লুঠপাট তো আছেই, দুষ্কৃতীদের নিজেদের মধ্যে লড়াই, প্রাণহানি— কিছুই বাদ যাচ্ছে না।
দুষ্কৃতীদের দৌরাত্ম্য ক্রমাগত বেড়ে চলায় আতঙ্ক তৈরি হয়েছে হাওড়ার ডোমজুড় এবং সাঁকরাইলের একাংশে। মূলত শলপ, অঙ্কুরহাটি, নাজিরগঞ্জ, আন্দুল প্রভৃতি এলাকার মানুষ এই উপদ্রবের জন্য পুলিশকেই দুষছেন। পুলিশের একাংশ এ জন্য দায়ী করেছে হাওড়া গ্রামীণ পুলিশ এবং কমিশনারেট-এর বিভাজনকেই।
গত মার্চ মাসে শলপ মণ্ডলপাড়ায় পুলিশের ছদ্মবেশে অমিত ঘোষাল নামে বছর ত্রিশের এক যুবকের বাড়িতে ঢুকে তাঁকে গুলি করে খুন করে তিন দুষ্কৃতী। অমিতের বিরুদ্ধেও এই এলাকাতেই খুন, খুনের চেষ্টা, তোলাবাজি-সহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কাজে জড়িত থাকার অভিযোগ ছিল। তদন্তে পুলিশ জানতে পারে যে দলের সঙ্গে থেকে অমিত অপরাধমূলক কাজকর্ম করত, সেখান থেকে বেরিয়ে সে আলাদা দল গড়ার চেষ্টা করে। তারই জেরে বিরুদ্ধ গোষ্ঠীর হাতে তাকে খুন হতে হয়। এই ঘটনায় অভিযুক্ত তিন জনকেই পুলিশ ধরে।
এর পরেই মাসখানেক আগে সাঁকরাইল থানা এলাকার আন্দুল রোডে গাড়ি থেকে টেনে নামিয়ে গুলি করে এক ব্যবসায়ীর হাত থেকে থেকে টাকার ব্যাগ ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে দুষ্কৃতীরা। তারা সকলেই ছিল ডোমজুড় এলাকার বাসিন্দা। এই ঘটনায় জড়িত আট অভিযুক্তকে দিঘা থেকে ফাঁদ পেতে ধরে পুলিশ। এর পরে নিবড়ায় কোনা এক্সপ্রেসওয়ের সেতুতে, শলপে মুম্বই রোডের উড়ালপুলে এই ধরনের অপরাধের বেশ কয়েকটি উদাহরণ রয়েছে। সব মিলিয়ে এই সব এলাকা ছিনতাইবাজ এবং তোলাবাজদের স্বর্গরাজ্য হয়ে উঠেছে বলে স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ।
হাওড়া জেলা গ্রামীণ পুলিশের কর্তাদের কেউ কেউ মনে করছেন, কমিশনারেট তৈরি হওয়ার পরে শহরে পুলিশের সংখ্যা বেড়েছে। বেড়েছে পুলিশের নজরদারিও। এক সময়ে শলপ এলাকার দুষ্কৃতীরা হাওড়া শহরে গিয়ে অপরাধ করে ফিরে আসত। নিজের এলাকায় তারা তেমন কিছু করত না। কিন্তু কমিশনারেট তৈরি হওয়ার পরে শহরে এই সব দুষ্কৃতীরা আর ঢুকতে পারছে না। নিজের এলাকাতেই অপরাধে জড়াচ্ছে। ডোমজুড়ে ছোটবড় নানা কারখানা হচ্ছে। বাড়বাড়ন্ত প্রোমোটিং ব্যবসার। অপরাধ জগতের সঙ্গে হাত মিলিয়ে তৈরি হয়েছে সিন্ডিকেট। চলছে তোলাবাজি। কারখানা মালিক বা প্রোমোটাররা অনেক সময়ে বাঁচার তাগিদে দুষ্কৃতীদের সঙ্গে রফা করে নিচ্ছেন। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে যাঁররা তা করছেন না, সেই সব কারখানা মালিক বা প্রোমোটারদের কাছে দুষ্কৃতীদের কোন গোষ্ঠী তোলাবাজি করবে, তা নিয়ে বিবাদ বাড়ছে। ফলে, খুনখারাপির মতো ঘটনা ঘটছে। হাওড়া কমিশনারেটের তাড়া খেয়ে ডোমজুড় এবং সাঁকরাইলের একাংশে ক্রমবর্ধমান এই দুষ্কৃতী তাণ্ডব পুলিশ ও প্রশাসনের কাছেও মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বিশেষ করে ডোমজুড় এবং সাঁকরাইল থানা এলাকায় পুলিশ কর্মী না বাড়ালে এই সব অপরাধমূলক কাজকর্ম নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন জেলা গ্রামীণ পুলিশের কর্তাদের একাংশ। তাঁদের দাবি, সমস্যাটি নিয়ে প্রশাসন এবং রাজনীতির উপরমহলেও একাধিকবার আলোচনা হয়েছে। তবে, সদ্য দায়িত্ব নেওয়া গ্রামীণ জেলা পুলিশ সুপার সুকেশ জৈন ডোমজুড় এবং সাঁকরাইল দু’টি থানা এলাকাতেই যথেষ্ট পুলিশ-কর্মী এবং অফিসার রয়েছেন বলে দাবি করেছেন। তিনি বলেন, ‘‘গত ছ’মাসের মধ্যে ডোমজুড় এবং সাঁকরাইল থানা এলাকায় যে দু’টি অপরাধের ঘটনা ঘটেছে, দু’টি ক্ষেত্রেই অভিযুক্তরা ধরা পড়েছে। যে সব এলাকায় অপরাধমূলক কাজ বেশি হয়, সেখানে আমরা অনেক বেশি নজরদারি করি। ফলে, দুষ্কৃতীরা খুব একটা সুবিধা করতে পারছে না।’’
ডোমজুড়ের বিধায়ক তথা রাজ্যের সেচমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘দুষ্কৃতীদের কোনও মতেই প্রশ্রয় দেওয়া যাবে না। যে হেতু গ্রামীণ এলাকায় পুলিশের পরিকাঠামোগত সুবিধা কমিশনারেটের থেকে কিছুটা কম, তা আরও শক্তিশালী করার জন্য সংশ্লিষ্ট জায়গায় বলেছি। নতুন পুলিশ সুপার এসেছেন। তাঁর সঙ্গেও এ ব্যাপারে আলোচনা করব।’’
কিন্তু স্থানীয় বাসিন্দাদের আতঙ্ক যাচ্ছে না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy