Advertisement
০৩ নভেম্বর ২০২৪
Coronavirus in Howrah-Hooghly

করোনাকে হারাতে সাহায্যের হাত সাফাইকর্মীদের

করোনাভাইরাসের থাবায় সমাজের এখন ‘দুঃসময়’। এই পরিস্থিতিতে সাফাইকর্মীদের ভূমিকায় আপ্লুত পুরপ্রধান অরিন্দম গুঁইন।

 পাশে:  সাহায্য তুলে দেওয়া হল পুরপ্রধানের হাতে। নিজস্ব চিত্র

পাশে:  সাহায্য তুলে দেওয়া হল পুরপ্রধানের হাতে। নিজস্ব চিত্র

প্রকাশ পাল
বৈদ্যবাটী শেষ আপডেট: ২৮ এপ্রিল ২০২০ ০৩:১০
Share: Save:

দিন পনেরো আগে কথাটা পেড়েছিলেন সাফাইকর্মী স্বপন দাস। তাঁর ইচ্ছের কথা শুনেই বৈদ্যবাটী পুরসভার স্যানিটারি ইন্সপেক্টর (এসআই) কৃষ্ণেন্দু কুণ্ডু বাকিদের কাছে প্রস্তাব দিলেন। প্রায় সকলেই হাতে হাত মেলালেন। তহবিলে জমল ৮৩ হাজার টাকা। বৈদ্যবাটী শহরের সাফাইকর্মীদের জমানো এই অর্থ পুরপ্রধানের মাধ্যমে পাঠানো হল মুখ্যমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে।

করোনাভাইরাসের থাবায় সমাজের এখন ‘দুঃসময়’। এই পরিস্থিতিতে সাফাইকর্মীদের ভূমিকায় আপ্লুত পুরপ্রধান অরিন্দম গুঁইন। তাঁর কথায়, ‘‘মানুষ যখন উৎসব পালন করেন, তখনও ওঁরা শহরকে পরিচ্ছন্ন করার কাজে লেগে থাকেন। আজ লকডাউনে সবাই গৃহবন্দি। সাফাইকর্মীরা নিরলস ভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। আজ সচেতনতা এবং সমাজ-ভাবনার যে নিদর্শন ওঁরা সামনে রাখলেন, তাকে কুর্নিশ।’’

পুরসভা সূত্রের খবর, সাফাই বিভাগে প্রায় সাড়ে পাঁচশো কর্মী আছেন। প্রায় একশো জন স্থায়ী বা অস্থায়ী শ্রমিক। বাকি সাড়ে চারশো জন কাজ করেন দৈনিক মজুরির ভিত্তিতে। সাধারণ কর্মীরা পান দৈনিক ১৭০ টাকা। গাড়িচালক, সুপারভাইজার ২০০ টাকা। ঠেলাগাড়িতে বাড়ি বাড়ি আবর্জনা সংগ্রহ, রাস্তা থেকে জঞ্জাল তোলা, কম্পোজ়ড প্ল্যান্টে আবর্জনা পৌঁছে দেওয়া, নর্দমা সাফাই, মশার লার্ভা মারার তেল ছড়ানো-সহ নানা কাজ করতে হয়। এখন করোনা মোকাবিলায় জীবাণুনাশকও ছড়াতে হচ্ছে। স্বল্প রোজগারে কষ্টে চলে তাঁদের সংসার।

কৃষ্ণেন্দুবাবু বলেন, ‘‘সে দিন সাতসকালে কম্পোজ়ড প্ল্যান্টে আবর্জনা ফেলতে এসে স্বপনদা বললেন, তাঁর এক দিনের মজুরি যেন মুখ্যমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে পাঠানোর ব্যবস্থা করি। স্তম্ভিত হয়ে গিয়েছিলাম। পরে ওঁর সহকর্মীদের বলতে তাঁরাও এগিয়ে আসেন। কেউ ৫০ টাকা, কেউ ১০০ টাকা, কেউ ২০০ টাকা, কেউ বা ৫০০ টাকা দিয়ে যান। ওঁদের মানসিকতায় গর্ব হচ্ছে।’’ তিনি জানান, প্রায় সাড়ে চারশো সাফাইকর্মী সাহায্য করেছেন। ওই টাকা সোমবার পুরপ্রধানের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে।

বৈদ্যবাটী খড়পাড়ার বাসিন্দা স্বপনবাবু আগে ছাপাখানায় কাজ করতেন। ওই শিল্পের দুরবস্থার কারণে বছর দশেক আগে সাফাইকর্মী হিসেবে কাজে যোগ দেন। দৈনিক ১৭০ টাকা রোজগার। লকডাউনের সময় কোনও রকমে চলছে ৯ জনের যৌথ সংসার। তিনি বলেন, ‘‘আমাদের অর্থকষ্ট রয়েছে, এটা ঠিক। কিন্তু, এখন কঠিন সময়। বাঁচলে সবাই একসাথে বাঁচব।’’ তাঁর কথায়, ‘‘একদিন টিভিতে দেখলাম, মুখ্যমন্ত্রী সাহায্যের আবেদন করছেন। তখনই ঠিক করি, নিজের এক দিনের মজুরি তুলে দেব। বাড়ি বাড়ি আবর্জনা সংগ্রহ করি। আমরা জানি বাস্তব পরিস্থিতিটা কি।’’

চন্দনা গায়েন নামে আর এক সাফাইকর্মী বলেন, ‘‘যে যেটুকু পেরেছি দিয়েছি। টাকাটা সমাজের কাজে লাগবে ভেবে ভাল লাগছে।’’ তাপস দত্ত, গোপাল বন্দ্যোপাধ্যায়, মোস্তাকিন আনসারি, বিনোদ ভুঁইয়া— সকলেই খুশি সমাজে নিজেদের ‘সামান্য’ অবদান রাখতে পেরে।

পুরপ্রধান জানান, লকডাউন-পর্বে অসহায় মানুষের বাড়িতে গিয়ে খাদ্যসামগ্রী পৌঁছে দিয়ে এসেছেন সাফাইকর্মীদের কেউ কেউ। প্রকৃত অর্থেই তাঁরা সমাজ-বন্ধুর কাজ করছেন।

অন্য বিষয়গুলি:

Coronavirus in Howrah-Hooghly Baidyabati
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE