ছবি: তাপস ঘোষ।
দিন কয়েক আগের বিকেল।
গঙ্গা পাড়ের এ তল্লাটে একে একে দোকানপাট খুলছে। প্রতিদিনের মতো ভিড় বাড়ছে স্ট্র্যান্ডে।
এক চা-দোকানি সবে গুছিয়ে বসেছেন। জিনস্ পরা সদ্য তরুণী বাড়িয়ে দিলেন নোট— ‘‘এক প্যাকেট সিগারেট দিন তো কাকা।’’
শুনে চা খেতে আসা বৃদ্ধ বিলক্ষণ চমকালেন। তরুণী চলে যেতেই বৃদ্ধের গজগজ, ‘‘এখন নেশা করার কোনও বয়স নেই। আগে এ সব কম ছিল।’’ দোকানি বলে উঠলেন, ‘‘যে যা খুশি প্রাণ চায় খাক। কোনও ঝামেলা না হলেই হল।’’
ঘটনাস্থল চন্দননগরের ঐতিহ্যবাহী স্ট্র্যান্ড। শুধু অল্পবয়স্ক মেয়েদের প্রকাশ্যে সিগারেট খাওয়া নয়, গঙ্গার ধারের এই বাঁধানো চত্বর এখন প্রকাশ্যে নানা রকম নেশার অবাধ ঠিকানা হয়ে দাঁড়িয়েছে— এই অভিযোগ বেশ কিছুদিন ধরেই তুলছেন সেখানে সান্ধ্য-ভ্রমণে আসা মানুষজন। তাঁদের বক্তব্য, ঠান্ডা পানীয়ের বোতলে মিশিয়ে নেওয়া হচ্ছে মদ। রাত বাড়লে হুল্লোড় বাড়ছে। অবাধে চলছে কুকথা। মজুত থাকছে অন্য নেশার সামগ্রীও। এতে সমস্যায় পড়ছেন সেই সব মানুষ, যাঁরা স্বাস্থ্যের কারণে চিকিৎসকের পরামর্শে এখানে প্রতিদিন হাঁটতে আসেন। কিন্তু পুরসভা বা প্রশাসন কোনও ব্যবস্থা নিচ্ছে না বলে অভিযোগ।
এক সময়ের ফরাসি উপনিবেশ এই শহরের স্ট্যান্ডের রানিঘাট থেকে লঞ্চ ছাড়ে। ও পাড়ে উত্তর ২৪ পরগনার জগদ্দল। ঘাট লাগোয়া চন্দননগরের মহকুমাশাসকের অফিস, এসডিপিও অফিস, চন্দননগর থানা। শহরের প্রশাসনিক আধিকারিকদের অফিসের নাকের ডগায় অবাধে চলছে নেশা। আসরের হোতা অল্পবয়স্ক ছেলেমেয়েরা। সন্ধ্যা নামলেই প্রচুর সাইকেল এবং মোটরবাইক জড়ো হয়ে যাচ্ছে স্ট্র্যান্ডে। তার জেরে যানজটও প্রতিদিনের ঘটনা। গির্জা লাগোয়া এলাকায় হাঁটাই দায় হয়। এলাকার প্রবীণ নাগরিকদের সংস্থার পক্ষ থেকে পুলিশ, থানা এবং মহকুমাশাসকের কাছে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবিতে ইতিমধ্যেই স্মারকলিপি দেওয়া হয়েছে।
শহরের প্রবীণ চিকিৎসক প্রবুদ্ধ ঘোষের আক্ষেপ, ‘‘স্ট্র্যান্ড আমাদের গর্ব। রাজ্যের অন্য এলাকার লোকজন তো বটেই, শহরে বিদেশিরা এলে তাঁদেরও প্রধান গন্তব্য স্ট্র্যান্ড। আমরা বারেবারেই মেয়রকে অনুরোধ করেছি এখানে যে সব মোটরবাইক, সাইকেল আসে তার জন্য বিকল্প স্ট্যান্ড তৈরি করা হোক। সেই প্রস্তাব কার্যকর হচ্ছে কই? স্ট্র্যান্ডে ইদানীং অনুষ্ঠানের অনুমতি পর্যন্ত দিয়ে দিচ্ছে প্রশাসন। যা শহরের ঐতিহ্য বিরোধী।’’
শুধু স্ট্র্যান্ডেই নয়, অল্পবয়সীরা শহরের অনেক ক্লাবের বন্ধ দরজার আড়ালেও নেশায় ডুবছে বলে আক্ষেপ রয়েছে অনেক প্রবীণের। তাঁরা মনে করছেন, রাজ্য সরকারের সৌজন্যে বহু ক্লাব অর্থ সাহায্য পেয়েছে। সেই টাকা কতটা খেলাধুলো বা সমাজের গঠনমূলক কাজে লাগল তা সরকারের খোঁজ নেওয়া উচিত। নজরদারি চালানো জরুরি। মানুষের করের টাকা উচ্ছৃখলতায় লাগানো উচিত নয়। ইদানীং বাড়তি উপদ্রব হিসেবে তাঁরা চিহ্নিত করেছেন শহরের উৎসব ভবনগুলি। তাঁদের অভিযোগ, ওই সব ভবনে অনুষ্ঠানের নামে তারস্বরে মাইক বাজানো হয়। রাত পর্যন্ত চলে নাচগান। বাগবাজার এলাকার বাসিন্দা দীপঙ্কর দে বলেন, ‘‘সবারই কষ্ট হয়। মূলত প্রবীণ মানুষেরা জোরে মাইক বা ডিজে-র আওয়াজে অসুস্থ হয়ে পড়েন। কিন্তু প্রশাসনকে জানিয়েও কোনও ফল হয়নি।’’
পুরসভার মেয়র রাম চক্রবর্তী অবশ্য দাবি করেছেন, ‘‘প্রতিটি অভিযোগ গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করা হবে। আসলে অনেক সময় নানা দাবি থাকে। কিন্তু প্রশাসনেরও তো কিছু সীমাবদ্ধতা থাকে!’’
এখন দেখার, মেয়রের আশ্বাসে শহরবাসীর সুরাহা কোন পথে হয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy