Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
market

দূরত্ব বজায় রাখতে হরেক চিন্তা বাজারে

ওষুধের দোকানের সামনে নির্দিষ্ট দূরত্ব অন্তর গোল দাগ দিয়ে দেওয়া হচ্ছে, মানুষ যাতে সেখানে দাঁড়ান।

সচেতন: ঘিঞ্জি এলাকায় চলছিল বাজার। কামারপুকুর ডাকবাংলো আনাজ বাজার সরানো হল শ্রীপুর খেলার মাঠে। চুন দিয়ে জায়গা ভাগ করে দিচ্ছে প্রশাসন। বৃহস্পতিবার ছবি দু’টি তুলেছেন সঞ্জীব ঘোষ

সচেতন: ঘিঞ্জি এলাকায় চলছিল বাজার। কামারপুকুর ডাকবাংলো আনাজ বাজার সরানো হল শ্রীপুর খেলার মাঠে। চুন দিয়ে জায়গা ভাগ করে দিচ্ছে প্রশাসন। বৃহস্পতিবার ছবি দু’টি তুলেছেন সঞ্জীব ঘোষ

নিজস্ব প্রতিবেদন
চুঁচুড়া শেষ আপডেট: ২৭ মার্চ ২০২০ ০৭:৫২
Share: Save:

জিরাট বাজারে মুদি দোকানের সামনে দেওয়ালে লিফলেট সাঁটানো হয়েছে বৃহস্পতিবার। তাতে লেখা— ‘ব্যাগে ফর্দ আর ফোন নম্বর লিখে বাড়ি চলে যান। ফর্দ মিলিয়ে জিনিসপত্র ব্যাগে ভরে ফোন করে ডেকে নেওয়া হবে’।

করোনাভাইরাস ঠেকাতে দরকার সামাজিক দূরত্ব। এ কথাই বলছেন বিশেষজ্ঞরা। কিন্তু এক শ্রেণির মানুষের তা কানে ঢুকছে কই! যত দিনের সম্ভব খাদ্যসামগ্রী জোগাড় করে রাখতে তাঁরা হামলে পড়ছে‌ন দোকান-বাজারে। এই জমায়েত দূর করতেই জিরাট ব্যবসায়ী সমিতির তরফে নয়া পন্থা নেওয়া হয়েছে। অর্জুন সাহা নামে এক দোকানি বলেন, ‘‘আমরা বিভিন্ন বাড়িতেও ওই লিফলেট বিলি করছি।’’

ওই ব্যবসায়ী সমিতির কেন্দ্রীয় কমিটির সম্পাদক প্রতুলচন্দ্র সাহা বলেন, ‘‘ফর্দ দেখে মাল ব্যাগে ভরে ক্রেতাকে ফোনে ডেকে নিচ্ছেন মুদি দোকানি। এতে অবাঞ্ছিত ভিড় এড়ানো যাচ্ছে। মানুষেরও অসুবিধা হচ্ছে না।’’ স্থানীয় বাসিন্দাদের অনেকেই মানছেন, এই পদ্ধতি অনেক বেশি নিরাপদ। তবে মুদি দোকানে ভিড় কমলেও আনাজ এবং মাছের দোকানের ছবিটা এ দিনও পাল্টায়নি।

শুধু জিরাট নয়, হুগলির বিভিন্ন জায়গাতেই বাজার-হাটে ভিড় কমানোর ব্যাপারে চিন্তাভাবনা চলছে। ওষুধের দোকানের সামনে নির্দিষ্ট দূরত্ব অন্তর গোল দাগ দিয়ে দেওয়া হচ্ছে, মানুষ যাতে সেখানে দাঁড়ান। বলাগড়ের বিডিও সমিত সরকার বলেন, ‘‘আনাজ কিনতে অনেকে বাজারে যাচ্ছেন। আমরা আনাজ-বিক্রেতাদের দূরত্ব বজায় রাখার জন্য সাদা দাগ দিয়ে দিয়েছি।’’

জিরাটের কায়দায় বিভিন্ন পুর-এলাকার মুদির দোকানেও বেচাকেনার পদ্ধতি বদলানোর নির্দেশ দিয়েছে পুলিশ। দোকানিদের বলা হয়েছে, ক্রেতাদের থেকে ফর্দ জমা নিয়ে নিতে হবে। ফর্দের নীচে ক্রেতার ফোন নম্বর লিখে নিতে হবে। সামগ্রী ব্যাগে ভরা হয়ে গেলে এক এক করে ক্রেতাদের ডেকে তা দিতে হবে।

চন্দননগরের পুলিশ কমিশনার হুমায়ুন কবীর বলেন, ‘‘আমরা খেয়াল করছি, শুধুমাত্র বাড়ির বাইরে বের হওয়ার জন্য অনেকে মুদি দোকানের মালপত্র বারে বারে অযথা কিনতে যাচ্ছেন। তাই ভিড় ঠেকাতে নানা পন্থা নিতে হচ্ছে আমাদেরও। মানুষকে সচেতন হতে হবে। বুঝতে হবে, এখন বিশেষ পরিস্থিতি চলছে।’’

জেলার বিভিন্ন দোকান-বাজারে পুলিশের তরফে আনাজ-বিক্রেতাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, পর্যাপ্ত দূরত্ব বজায় রেখে বসতে হবে। বেলা পর্যন্ত যাতে জটলা না হয়, সে জন্য বেলা ১১টার পরে বাজারে চড়াও হচ্ছে পুলিশ। চন্দননগর কমিশনারেটের এক কর্তা বলেন, ‘‘আমরা বাজারের উপর নজর রাখছি। বেলা ১১টার পরে আনাজ-বিক্রেতাদের বসতে দেওয়া হবে না।’’

অনেক জায়গায় বাজারের কাছাকাছি থাকা মাঠের সন্ধান করা হচ্ছে, যেখানে অনেকটা তফাতে বসতে পারবেন আনাজ বা মাছ বিক্রেতারা। পুলিশের সুপারিশ অনুযায়ী আরামবাগ শহরের পুরাতন সব্জি বাজার, গৌরহাটি বাজার এবং কামারপুকুর ডাকবাংলো বাজার অন্যত্র সরানো হচ্ছে। আজ, শুক্রবার থেকে শহরের শতাব্দীপ্রাচীন সব্জি বাজারটি উঠে আসছে বয়েজ হাইস্কুল মাঠে। গৌরহাটি বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন বাজারটি সরছে গৌরহাটি উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠে। কামারপুকুর ডাকবাংলো সংলগ্ন বাজার সরে যাচ্ছে শ্রীপুর মাঠে।

আরামবাগে মুড়ির দাম নিয়ে ক্রেতাদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। লকআউট ঘোষণার আগে যে মুড়ির দাম ছিল কেজিপ্রতি ৩৭ টাকা, এখন তা ৪০-৪২ টাকায় কিনতে হচ্ছে। পুলিশ অবশ্য এ দিন অভিযান চালিয়ে মুড়ি ব্যবসায়ীদের সতর্ক করে দেয়। যদিও দাম বেড়ে যাওয়ার পিছনে ব্যবসায়ীদের যুক্তি, গ্রাম থেকে চাল সরবরাহ কমেছে। তাই স্থানীয় বাজার থেকে অপেক্ষাকৃত বেশি দামের চাল কিনে মুড়ি ভাজতে হচ্ছে। সেই কারণেই এই পরিস্থিতি। শ্রীরামপুরেও মুড়ির জোগান কমেছে।

শেওড়াফুলি হাট এবং বৈদ্যবাটী বাজারে এ দিন মাছের দাম ছিল চড়া। বুধবার যে চারা মাছ ২২০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে, বৃহস্পতিবার তা বিকিয়েছে ২৫০ টাকায়। শেওড়াফুলির এক মাছ বিক্রেতার কথায়, ‘‘পুকুরে অনেকেই জাল দিচ্ছেন না। তাই চারা মাছ কম আসছে। বড় মাছের আমদানিও কিছুটা কমেছে। তাই দাম বাড়ছে।’’ চন্দননগরের লক্ষ্মীগঞ্জ বাজার, চুঁচুড়ার মল্লিক কাশেম হাট, ব্যান্ডেলের অন্নপূর্ণা বাজারে মাত্রাছাড়া ভিড় দেখা গিয়েছে এ দিন।

অন্য বিষয়গুলি:

Jirat জিরাট Novel Coronavirus
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy