Advertisement
০৬ নভেম্বর ২০২৪

হোমে মারধর, নালিশ বাড়ি-পালানো বালকের

সাড়ে ১২ বছরের ওই বালক শ্রীরামপুরের একটি ফ্ল্যাটে থাকে। ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ে। তার পরিবার ও প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ছেলেটির বাড়ি থেকে পালানোর প্রবণতা রয়েছে।

—নিজস্ব চিত্র।

—নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শ্রীরামপুর শেষ আপডেট: ১৪ মে ২০১৯ ০২:০৮
Share: Save:

বাড়ি থেকে পা‌লানো শ্রীরামপুরের এক বালক আশ্রয় পেয়েছিল মগরার একটি বেসরকারি হোমে। সেখানে তার উপরে নির্যাতনের অভিযোগ উঠল। বালকের বাবার ওই অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্তের আশ্বাস দিয়েছে হুগলি জেলা চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটি (সিডব্লিউসি)। হোম কর্তৃপক্ষ অভিযোগ মানেননি।

সাড়ে ১২ বছরের ওই বালক শ্রীরামপুরের একটি ফ্ল্যাটে থাকে। ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ে। তার পরিবার ও প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ছেলেটির বাড়ি থেকে পালানোর প্রবণতা রয়েছে। চল্লিশ বারেরও বেশি সে বাড়ি থেকে পালিয়েছে। বিভিন্ন সূত্রে তাকে ফিরিয়ে আনা হয়। গত ২০ এপ্রিল সে স্কুলে গিয়ে আর বাড়ি ফেরেনি। পরে জানা যায়, ব্যান্ডেল স্টেশন থেকে মগরার ওই হোমের লোকজন‌ তাকে উদ্ধার করেছেন। তাকে সিডব্লিউসি-তেও হাজির করানো হয়। তার বাবার আবেদনের ভিত্তিতে গত ৭ মে ওই কমিটি ছেলেকে তার পরিবারের হাতে তুলে দেয়।

দম্পতির অভিযোগ, বাড়িতে গিয়ে তাঁরা দেখেন, ছেলের দু’পায়ে মারের চাকা দাগ। জিজ্ঞাসা করায় সে হোমে অত্যাচারের কথা জানায়। পরের দিন তাঁরা ছেলেকে নিয়ে মনোবিদ মোহিত রণদীপের কাছে যান‌। শুক্রবার ছেলেটির বাবা সিডব্লিউসি-তে লিখিত অভিযোগ জমা করেন। অভিযোগ উড়িয়ে হোমের সম্পাদক সৌমেন প্রামাণিকের পাল্টা দবি, ‘‘ওই ছেলেটি অন্য একটি ছেলেকে বালিশ চাপা দিয়ে মারার চেষ্টা করেছিল। বাচ্চারা ছাড়িয়ে দেয়। তখন ঠেলাঠেলি হয়। এর বেশি কিছু হয়নি। বিষয়টি ফোনে সিডব্লিউসি-কে জানাই। হোমে বাচ্চাদের যত্নেই রাখা হয়। ছেলেটি আমাদের বলেছিল, মা ওকে মারধর করেছিল। বাড়িতে গিয়ে আমাদের নামে বলছে।’’

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

ছেলেটি অবশ্য বলে, ‘‘গত ৫ মে একটি ছেলে ঘরে থুতু ফেলছিল। দু’টি ছেলে খারাপ কাজ করছিল। বারণ শোনেনি। আমি তখন হালকা করে এক জনের মুখে বালিশ রাখি। সঙ্গে সঙ্গে সে বালিশ সরিয়েও দেয়। এর পরেই হোমের দু’জন আমাকে কলের পাইপ দিয়ে মারধর করে। দু’দিন জল ছাড়া প্রায় কিছু খেতে দেয়নি। মেঝেতে শুইয়ে জানলার সঙ্গে পা চেন দিয়ে বেঁধে রাখে। বাড়ি আসার আগে হোমের লোকেরা মাংস-ভাত দেয়।’’ তার বাবা-মা বলেন, ‘‘ছেলের মানসিক সমস্যা আছে। চিকিৎসা চলছে। তাকে মারা হবে? এর আগেও একাধিক হোমে ছিল। কোথাও এমন ঘটেনি।’’

কিন্তু ছেলেটি পালায় কেন?

উত্তরে ছেলেটি বলে, ‘‘রাজবাড়ি দেখতে আমার খুব ভাল লাগে। তাই একবার কৃষ্ণনগরে চলে গিয়েছিলাম। পান্ডুয়াতেও রাজবাড়ি আছে শুনেছি। মুর্শিদাবাদে গিয়ে হাজারদুয়ারি দেখারও ইচ্ছে রয়েছে।’’ তার বাবা-মাও ছেলের এই শখের কথা জানেন। মনোবিদ মোহিতবাবু জানান, ছেলেটির সঙ্গে কথা বলে এবং শরীরে দাগ দেখে মনে হয়েছে, ওর উপরে ভাল রকম অত্যাচার এবং অবহেলা হয়েছে। বিষয়টি ভাল ভাবে তদন্ত করে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। অন্য আবাসিকরা কেমন আছে, তা-ও দেখা দরকার। তিনি বলেন, ‘‘ছেলেটি কল্পনাপ্রবণ। তাই হয়তো পালায়।’’ সিডব্লিউসি-র বক্তব্য, ছেলেটি বা তার পরিবারের অভিযোগ সত্যি হলে অত্যন্ত গুরুতর। শিশু-সুরক্ষা আইনের পরিপন্থী। গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করে উপযুক্ত পদক্ষেপ করা হবে।

অন্য বিষয়গুলি:

Crime Home
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE