পুরবোর্ডের মেয়াদ ফুরিয়েছে গত জুলাই মাসে। তার পর থেকেই উলুবেড়িয়া পুরসভায় ভোট নিয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মধ্যে শুরু হয়ে যায় প্রার্থী নিয়ে জল্পনা। কেননা, সংরক্ষণের গেরো। সেই সময়ে সংরক্ষণের যে তালিকা প্রকাশ করা হয়েছিল, সেই অনুযায়ীই এ বার উলুবেড়িয়ায় পুরভোট হতে চলেছে। আর তাতে নিজেদের জেতা আসন ছাড়তে হচ্ছে গত পুরবোর্ডের চার কাউন্সিলরকে। তাঁদের মধ্যে এক জন আবার ছিলেন চেয়ারম্যান পারিষদ।
সংরক্ষণ নিয়ে কোনও শিবিরেই অবশ্য উত্তেজনার তেমন আঁচ নেই। তবে, এলাকা পুনর্বিন্যাসের পরে বিভিন্ন ওয়ার্ডের সংখ্যা বদলে যাওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছে সিপিএম এবং বিজেপি।
২০১০ সালের পুরভোটে কংগ্রেস-তৃণমূল জোট করে লড়াই করে বামফ্রন্টকে হারায়। কিন্তু বোর্ড গঠনের সময়ে কংগ্রস ও তৃণমূলের মধ্যে গোলমাল বাধে। তার জেরে একক ভাবে বোর্ড গড়ে কংগ্রেস। যদিও সেই বোর্ড ১০ মাসের বেশি চলেনি। কংগ্রেস কংগ্রেস ছেড়ে বেশ কিছু কাউন্সিলর তৃণমূলে যোগ দেন। ২৯টি আসনের পুরবোর্ডের ক্ষমতা পুরোপুরি তৃণমূলের হাতে চলে আসে। গত জুলাইতে পুরবোর্ডের মেয়াদ শেষ হয়। তখনই এলাকা পুনর্বিন্যাসের ফলে পুরসভায় আসনসংখ্যা ২৯ থেকে বেড়ে হয় ৩২। তখন অবশ্য নির্বাচন হয়নি। রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে পুরসভার প্রশাসকের দায়িত্ব দেওয়া হয় মহকুমাশাসক নিখিল নির্মল এবং সাংসদ সুলতান আহমেদকে।
সংরক্ষণের তালিকা অনুযায়ী বিগত পুরবোর্ডের চেয়ারম্যান পারিষদ তৃণমূলের শুক্লা ঘোষ, ওই দলেরই কাউন্সিলর আব্বাসউদ্দিন খান, বিজেপির বাবলু পণ্ডিত এবং সিপিএমের তারকনাথ দাস তাঁদের নিজেদের জেতা ওয়ার্ডে দাঁড়াতে পারবেন না। শুক্লাদেবীর পূর্বতন ৬ নম্বর ওয়ার্ড পরিবর্তিত হয়ে দাঁড়িয়েছে ২৬ নম্বর ওয়ার্ডে। এবং তা সংরক্ষিত হয়েছে তফসিলি মহিলাদের জন্য। আব্বাসউদ্দিন খান আগেরবার জিতেছিলেন ৫ নম্বর ওয়ার্ড থেকে। সেই ওয়ার্ড হয়ে গিয়েছে ২২ নম্বর। সংরক্ষিত হয়েছে মহিলাদের জন্য। বাবলুবাবু আগের বার দাঁড়িয়েছিলেন ১৬ নম্বর ওয়ার্ড থেকে। এ বার তা ১৬ নম্বরই রয়ে গেলেও আসনটি সংরক্ষিত হয়েছে তফসিলি জাতির মহিলাদের জন্য। আর তারকনাথবাবুর ২১ নম্বর ওয়ার্ড পাল্টে হয়েছে ১০ নম্বর ওয়ার্ড। এবং সেটিও মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত। তারকনাথবাবু দু’বারের কাউন্সিলর ছিলেন।
পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে কাকে কোথায় প্রার্থী করা হবে, তা নিয়ে কোনও দলই এখনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়নি। তবে, আলাপ-আলোচনা চলছে জোর মাত্রায়। শুক্লাদেবী বলেন, “আমার পূর্বতন ওয়ার্ড তফসিলি মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত হয়েছে। ফলে, ওই ওয়ার্ডে আমি দাঁড়াতে পারছি না। তবে, দল যেখানে প্রার্থী করবে, সেখানেই দাঁড়াব।” আব্বাসউদ্দিন খান অন্য ওয়ার্ডে দাঁড়াতে পারেন বলে জানিয়েছেন। তাঁর কথায়, “আমাকে বর্তমান ২৪ নম্বর ওয়ার্ডে (পূর্বতন ১ নম্বর ওয়ার্ড) দাঁড় করানো নিয়ে দলে প্রাথমিক কথাবার্তা চলছে।” সিপিএমের তারকনাথবাবু বলেন, “দলের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। দল যেটা করবে, সেটা মেনে নেব।” বিজেপির বাবুল পণ্ডিতের সঙ্গে চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা যায়নি।
এলাকা পুনর্বিন্যাসের ফলে এ বার শুধু আসনসংখ্যাই বাড়েনি, আগের এক নম্বর ওয়ার্ড হয়ে গিয়েছে ২৪ নম্বর। ৬ নম্বর ওয়ার্ড পরিবর্তিত হয়ে দাঁড়িয়েছে ২৬ নম্বর। এমন উদাহরণ আরও রয়েছে। সিপিএম এবং বিজেপি নেতৃত্বের দাবি, এ রকম নয়া বিন্যাসে পুর এলাকার বাসিন্দারা সমস্যায় পড়বেন। ভোটের ক্ষেত্রেও সমস্যা হবে। কেননা, ভোটার তালিকা অনুযায়ী, বাসিন্দাদের ঠিকানা মিলবে না। কেউ কেউ এর পিছনে তৃণমূলের ভূমিকা রয়েছে বলেও অভিযোগ তুলেছেন। নয়া বিন্যাস যাতে কার্যকর না হয়, তার জন্য বিরোধী দলগুলি জেলাশাসকেরও দ্বারস্থ হয়েছিল।
বিজেপি নেতা গৌতম রায়ের অভিযোগ, “এই ধরনের পুনর্বিন্যাস শাসক দলের উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে নিজেদের ক্ষমতা ধরে রাখতেই নির্বাচন কমিশনকে দিয়ে এমনটা করা হয়েছে।” একই দাবি, বিগত পুরবোর্ডের বিরোধী দলনেতা সিপিএমের সাবিরুদ্দিন মোল্লারও। তিনি বলেন, “এ ভাবে পুনর্বিন্যাসের ফলে পুরবাসীর ঠিকানা পাল্টে যাচ্ছে। ফলে, পুরবাসী নানা সমস্যায় পড়বেন।”
অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন পুরসভার ভারপ্রাপ্ত নির্বাচনী আধিকারিক নির্মলকুমার ভৌমিক। তিনি বলেন, “আগে ওয়ার্ডের নম্বরগুলি দক্ষিণ-পশ্চিম থেকে উত্তর-পূর্ব দিক অনুযায়ী সাজানো ছিল। এ বার তা উল্টো ভাবে সাজানো হয়েছে। এবং তা হয়েছে সাংবিধানিক নিয়ম মেনেই। এতে কারও লাভক্ষতির ব্যাপার নেই। এত দিন ভুল ভাবে বিন্যাস ছিল।”
একই ভাবে তৃণমূলের হাওড়া গ্রামীণ এলাকার সভাপতি পুলক রায়ও বলেন, “এলাকা বিন্যাস নির্বাচন কমিশন করেছে। আমাদের কোনও হাত নেই। অভিযোগ ভিত্তিহীন।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy