ঘোষণা ছিলই। বুধবার রাজ্য মন্ত্রিসভা আনুষ্ঠানিক ভাবে বালি পুরসভাকে হাওড়া কর্পোরেশনের সঙ্গে সংযুক্ত করার সিদ্ধান্ত নিল। শুধু বালি পুর এলাকাই নয়, সংযুক্ত হবে কয়েকটি গ্রাম পঞ্চায়েতও। পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম বলেন, ‘‘হাওড়ার কাছে থেকেও উন্নয়নের দিক থেকে উপেক্ষিত ছিল বালি। ছোট পুরসভা হওয়ায় যে কোনও প্রকল্প রূপায়ণের জন্য রাজ্য সরকারের মুখাপেক্ষী হয়ে থাকত। হাওড়া কর্পোরেশনের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যাওয়ায় এখন ওই এলাকার উন্নয়ন ত্বরান্বিত হবে।’’ পুরমন্ত্রীর আরও ব্যাখ্যা, জনসংখ্যার বিচারে হাওড়া এখন মেগাসিটির মর্যাদা পাবে। ফলে কেন্দ্রীয় সরকার, বিশ্ব ব্যাঙ্ক, এশীয় উন্নয়ন ব্যাঙ্ক প্রভৃতি আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে অনুদান এবং বিভিন্ন ধরনের ঋণ পেতে সুবিধা হবে। আরও অনেক বেশি টাকা উন্নয়নের কাজে লাগানো যাবে।
তবে সরকারি ভাবে উন্নয়নের কথা বলা হলেও এর পিছনে রাজনৈতিক তাগিদও কম নয় বলে অনেকের মত। এক বছর আগের লোকসভা ভোটের ফলাফলের অঙ্কে এক সময়ের ‘বাম-দুর্গ’ বালিতে ফলাফলের নিরিখে ২০১১-র বিধানসভা ভোট থেকেই বামেদের জমি আলগা হয়েছে। বিধানসভা তো বটেই এমনকী গত লোকসভা নির্বাচনের নিরিখেও বালিতে এগিয়েছে তৃণমূল। ফলে আপাত ভাবে বালিতে স্বস্তিতে থাকার কথা শাসক দলের।
কিন্তু কাঁটার মতো বিঁধছে তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব। গত এক বছরে শাসক দলের উঁচু থেকে নিচু তলার মধ্যে একের পর এক গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে এসেছে। বিশেষত হাওড়ার জেলা সভাপতি (শহর) অরূপ রায়ের সঙ্গে বালির বিধায়ক সুলতান সিংহের দূরত্ব। যত দিন এগিয়েছে, সেই দূরত্ব বাড়তে বাড়তে এমন জায়গায় পৌঁছেছে যে পুরভোটে তার আঁচ পড়ার আশঙ্কা কিন্তু শাসক দলের ভিতরে থেকে গিয়েছে।
শুধু অরূপ রায়ের সঙ্গে সুলতান সিংহের বিরোধ হলে, শীর্ষ নেতৃত্ব হয়তো বা সামাল দিতে পারতেন। কিন্তু গোদের উপর বিষ ফোঁড়ার মতো যুক্ত হয়েছে দলের নিচুতলার একাধিক গোষ্ঠীর আত্মপ্রকাশ। তাই বালি পুরসভার ভোট যত এগিয়ে এসেছে, শাসক দল বালি পুরসভার ভোট আলাদা না করার সিদ্ধান্তেই এগিয়েছে। বালির এক তৃণমূল কাউন্সিলর শ্যামা পরভিন এক বছর আগেই এই সিদ্ধান্তের প্রকাশ্যে বিরোধিতা করেন। তাঁকে তখন দল থেকে শোকজ পর্যন্ত করা হয়। এই ঘটনার প্রেক্ষিতেই বিজেপি এবং সিপিএম নেতৃত্ব মনে করেছে, রাজনৈতিক অভিসন্ধিতেই শাসক দল নিজের দলের কাউন্সিলরের কথা শুনতেও রাজি হয়নি।
রাজনৈতিক মহলের বিশ্লেষণ, গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব শুধু চোরাবালি হয়ে ওঠাই নয়, তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বকে কাজে লাগিয়ে বেলুড় এবং লিলুয়ার মতো অবাঙালি এলাকায় তলে তলে বিজেপি নিজেদের ক্ষমতা অনেকটাই বাড়িয়ে ফেলেছে। এই জায়গাগুলিতে বিজেপি যে তৃণমূলের ভোট কাটবে, তা নিশ্চিত। বিশেষত বেলুড় এবং লিলুয়ার ১৪টি আসনে। তেমনই বালির ১ থেকে ১২ এবং ১৪ নম্বর ওয়ার্ড তৃণমূলের দখলে যাবে। কিন্তু বাকি ৯টি আসনে কে জিতবে, তা শাসক দলও স্পষ্ট করতে পারছে না।
এই দুই পরিস্থিতির মোকাবিলায় ভোটের অঙ্কের হিসেবে বালিকে হাওড়া পুরসভার সঙ্গে যুক্ত করাই সহজ রাস্তা। বর্তমানে হাওড়া কর্পোরেশনের ৫০টি ওয়ার্ডের মধ্যে ৪৪টিই তৃণমূল কংগ্রেসের দখলে।
বিশ্লেষকদের মতে, সেক্ষেত্রে বালি পুরসভাকে হাওড়ার সঙ্গে অন্তর্ভুক্ত করার পরে ভোট হলেও শাসক দলের ক্ষতির সম্ভাবনা কম। কারণ, প্রশাসনিক ব্যাখ্যা, বালি পুরসভা হাওড়ার সঙ্গে যোগ হলে তার আসনসংখ্যা ৩৫ থেকে কমে ১৪ কিংবা ১৫ হতে পারে। সেক্ষেত্রে ভোটে যে ক’টি আসনই তৃণমূল পাক, ভোটের অঙ্কের হিসেবে আখেরে সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকবে শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসেরই।
ঠিক যেমনটা হয়েছিল ১৯৮৫ সালে, বাম সরকারের আমলে। সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়ার এই অঙ্কের হিসেবেই যাদবপুর, বেহালাকে জুড়ে দেওয়া হয় কলকাতা পুরসভার সঙ্গে।
এ দিকে, হাওড়া কর্পোরেশনের সঙ্গে বালি পুরসভাকে যুক্ত করার সিদ্ধান্ত ঘোষণার পরে সামনে এসেছে বিধাননগর পুরসভার সঙ্গে রাজারহাট-গোপালপুর পুরসভাকে যুক্ত করে কর্পোরেশন গঠন করার বিষয়টিও। এক্ষেত্রেও মৌখিক ভাবে ঘোষণা হয়েছে। তবে, সরকারি ভাবে কোনও পদক্ষেপ এখনও করা হয়নি। পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম এ দিন বলেন, ‘‘বিষয়টি আমাদের মাথায় রয়েছে। এখন বালি পুরসভা নিয়ে সিদ্ধান্ত হল। যথাসময়ে রাজারহাট-গোপালপুর পুরসভা নিয়েও সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy