দীর্ঘ টালবাহানার পরে অবশেষে ই-রিকশার রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া শুরু হচ্ছে হাওড়া পুরসভা এলাকায়। হাওড়ায় টোটোর বদলে ই-রিকশা চালু করতে যে আবেদনপত্র গত মার্চ মাসে টোটো মালিকদের দেওয়া হয়েছিল, সেগুলি যাচাইয়ের কাজ শেষ হয়েছে বলে হাওড়া জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে। চলতি সপ্তাহেই উপযুক্ত আবেদনকারীদের তালিকা আঞ্চলিক পরিবহণ দফতরের অফিসে টাঙিয়ে দেওয়া হবে। সেই তালিকা অনুযায়ী ই-রিকশার রেজিস্ট্রেশন শুরু হবে।
রাজ্য সরকার টোটো অবৈধ ঘোষণা করে তার পরিবর্তে ই-রিকশা চালানোর নির্দেশ দিয়েছিল বহু আগেই। কিন্তু তা সত্ত্বেও জেলাগুলিতে টোটোর রমরমা বন্ধ করা
যায়নি। গত মাসে কলকাতা হাইকোর্ট নির্দেশ দেয়, যে সব জেলায় বেআইনি টোটো চলে সেখানে টোটোর রেজিস্ট্রেশন তিন মাসের মধ্যে শেষ করতে হবে। আদালতের সেই নির্দেশের পরেই কার্যত নড়েচড়ে বসেছে জেলা প্রশাসন ও আঞ্চলিক পরিবহণ দফতর। বিভিন্ন জেলায় ইতিমধ্যেই অবৈধ টোটো বন্ধ করতে কড়া ব্যবস্থা নিয়েছে প্রশাসন। টোটোর বাড়বাড়ন্তে নাজেহাল হাওড়া প্রশাসন প্রায় মাস ছয়েক আগে অবৈধ টোটো বাতিল করে ই-রিকশা চালু করার জন্য উদ্যোগী হয়। রীতিমত অস্থায়ী শিবির তৈরি করে হাওড়া সিটি পুলিশের সাহায্যে আবেদনপত্র বিলি করা হয়। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বিভিন্ন থানায় সেগুলি জমা নেওয়া হয়। ঠিক হয়েছিল, যত শীঘ্র সম্ভব আবেদনপত্রগুলি যাচাই করে ই-রিকশার রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া শুরু হবে। ব্যবস্থা করা হবে ব্যাঙ্ক লোন ও গতিধারা প্রকল্পে ভর্তুকির ব্যবস্থা।
কিন্তু এর মধ্যেই পঞ্চায়েত নির্বাচন পড়ে যাওয়ায় পুরো প্রক্রিয়া থমকে যায়। যদিও অভিযোগ, নির্বাচন মিটে যাওয়ার পরেও জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে অবৈধ টোটো বন্ধ করে ই-রিকশা চালানোর ব্যাপারে খুব একটা উদ্যোগী হতে দেখা যায়নি। এর ফলে গত ছ’মাসে অবৈধ টোটোর সংখ্যা হাওড়া পুরসভা এলাকায় আরও বেড়ে গিয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে। কিন্তু কেন এত দেরি?
হাওড়ার আঞ্চলিক পরিবহণ দফতরের এক কর্তা বলেন, ‘‘ই-রিকশার জন্য মোট ৫৭৮২টি আবেদনপত্র জমা পড়েছিল। প্রত্যেকটি আবেদনপত্রে টেম্পোরারি আইডেন্টিফিকেশন নম্বর বা টিন খতিয়ে দেখে ও ই-রিকশা কেনার যোগ্যতা বিচার করে চূড়ান্ত তালিকা তৈরি করতে সময় লেগেছে। তাছড়া আমাদের লোকজন কম। পঞ্চায়েত নির্বাচনেও অনেকটা সময় নষ্ট হয়েছে। এই সব কারণেই দেরি।’’
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, মোট ৮০টি রুটে ই-রিকশা চলবে। ঠিক হয়েছে, প্রত্যেকটি রুটে ৫০টির বেশি লাইসেন্স দেওয়া হবে না। প্রাথমিক ভাবে ঠিক হয়েছে, প্রথমে ১ থেকে ১০ নম্বর রুটে গাড়ির রেজিস্ট্রেশন শুরু হবে। শেষ হলে ফের ১০টি করে রুটের রেজিস্ট্রেশনের কাজ হবে। আঞ্চলিক পরিবহণ দফতরের এক কর্তা
বলেন, ‘‘এই পুরো প্রক্রিয়াটি সময়সাপেক্ষ। আমরা হিসেব করে দেখেছি, এক মাসে তিনশোর বেশি গাড়ি রেজিস্ট্রেশন করা যাবে না। এই হিসেবে চার হাজার গাড়ির রেজিস্ট্রেশন করতে বছর কেটে যাবে।। এ ছাড়াও রয়েছে একই রুটে ৫০টির বেশি ই-রিকশা চালাবার আবেদন। সেগুলিকেও লটারি করে ব্যবস্থা নিতে সময় লাগবে।’’
এ ব্যাপারে অতিরিক্ত জেলাশাসক (সাধারণ) অভিষেক তিওয়ারি বলেন, ‘‘দ্রুত দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজ শুরু করার চেষ্টা চলছে। আশা করা যায়, চলতি মাসে অনেকটা কাজ এগিয়ে যাবে।’’
এ দিকে জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ই-রিকশার রেজিস্ট্রেশন শুরু হলেই পুলিশ প্রশাসনকে সঙ্গে নিয়ে শহরে চলা অবৈধ টোটো বন্ধে ফের অভিযান শুরু হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy