আবসার
শ্যামপুর শেষ আপডেট: ২৮ জানুয়ারি ২০২০ ০২:১৪
Share: Save:

বছর তেরো আগে পড়শির জন্য তিনি নিজের একটি কিডনি দান করেছেন। বছর পাঁচেক আগে এলাকার গরিব পরিবারের ছেলেমেয়েদের জন্য তিনি স্কুল গড়েছেন। বড় ছেলের বৌভাতে গরিবদের কম্বল বিতরণ করেছেন।

এ বার ছোট ছেলের বৌভাতে রক্তদান শিবিরের আয়োজন করলেন শ্যামপুরের বাড়গড়চুমুক গ্রামের শেখ সইদুল ইসলাম। নিমন্ত্রিতদের কাছ থেকে কোনও উপহার নিলেন না তাঁরা। উল্টে প্রত্যেককে নিজের গাঁটের কড়ি খরচ করে কেনা একটি করে মেহগনি চারা উপহার দিলেন সইদুল।

সোমবার বৌভাতে আয়োজিত ওই শিবিরে প্রথমেই রক্ত দিলেন সইদুলের ছোট ছেলে শেখ আবু খায়ের ওরফে পলাশ এবং বড় ছেলে শেখ জুবায়ের হোসেন ওরফে শিমুল। আর এই কাণ্ড-কারখানা দেখে তাজ্জব নববধূ, বিএ তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী নুর আঙিনা। বাগনানের চন্দ্রপুর গ্রামে তাঁর বাপের বাড়ি। বিয়ের কথাবার্তা যখন চলছে, তখন ঘুণাক্ষরেও টের পাননি বৌভাতের দিন এমন আয়োজন হবে। এ দিন সব দেখে তিনি মুগ্ধ। তাঁর কথায়, ‘‘এতটা ভাল লাগছে যে বোঝাতে পারব না। এখন বুঝতে পারছি এই বাড়ির ছেলেদের নাম কেন পলাশ-শিমুল। প্রকৃতি ও সমাজের সঙ্গে মিশে আছেন এই পরিবারের লোকজন। আমিও যেন নতুন বাড়িতে এসে প্রকৃতির সুবাতাস পাচ্ছি।’’

কিন্তু কেন এমন সমাজসেবা?

সরকারি কর্মী সইদুল বলেন, ‘‘ছেলেবেলায় খুব দারিদ্রের সঙ্গে লড়তে হয়েছে। মানুষের প্রয়োজনটা বুঝি। রক্তের অভাবে কত থ্যালাসেমিয়া রোগীর কষ্ট হয়। দুর্ঘটনাগ্রস্ত ব্যক্তিরও কত রক্তের প্রয়োজন হয়। তাই এই শিবিরের কথা ভাবি। পরিবারের সকলে রাজি হয়ে যায়। আর মেহগনি উপহার দিয়েছি পরিবেশের স্বার্থে। পরিবেশ বাঁচাতেই হবে। না হলে চরম সর্বনাশ হবে। এটা দেখে অন্যেরাও অনুপ্রাণিত হোন, এটাই আমাদের কাম্য।’’

গ্রামবাসীদের রক্তদানের প্রয়োজনীয়তা বোঝাতে সইদুলের পরিবার ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। পলাশ বাবার তৈরি প্রাথমিক স্কুলেই শিক্ষকতা করেন। স্কুলটি তাঁদের বাড়ির কাছেই। স্কুলেই এ দিন রক্তদান শিবির হয়। মোট ৪১ জন রক্ত দেন। এ দিন একদিকে যখন রক্তদান শিবির চলছিল, তখন অন্যদিকে বৌভাতের মণ্ডপে চলছিল খাওয়া-দাওয়া। নিমন্ত্রিতদের অনেকেও রক্ত দেন। রক্তদানে সহায়তা করে উলুবেড়িয়া মহকুমা হাসপাতাল।

হাসপাতালের সুপার সুদীপরঞ্জন কাঁড়ার এমন উদ্যোগের প্রশংসা করেছেন। তিনি বলেন, ‘‘এমন উদ্যোগ কোনও দিন‌ দেখিনি। সইদুল যে দিন এসে শিবিরের কথা বলেন, সঙ্গে সঙ্গে আবেদন মঞ্জুর করি। নিয়মমাফিক সহায়তা দিই। প্রশংসনীয় উদ্যোগ।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Marriage Ceremony Blood Donation Camp
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy