তারকেশ্বরে সুরেন্দ্র সিংহ অহলুওয়ালিয়া ও সিদ্ধার্থনাথ সিংহকে ঘিরে বিক্ষোভ তৃণমূলের। ছবি: দীপঙ্কর দে।
রাজ্যে আলু-সঙ্কট নিয়ে রাজনীতি অব্যাহতও।
চাষিদের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে রবিবার হুগলির নালিকুল এবং তারকেশ্বরে তৃণমূলের বিক্ষোভের মুখে পড়ল বিজেপির প্রতিনিধি দল। তাদের দেখানো হল কালো পতাকা। দু’জায়গায় চাষিদের সঙ্গে সে ভাবে কথাই বলতে পারলেন না বিজেপি নেতারা। পুরশুড়ায় চাষিদেরও তৃণমূল হটিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে বলে অভিযোগ। তৃণমূল অভিযোগ মানেনি।
অতিরিক্ত ফলনের জেরে রাজ্যে এ বার আলুর দাম পাচ্ছেন না চাষিরা। ইতিমধ্যেই আত্মঘাতী হয়েছেন ১১ জন। তার মধ্যে রয়েছেন রাজ্যের অন্যতম আলু উৎপাদক জেলা হুগলির দু’জন। রবিবার সেই হুগলিরই সিঙ্গুর, নালিকুল, তারকেশ্বর এবং পুরশুড়ায় চাষিদের সঙ্গে কথা বলতে আসেন বিজেপির কেন্দ্রীয় সম্পাদক তথা রাজ্যে দলের পর্যবেক্ষক সিদ্ধার্থনাথ সিংহ, দার্জিলিংয়ের সাংসদ সুরেন্দ্র সিংহ অহলুওয়ালিয়া, দলের রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহ, বিধায়ক শমীক ভট্টাচার্যেরা। তাঁদের আটকানোর জন্যই তৃণমূল কয়েক জায়গায় কালো পতাকা দেখায় বলে অভিযোগ করেন বিজেপি সাংসদ সুরেন্দ্র সিংহ অহলুওয়ালিয়া। অভিযোগ উড়িয়ে মন্ত্রী বেচারাম মান্নার দাবি, চাষিদের পাশে দাঁড়াতে নয়, বিজেপি নেতারা ঘোলাজলে মাছ ধরতে এসেছিলেন। তারই প্রতিবাদ হয়েছে।
রাজ্যে আলুচাষিদের আত্মহত্যার ঘটনা মমতারই তৈরি বলে এ দিনও কটাক্ষ করেন সিদ্ধার্থনাথ। কৃষকদের অভাব-অভিযোগ নিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট দেওয়া হবে এবং বিষয়টি লোকসভা-বিধানসভাতেও তোলা হবে জানিয়ে সিদ্ধার্থনাথ বলেন, “বাংলার আলুচাষিরা কেন দাম পাচ্ছেন না, তাঁদের কেন আত্মহত্যা করতে হচ্ছে, রাজ্য সরকারকেই এর জবাব দিতে হবে।” দাম না পাওয়ায় চাষিরা আত্মঘাতী হচ্ছেন বলে প্রথম থেকেই মানেনি রাজ্য সরকার। কৃষি বিপণনমন্ত্রী অরূপ রায়ের দাবি, “রাজ্য ইতিমধ্যেই চাষিদের থেকে ৫০ হাজার টন আলু কিনেছে। চাষিদের বস্তার দাম এবং পরিবহণ খরচও দেওয়া হয়েছে। ভবিষ্যতেও সরকার সাধ্যমতো চাষিদের পাশে দাঁড়াবে।”
বিজেপির প্রতিনিধি দলটি এ দিন প্রথমে সিঙ্গুরে যায়। ঘনশ্যামপুর মোড়ে চাষিরা নেতাদের বলেন, “আলু কেনা হচ্ছে না। মাঠের আলু মাঠেই পড়ে রয়েছে। এ বার ফড়েদেরও দেখা মেলেনি। সরকারও কথা দিয়ে আলু কেনেনি।”
নালিকুলে তৃণমূল কর্মী-সমর্থকেরা কালো পতাকা নিয়ে ১০০ দিনের কাজ প্রকল্প বন্ধ হওয়ার কারণ জানতে চেয়ে বিজেপি প্রতিনিধি দলের সামনে বিক্ষোভ দেখান। দলটির একই অবস্থা হয় তারকেশ্বরের রামনারায়ণপুর, চাঁপাডাঙাতেও। সব শেষে বিজেপি নেতারা পুরশুড়ার নিমডাঙ্গিতে যান। সেখানে আগে থেকে শ’দেড়েক চাষি জড়ো হয়েছিলেন। স্থানীয় বিজেপি নেতাদের অভিযোগ, চাষিরা যাতে প্রতিনিধি দলের সামনে কিছু বলতে না পারেন, সে জন্য তৃণমূলের ছেলেরা মোটরবাইকে করে এসে লাঠি নিয়ে তাঁদের প্রথমে হটিয়ে দেয়। তৃণমূল অবশ্য এই অভিযোগ মানেনি। ওই ঘটনা বিজেপির গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জের বলে তাদের দাবি।
বিজেপি নেতারা দুপুরে সেখানে পৌঁছে অবশ্য কিছু চাষির সঙ্গে কথা বলেন। অনেক চাষি সমবায়ের ঋণ মকুবের দাবিও তোলেন। বিজেপির রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহ বলেন, “সমবায় ব্যাঙ্কের ঋণ মকুবের বিষয়টা সম্পূর্ণ রাজ্য সরকারের। আমরা সরকারের কাছে এ নিয়ে আবেদন করব। চাপ সৃষ্টি করব।” কৃষি বিপণনমন্ত্রী অরূপবাবু দাবি করেছেন, ঋণ মকুব রাজ্যের এক্তিয়ারে নেই। তিনি বলেন, “ঋণ মকুবের বিষয়টি পুরোপুরি কেন্দ্র সরকারের অধীন। রাহুলবাবুরা কেন্দ্র সরকারের কাছে গিয়ে চাষিদের ঋণ মকুবের জন্য দরবার করুন।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy