বিপজ্জনক: মাথার উপর এ ভাবে ঝোলা বিদ্যুতের তার, এই বাজারের চেনা ছবি । ছবি: সুব্রত জানা
অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা নেই, নেই ন্যূনতম পরিকাঠামো। পাশের পুকুর বুজেছে আবর্জনায়। আগুন লাগলে খবর দিতে হবে ৬০ কিলোমিটার দূরে উলুবেড়িয়া দমকল কেন্দ্রে। উদয়নারায়ণপুর বাজারের ব্যবসায়ীদের আশঙ্কা, তেমন আগুন লাগলে ইঞ্জিন আসতে আসতেই পুড়ে খাক হয়ে যাবে গোটা বাজার।
প্রায় একশো বছর আগে বসত মাছের বাজার। সঙ্গে কিছু আনাজ। এখন সেই পুরনো মাছ-আনাজের বাজার ঘিরে একের এক পাকা দোকান গড়ে উঠেছে। দশকর্মা থেকে মুদিখানা, এমনকি জামাকাপড়ের দোকানও রয়েছে সেখানে। নেই শুধু আগুন নিয়ে সতর্কতা। ছোট এলাকায় গড়ে ওঠা বাজারে গ্যাস জ্বালিয়ে ঘুগনি, আলুরদম, চা তৈরিও হয় প্রতিদিন।
উদয়নারায়ণপুরের অন্যতম বড় এই বাজারে করোগেটের তিনটি বিশাল টিনের ছাউনির নীচে বসে আনাজ ও মাছের বাজার। ইদানীং সেখানে কিছু গৃহস্থালি জিনিপত্রও বিক্রি হচ্ছে। আর টিনের ছাউনির বাইরের অংশে গড়ে উঠেছে অন্তত পাঁচশো পাকা দোকান। ফলে সঙ্কীর্ণ হয়ে গিয়েছে পরিসর। ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, চারপাশে অবিন্যস্ত দোকান তৈরি হওয়ায় আনাজ বাজারে দিনের বেলাও অন্ধকার। সারাদিন জ্বলে বৈদ্যুতিক আলো। অস্থায়ী ভাবে তারের মাথায় ঝুলিয়ে দেওয়া হয় বাল্ব। ফলে চতুর্দিকে তারের জাল। অভিযোগ, বিদ্যুৎবণ্টন সংস্থাও নিয়মিত মিটার পরীক্ষা করে যায় না।
বাজারের ভিতরে অগ্নিনির্বাপক কোনও যন্ত্রের দেখা মেলে না। এমনকি যে ভাবে ব্যবসা চলে তাতে দমকল এসেও বিশেষ কিছু উপকার করতে পারবে বলে মনে করেন না এলাকার বাসিন্দারা। ইঞ্জিন এলাকায় ঢুকতেই পারবে না। তারপরও বিস্তর কাঠখড় পুড়িয়ে আগুন নেভানোর ব্যবস্থা করতে হবে তাদের, বলছেন ক্রেতারা। সম্প্রতি কলকাতার বাগড়ি মার্কেটে তেমনই ছবি দেখেছেন তাঁরা।
প্রমোদ বিশ্বাস নামে এক ক্রেতা বললেন, ‘‘আগে ভরসা ছিল বাজারের পিছনে সারদাচরণ হাইস্কুল সংলগ্ন একটি পুকুর। কিন্তু দিনের পর দিন বর্জ্য জমে সেই পুকুরও ভরে গিয়েছে। বালতি করে আগুন নেভাতে চাইলেও জল মিলবে না।’’
সমস্যার কথা স্বীকার করেছেন ব্যবসায়ীরা। কিন্তু জানিয়েছেন তাঁদের কিছুই করার নেই। বাজারটি এখনও ব্যক্তিগত মালিকানাধীন। প্রায় একশো বছর আগে তা তৈরি করেছিলেন স্থানীয় জমিদার। দোকানঘরগুলির মালিক এখনও তাঁরাই। জমিদারদের উত্তরসূরীরা কলকাতায় থাকেন।
ব্যবসায়ী এবং দোকানদারদের একটা বড় অংশের প্রশ্ন, তাঁরা কার কাছে অসুবিধার কথা জানাবেন? ব্যবসায়ীরা সকলেই নিয়মিত ভাড়া দেন। বাজার কর্তৃপক্ষের তরফে নিয়মিত বাজার চত্বর ঝাঁট দেওয়া হয়— এই মাত্র।
ব্যবসায়ী সুনীল মুখোপাধ্যায়, কার্তিক রায়েরা বলেন, ‘‘এখানে কোনও দিন আগুন লাগেনি। তবে যদি সত্যিই এমন ঘটনা ঘটে তবে আমরা পথে বসব। আর বাজার চলার সময় হলে, পালানোর পথও পাব না। বহু প্রাণহানি ঘটবে।’’ উদয়নারায়ণপুর ব্যবসায়ী সমিতির তরফে অরুণ রক্ষিত বলেন, ‘‘পুকুরটার সংস্কার করা হলেও অনেকটা সুরাহা হয়। কিন্তু কে করবে!’’
জানা গিয়েছে ওই পুকুরও স্থানীয় জমিদার পরিবারেরই সম্পত্তি ছিল। তাঁরা দান করে দিয়েছেন সারদাচরণ হাইস্কুলকে। ফলে সংস্কারের কাজও করতে পারেন স্কুল কর্তৃপক্ষই। সারদাচরণ ইনস্টিটিউট-এর প্রধান শিক্ষক প্রশান্ত জানার কথায়, ‘‘পুকুর সাফ করার টাকা নেই। প্রশাসন এগিয়ে এলে ভালো হয়।’’ উদয়নারায়ণপুরের বিডিও জয়জিৎ লাহিড়ি বলেন, ‘‘একটা কেঁচো সার তৈরির প্রকল্প শুরু হবে শীঘ্রই। সেখানেই তুলে আনা হবে ওই বাজার। তখন আশা করি সমস্যা অনেকটাই কমে যাবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy