Advertisement
১৯ ডিসেম্বর ২০২৪
Cyclone Amphan

চোখের সামনে উড়ে যাচ্ছিল ঘরের টালি

বছর সাতান্নর প্রৌঢ় বলেন, ‘‘ঝড়ের কী শব্দ! যেন উড়োজাহাজ যাচ্ছিল মাথার উপর দিয়ে। একের পর এর এক গাছ পড়ছিল।

সস্ত্রীক মহম্মদ ইলিয়াস। —নিজস্ব িচত্র

সস্ত্রীক মহম্মদ ইলিয়াস। —নিজস্ব িচত্র

নুরুল আবসার
বাগনান শেষ আপডেট: ২৫ মে ২০২০ ০৬:৩০
Share: Save:

ছিটেবেড়ার ঘরের চালের টালিগুলো যেন খেলনার মতো উড়ে যাচ্ছিল!

আজ, সোমবার খুশির ইদ। কিন্তু আনন্দ নয়, বাগনানের খাজুরনান গ্রামের খান মহম্মদ ইলিয়াসকে এখনও তাড়া করছে আমপান-আতঙ্ক। বুধবার রাতের ওই ঝড় তাঁর ঘর-সংসার ছারখার করে দিয়েছে।

বছর সাতান্নর প্রৌঢ় বলেন, ‘‘ঝড়ের কী শব্দ! যেন উড়োজাহাজ যাচ্ছিল মাথার উপর দিয়ে। একের পর এর এক গাছ পড়ছিল। আমার পাশের বাড়িতে গাছ পড়ে। তারপরেই হুড়মুড় শব্দে বাড়িটার একটি অংশ পড়ে গেল পুকুরে। চোখের সামনে দেখলাম, আমার ঘরের টালিগুলো একের পর এক উড়ে যাচ্ছে। সরকারি কোনও সহায়তা পাইনি। নিজের রোজগার নেই। অনেক কষ্ট করে ছিটেবেড়ার ঘরটা তৈরি করেছিলাম তার এই অবস্থা দেখে বুক ফেটে যাচ্ছিল। কিন্তু ঝড়ের তাণ্ডবে কাঁদতেও ভুলে গিয়েছিলাম।’’

গোটা হাওড়া জেলাকেই লন্ডভন্ড করে দিয়ে গিয়েছে আমপান। পাঁচ দিন কেটে গেলেও এই ব্লকের সর্বত্র এখনও ছড়িয়ে রয়েছে তার ধ্বংসলীলার চিহ্ন। রাস্তার দু’দিকে বড় বড় গাছ শিকড় থেকে উপড়ে পড়ে রয়েছে। পাকা বাড়ির চিলেকোঠার টিনের চাল উড়ে গিয়ে পড়েছে প্রায় ৫০০ মিটার দূরে। কাঁচা বাড়িগুলি ভেঙে গিয়েছে। ইলিয়াসের বাড়ি পড়ে মুগ-বেনাপুর পঞ্চায়েত এলাকায়। বাগনান-২ ব্লকের মধ্যে এই পঞ্চায়েতে ক্ষতি তুলনামূলক ভাবে বেশি হয়েছে।

ইলিয়াসের তিন মেয়ে। তিন জনেই বিবাহিত। বড় মেয়ে-জামাই অবশ্য তাঁর কাছেই থাকেন। ইলিয়াস এবং তাঁর স্ত্রী মনিরাকে দেখভাল করেন। বড় মেয়ে-জামাইয়ের ঘরের দেওয়াল পাকা। ইলিয়াস জানান, সে দিন বিকেল চারটে পর্যন্ত ঝোড়ো হাওয়া বইছিল। নিজেদের কুঁড়েঘরেই তাঁরা ছিলেন। ধীরে ধীরে হাওয়া পরিণত হল ঝড়ে। সন্ধে ৬টা পর থেকে রুদ্রমূর্তি ধারণ করে প্রকৃতি। কুঁড়েঘর খেলনার মতো দুলতে থাকে। স্ত্রীকে নিয়ে পাশে মেয়ের কাছে চলে যান ইলিয়াস। হাত-পা গুটিয়ে বসে থাকা ছাড়া আর কিছুই করার ছিল না তাঁর।

ঝড় থেমে যাওয়ার পরে রাতেই তিনি কুড়িয়ে বাড়িয়ে কিছু টালি উদ্ধার করে এনে ঘরের কাঠামোতে বসিয়েছেন। তাতেও সবটা ঢাকা পড়েনি। ত্রিপল কিনে পরের দিন ঢেকে দেন বাকি অংশ। কিন্তু এখন ইলিয়াসের চিন্তা, ঘরটির আমূল সংস্কারের টাকা কোথা থেকে আসবে? তিনি পেশায় এমব্রয়ডারি শিল্পী। কিন্তু এই শিল্পে মন্দা দেখা দেওয়ায় কাজ বন্ধ। এখনকার মতো তাপ্পি দিয়ে কোনওমতে বসবাস করতে পারলেও ভবিষ্যতে কী হবে তা নিয়ে বেশ চিন্তায় আছেন ইলিয়াস।

প্রৌঢ় জানান, সরকারি সহায়তা বলতে পঞ্চায়েতের লোকজন এসে নাম লিখে নিয়ে গিয়েছেন। কী পাবেন, কবে পাবেন সে বিষয়ে কিছুই জানেন না তিনি। তাঁর কথায়, ‘‘একটি করে ত্রিপল পেলেও অন্তত চালটি পুরো ঢেকে দিতে পারি। ভাঙা টালির জোড়াতালি দেওয়া ছাউনিতে কোনও ভরসা আছে? এখন ঘর মেরামতির খরচ করার ক্ষমতাও আমার নেই। আবার যদি বৃষ্টি আসে কোথায় যাব?’’ বিডিও সুমন চক্রবর্তী জানান, হাজার হাজার বাড়ি পুরো বা আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তার পূর্ণাঙ্গ তালিকা তৈরি হচ্ছে। ক্ষতিপূরণের ব্যাপারে সরকার সিদ্ধান্ত নেবে।

আপাতত সরকারের সিদ্ধান্তের দিকে তাকিয়েই দিন কাটছে ইলিয়াসের।

অন্য বিষয়গুলি:

Cyclone Amphan Bagnan
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy