অঘটন: এই ঘটনাস্থলের কােছই স্কুল। ফাইল ছবি
স্কুলের ভিতরে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা চলছে। কিছুটা দূরে হুলস্থূল কাণ্ড। লাঠি হাতে আস্ফালন, মারামারি, মোটরবাইক পোড়ানো, বোমাবাজি— কিছুই বাদ নেই। পরিস্থিতি সামলাতে নাজেহাল পুলিশ।
দিন কয়েক আগে হুগলির খানাকুলের একটি স্কুলের সামনের ছবিটা ছিল এমনই। পঞ্চায়েত ভোটের মনোনয়ন জমা দেওয়া ঘিরে যেখানে স্কুলের অবস্থানও ভুলেছেন রাজনীতির কারবারিরা! পরীক্ষার মধ্যেই মনোনয়ন নিয়ে অশান্তির ছায়া পরীক্ষার্থীদের উপরও পড়ছে বলে অভিযোগ।
মনোনয়ন জমা দেওয়াকে কেন্দ্র করে হুগলির বিভিন্ন জায়গায় গোলমাল শুরু হয়েছে। শিক্ষক-শিক্ষিকাদের একাংশের বক্তব্য, এতে পরীক্ষার্থীদের অনেকেরই মানসিক চাপ পড়ছে। সিঙ্গুরের একটি স্কুলের প্রধান শিক্ষকের কথায়, ‘‘যাঁরা নির্বাচনে যোগ দিচ্ছেন, তাঁদের বাড়ির ছেলেমেয়েরা তো পরীক্ষা দিচ্ছে। অশান্তির আবহে পরীক্ষার্থীদের টেনশন স্বাভাবিক।’’
এই চাপ ভালভাবেই টের পেয়েছেন শ্রীরামপুর-উত্তরপাড়া ব্লকের এক পরীক্ষার্থী। মেয়েটির এক আত্মীয়া বিরোধী দলের পঞ্চায়েত সদস্য। দিন কয়েক আগে তাঁদের বাড়িতে হামলার অভিযোগ ওঠে তৃণমূলের লোকজনের বিরুদ্ধে। মেয়েটির কথায়, ‘‘পরের দিন পদার্থবিদ্যা পরীক্ষা ছিল। রাত পৌনে বারোটা নাগাদ বই বন্ধ করে সবে শুয়েছি। তখনই ওরা হামলা করে। শাবল দিয়ে জানলা, গেট ভাঙার চেষ্টা করতে থাকে। প্রচণ্ড ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম।’’
বুধবার সকালে খানাকুলের রাজহাটি বন্দর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মাত্র ২০০ মিটারের ব্যবধানে ভীমতলায় তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর সংঘর্ষ বাধে। মোটরবাইক পোড়ানো হয়। লাঠি, বাঁশ এবং রড নিয়ে মারামারি হয়। বোমাও পড়ে। মেয়েকে ওই পরীক্ষাকেন্দ্রে পৌঁছে দিতে এসেছিলেন বন্দর এলাকার বাসিন্দা রত্না মালিক। তাঁর অভিযোগ, “জীবনের এত বড় একটা পরীক্ষা দিচ্ছে ছেলেমেয়েরা। কিন্তু ওদের তাতে কোনও হেলদোল নেই। স্কুলের কাছেই আগুন জ্বালাচ্ছে, বোমা ফাটাচ্ছে!”
আরামবাগ মহকুমার নানা জায়গায় গোলমালের জন্য শাসক দলের দিকেই অভিযোগের তির। বিরোধী দলের উপর হামলার পাশাপাশি নিজেদের গোষ্ঠী সংঘর্ষেও অশান্তি ছড়াচ্ছে বলে অভিযোগ। প্রশাসনিক দফতর লাগোয়া রাস্তা ছাড়িয়ে আশপাশে তা ছড়িয়ে পড়ছে। তাতে আতঙ্কিত পরীক্ষার্থী, অভিভাবক এবং বিভিন্ন স্কুল কতৃপক্ষ।
খানাকুলের এক স্কুলের শিক্ষকের অভিযোগ, “ভীমতলার গোলমাল মুহূর্তের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ল প্রায় পুরো খানাকুলে। পরীক্ষার্থীরা সিঁটিয়ে গিয়েছিল।” রামনগর, রাঙ্গামাটি, শাবলসিংহপুর প্রভৃতি জায়গার পরীক্ষার্থীদের বক্তব্য, “রাস্তায় লাঠি হাতে লোকগুলোকে ঘুরতে দেখে বাড়ি ফিরতে ভয় হচ্ছিল।”
সিপিএম নেতা, প্রাক্তন কলেজ শিক্ষক সুদর্শন রায়চৌধুরীর কথায়, ‘‘শিক্ষা সম্পর্কে এখনকার শাসক দলের শ্রদ্ধা নেই। সে জন্যই এমন বাচালতা। এতে পরীক্ষার্থীরা সমস্যায় পড়লেও ওদের যায় আসে না।’’ মন্ত্রী তথা জেলা তৃণমূলের কার্যকরী সভানেত্রী অসীমা পাত্রের মন্তব্য, ‘‘এমন অভিযোগ পাইনি। কোথায় জমায়েত হচ্ছে, তাও জানা নেই।’’
আরামবাগ মহকুমার কয়েকটি স্কুল কতৃপক্ষ অবশ্য বিষয়টি প্রশাসনকে জানিয়েছেন। এসডিপিও (আরামবাগ) কৃশানু রায় বলেন, “ভীমতলার ঘটনার পর প্রতিটি পরীক্ষাকেন্দ্রে পুলিশি নিরাপত্তা বাড়নো হয়েছে। সংলগ্ন এলাকাতেও টহলদারি জোরদার করা হয়েছে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy