প্রতীকী ছবি।
মানুষের মনে করোনা-আতঙ্ক কতটা গভীর, তা হাড়ে হাড়ে টের পেলেন চণ্ডীতলার রাজেশ মাঝি এবং তাঁর পরিবারের লোকেরা।
মুম্বই থেকে ৮৫ হাজার টাকা দিয়ে অ্যাম্বুল্যান্স ভাড়া করে ‘হৃদ্রোগে’ মৃত স্ত্রী মিঠুর দেহ নিয়ে এসে দু’দফায় মানুষের বাধায় দাহ করতে পারলেন না রাজেশ। মুম্বইতে ফিরে গিয়েই সারতে হল সৎকার।
বুধবার দুপুরে ফোনে রাজেশ বলেন, ‘‘যা পরিস্থিতিতে পড়েছিলাম, বলার নয়। লোকজনের গালিগালাজের মুখে পড়তে হয়েছিল। পুলিশও সাহায্য করেনি। বাধ্য হয়েই ফিরে আসি। খুব খারাপ লেগেছে। এখানে (মুম্বই) দেহ দাহ করতে কোনও সমস্যা হয়নি। স্ত্রীর করোনা সংক্রমণ থাকলে পুলিশ আমাদের যেতে দিত?’’
রাজেশের বাড়ি চণ্ডীতলার আঁইয়ায়। তিনি কর্মসূত্রে মুম্বইয়ের চুনাভাটিতে থাকেন। সেখানে সোনা-রুপোর কাজ করেন। পরিবারের লোকেরাও সেখানে থাকেন। মাস চারেক আগে তাঁর সঙ্গে মশাট বাগপাড়ার বছর একুশের মিঠু বাগের বিয়ে হয়। বিয়ের পরে মিঠুও মুম্বইতে থাকছিলেন।
রাজেশ জানান, গত শুক্রবার সন্ধ্যায় স্ত্রী হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন। খিঁচুনি আসে। ঘাড়, হাত বেঁকে যায়। মুখ দিয়ে গ্যাঁজলা বেরোয়। হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকেরা মিঠুকে মৃত ঘোষণা করে জানান, হৃদ্রোগে মৃত্যু। ‘ডেথ সার্টিফিকেট’ও দেন।
রাজেশের দাবি, মিঠুর বাপের বাড়ির লোকেরা তাঁদের দেহ মশাটে নিয়ে আসতে বলেন। সেইমতো অ্যাম্বুল্যান্সে তাঁরাও রওনা হন। কিন্তু মাঝপথে মিঠুর বাপের বাড়ির
লোকেরা ফোনে তাঁদের জানান, দেহ মশাটে আনার দরকার নেই। রবিবার দুপুরে রাজেশরা হুগলিতে পৌঁছে দেহ নিয়ে শ্রীরামপুরের কালীবাবু শ্মশানঘাটে যান।
কিন্তু মুম্বইয়ে (এই শহর যে রাজ্যের রাজধানী, সেই মহারাষ্ট্রেই করোনা সংক্রমণ সবচেয়ে বেশি) যুবতী মারা গিয়েছেন জেনে স্থানীয় বাসিন্দারা হইচই শুরু করেন। তাঁরা জানিয়ে দেন, এখানে দেহটি দাহ করা চলবে না। খবর পেয়ে পুলিশ আসে। স্থানীয় পুর-কাউন্সিলর সুপ্রীতি মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘এখন যা পরিস্থিতি, করোনা নিয়ে মানুষ ভীষণ ভীত। তাই এলাকাবাসী দেহ দাহ করতে বাধা দেন। বিষয়টা পুলিশকে জানাই। তার পরে বাড়ির লোকেরা দেহ নিয়ে ফিরে যান।’’
রাজেশ জানান, এর পরে তাঁরা দেহ নিয়ে বৈদ্যবাটীর হাতিশালা ঘাটে যান। সেখানেও বাধার মুখে পড়তে হয়। ততক্ষণে বিকেল গড়িয়ে যায়। বেগতিক বুঝে তাঁরা সিদ্ধান্ত নেন, মুম্বইতে ফিরে যাবেন। সন্ধ্যায় ওই অ্যাম্বুল্যান্সেই দেহ নিয়ে মুম্বই রওনা হন।
মৃতার বাবা গণেশ বাগ বলেন, ‘‘মেয়ের দেহ গ্রামে না-আনার পরামর্শ দিয়েছিলেন পড়শিরা। প্রশাসনের থেকে সহযোগিতা পাইনি। তাই দেহ এখানে আনতে জামাইকে নিষেধ করি।’’ চণ্ডীতলা-১ ব্লকের বিডিও নরোত্তম বিশ্বাসের দাবি, ‘‘দেহটি দাহ করার ব্যবস্থা করার ব্যাপারে আমাদের কাছে কেউ আবেদন করেননি।’’
এই পরিস্থিতি নিয়ে হুগলি জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষ সুবীর মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘মৃত্যুর সঠিক কারণ জেনে সংশ্লিষ্ট সবাইকেই সংবেদনশীল হতে হবে। করোনায় কারও মৃত্যু হলে সংশ্লিষ্ট রাজ্য সরকারই সৎকারের ব্যবস্থা করে। অন্য ক্ষেত্রে এক রাজ্য থেকে অন্য রাজ্যে দেহ নিয়ে যেতে হলে দুই রাজ্যের মধ্যে সমন্বয়ের ব্যবস্থা করা যায় কিনা, সেটাও ভাবা যেতে পারে।’’
(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy