অচেনা: রথের দিনে যাত্রার বুকিংয়ে নেই চেনা ভিড়। মঙ্গলবার গোঘাটের কামারপুকুর চটিতে। ছবি: সঞ্জীব ঘোষ
আশঙ্কা ছিলই। তা সত্যি-ও হল।
রথযাত্রার দিন কামারপুকুর চটিতে যাত্রাপালার বায়না করা হয় প্রত্যেক বছর। আসেন ‘নায়েক’রা। ভিড়ে থিকথিক করে কামারপুকুর চটি। অস্থায়ী কার্যালয় খুলে বসেন যাত্রাদলের মালিকেরা। এমনটাই চলে আসছে বহু দিন ধরে। এ দিনও সেখানে অস্থায়ী কার্যালয় খুলে বসেছিলেন তাঁরা। কিন্তু অপেক্ষাই সার। বায়না করতে আসেননি কোনও নায়েক। করোনা আবহে তাই ছেদ পড়ল যুগ-যুগ ধরে চলে আসা প্রথায়।
লকডাউন জারি থাকায় গত চৈত্র, বৈশাখ এবং জৈষ্ঠে যাত্রা হয়নি কোনও জায়গাতেই। যাঁরা বায়না করেছিলেন, তাঁরা তা বাতিল করে দেন। ‘আনলক’-পর্ব শুরু হলেও কাটেনি করোনা-আতঙ্ক। ফলে, যাত্রাপালা বায়না করতে এ বার আদৌ কেউ আসবেন কিনা, তা নিয়ে সংশয় ছিল যাত্রাদলগুলির মধ্যে। তা সত্যি হওয়ার পরে এক যাত্রাদলের মালিকের মন্তব্য, “গভীর সঙ্কটে পড়েছে কামারপুকুরের শতাব্দী প্রাচীন যাত্রাশিল্প।”
প্রত্যেক বছরের মতো এ দিনও কামারপুকুর চটিতে খুলেছিল বিভিন্ন অপেরার ভাড়ায় নেওয়া অস্থায়ী কার্যালয়গুলি। সাধারণত সকাল ৮ টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত যাত্রাপালার বায়না করা হয়। এ দিনের ছবিটা ছিল সম্পূর্ণ উল্টো। সারাদিন খাঁ-খাঁ করেছে সেই কার্যালয়গুলি। ব্যাজার মুখে শিল্পতীর্থ অপেরার মালিক এবং যাত্রাশিল্পী অভিজিৎ রায় বললেন, “গত বছর রথের দিন আমার ২৬টি বায়না হয়েছিল। এ বার একাটিও হয়নি। নায়েক বন্ধুরা কেউ আসেননি।” টানা ৩৬ বছর যাত্রাশিল্পের সঙ্গে যুক্ত ‘নিউ রায় অপেরা’র মালিক শান্তি রায় বলেন, “যাত্রাদলগুলি টিকে থাকবে কিনা, তা নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে। যাত্রা না হলে খাব কী! বছরে মেরে-কেটে ১২০ থেকে ১৫০ দিন কাজ হয়। এ বার লকডাউন-এর ফলে বায়না হল না। দল টিকিয়ে রাখব কী করে?”
উদ্বেগ ধরা পড়ে 'বঙ্গমাতা অপেরা'র মালিক জয়ন্ত পাইন এবং সব্যসাচী মৌলিক, নীলিমা বৈরাগ্য ও স্বপন মণ্ডলের মতো বিভিন্ন অপেরার মালিক এবং শিল্পীদের গলায়।
বায়না না হওয়ায় দুঃশ্চিন্তায় শিল্পীরাও। শিবশঙ্কর অপেরার শিল্পী শ্যামল মাজির কথায়, ‘‘বছরে ১৫০-১৮০ দিন যাত্রাপালা করে উপার্জন করি। বাকি দিনগুলিতে দিনমজুরের কাজ করে সংসার চালাই। এ বার সারা বছরই দিনমজুরি করতে হবে মনে হচ্ছে।” তিনি জানান, এক রাত যাত্রা করে শিল্পীরা ৩০০-৭০০ টাকা পারিশ্রমিক পান। যাত্রাশিল্পীদের একাংশের অভিযোগ, শিল্পকে বাঁচাতে সরকার বা পঞ্চায়েতের তরফে কোনও উদ্যোগ চোখে পড়েনি।
যাত্রাশিল্পের এই সঙ্কটের কথা স্বীকার করে তৃণমূল পরিচালিত কামারপুকুর পঞ্চায়েতের প্রধান তপন মণ্ডল বলেন, “লোকপ্রসার প্রকল্পের আওতায় শিল্পীদের জন্য অনুদান দেওয়া হয়। এখানকার যাত্রাশিল্পীরা যাতে ওই প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত হতে পারেন, তার চেষ্টা করব। এ ছাড়া কামারপুকুরে যাত্রাশিল্পের ঐতিহ্য ধরে রাখতে পঞ্চায়েত স্তরে পরিকাঠোমো গড়ে তোলার পরিকল্পনাও নেওয়া হচ্ছে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy