বাস চালানো আর লাভজনক নয়। দাবি বাস-মালিকদের একাংশের।
‘মৃত বাসরুট’-এর তালিকাটা ক্রমেই দীর্ঘ হচ্ছে হুগলিতে। দীর্ঘ হচ্ছে ধুঁকতে থাকা বাসরুটের সংখ্যাও।
জ্বালানি তেলের দাম বাড়ছে। বাড়ছে রুট-ভাঙা অটো এবং টোটোর দাপট। সাঁড়াশি আক্রমণে আর যুঝে উঠতে পারছে না জেলায় দীর্ঘদিনের গণ-পরিবহণ ব্যবস্থার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম বাস। বন্ধ হচ্ছে রুট। পথে বেরিয়ে বাস না-পেয়ে দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন গরিব মানুষ।
অটো-টোটোর ভাড়া ঠিক করে মালিক-চালকদের স্থানীয় সংগঠন। কিন্তু বাস ভাড়া ঠিক করে সরকার। সমস্যার জন্য সরকারি নিয়ম-নীতিকেই দুষছেন বাস-মালিকদের একাংশ। তাঁদের দাবি—সরকার যে ভাড়া বেঁধে দিচ্ছে, তাতে বাস চালানো লাভজনক নয়। তাই বন্ধ করে দিতে হচ্ছে। আদালতের নির্দেশ সত্ত্বেও অটো-টোটোতে সরকারি কোনও নিয়ন্ত্রণ নেই। গন্তব্যে পৌঁছতে যাত্রীদের বেশি ভাড়া গুনতে হচ্ছে।
জেলা বাস-মিনিবাস মালিক সংগঠনের কার্যকরী সভাপতি দেবব্রত ভৌমিকের খেদ, ‘‘টোটো আর রুট-ভাঙা অটোর সংখ্যা বাড়ছে। সে দিন সামনে, যখন মেমারি থেকে উত্তরপাড়া— জিটি রোডে একটিও বাস চলবে না।’’ নিতই ঘোষ নামে জেলার এক বাস-মালিক বলেন, ‘‘শ্রীরামপুর-ডোমজুড় রুটে চালানোর জন্য ২০১৬-তে একটি মিনিবাস কিনেছিলাম। মাস ছ’য়েক ধরে রুট বন্ধ। বাস চালিয়ে লাভ হচ্ছিল না। প্রশাসনের কাছে অন্য রুটের পারমিটের আবেদন করেও পাইনি। ঋণ নিয়ে বাস কিনেছিলাম। এখনও ঋণ শোধ হয়নি।’’
বাস-শিল্পে সঙ্কটের কথা মানছেন জেলা আঞ্চলিক পরিবহণ অধিকর্তা শুভেন্দুশেখর দাসও। তিনি বলেন, ‘‘এখন বাসে যাত্রী কম। তাই বাস ক্রমেই অলাভজনক হয়ে পড়েছে। বাস চালানোর ক্ষেত্রে বর্ধিত তেলের দামের সমস্যা রয়েছেই। পুরনো বাস চালানোর খরচও অনেক বেশি। সব মিলিয়েই এই পরিস্থিতি।’’
শ্রীরামপুর-বাগবাজার ৩ নম্বর রুটে কয়েক বছর আগেও ৬৯টি বাস চলত। এখন চলে সাকুল্যে তিনটি। চুঁচুড়া-পান্ডুয়া (ভায়া মহানাদ, ব্যান্ডেল স্টেশন) পাঁচটি বাস চলত। দু’বছর ধরে ওই রুট উঠেই গিয়েছে। মগরা স্টেশন থেকে জিরাট পর্যন্ত সাতটি বাস চলত। এখন এই রুটেও বাস চলে না। গত দু’বছরে আরামবাগে ছ’-সাতটি বাসরুট কমে দুই-তিনে ঠেকেছে। আরামবাগ থেকে মুথাডাঙা, গোতান ও কাবলে, দামিন্যার ১৬ বাই ২০ রুটের মালিকেরা বাস বন্ধ করে দিয়েছেন।
এমন উদাহরণ আরও রয়েছে। জেলার এক বাস-মালিকের দাবি, ২০০৫ সালে হুগলিতে প্রায় ১২০০ বাস চলত। লোকসানের বহর বাড়ায় এখন চলে শ’পাঁচেক। রুট ভেঙে চলা অটোর সমস্যা ছিলই। তার উপরে টোটোর দৌরাত্ম্য় বাসের কফিনে পেরেক পুঁতে দিয়েছে। টোটোর দৌরাত্ম্যে ক্ষুব্ধ সাধারণ মানুষও। অভিযোগ, প্রশাসন বা বিভিন্ন পুরসভার তরফে বারবার টোটো নিয়ন্ত্রণে আশ্বাস দেওয়া হলেও কাজ হয়নি। শ্রীরামপুরে কয়েকশো টোটো পুরসভা কয়েক মাস আগে রং করে। পুর-কর্তৃপক্ষ জানান, নির্দিষ্ট এলাকা ছাড়া টোটো চললেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কিন্তু ব্যবস্থা শিকেয়। উল্টে শহরের ঘিঞ্জি রাস্তায় টোটো ঢুকে যানজট বাড়াচ্ছে। স্টেশন সংলগ্ন তিন নম্বর রুটের পুরনো বাসস্ট্যান্ডের একাংশ টোটোর দখলে চলে গিয়েছে।
যাত্রিসংখ্যা যে ভাবে বাড়ছে, তাতে রুট-ভাঙা অটো এবং টোটোতে সরকারি নিয়ন্ত্রণ থাকলে বাস শিল্পের নাভিশ্বাস উঠত না বলে মনে করছেন অনেকে। শ্রীরামপুর থেকে উত্তরপাড়া— ৩ নম্বর বাসে এখনও ১৮ টাকায় যাতায়াত করা যায়। টোটোতে পড়বে অন্তত ৬০ টাকা। অটোতে ৪৮ টাকা। কারণ, অটো-টোটো বদলাতে হবে।
বাস শিল্পের সর্বনাশ হলেও অটো-টোটোর পৌষ মাস!
তথ্য সহায়তা: প্রকাশ পাল ও পীযূষ নন্দী
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy