এখনও দরজা খুলল না কিষান মান্ডির। ছবি: দীপঙ্কর দে।
রাজ্যে আলু ও সব্জির অন্যতম প্রধান উৎপাদক জেলা হুগলি। জেলার মধ্যে আবার আলু ও সব্জি ব্যবসার অন্যতম ঘাঁটি সিঙ্গুর। কিন্তু বিপণন ব্যবস্থা নিয়ে এখানে চাষিদের ক্ষোভের সীমা নেই। না চালু হয়েছে কিষান মান্ডি, না হিমঘর, না কিষান-ভিশন।
দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ে লাগোয়া শহরের যে এলাকায় আলুর ব্যবসা হয়, তার নাম আলুর মোড়। এখানে যে সব আড়ত রয়েছে, তার পাশে ছোট ছোট চালাঘরে প্রতিদিন শ’য়ে শ’য়ে বাছনদার আলু বস্তাবন্দি করেন। অপরিসর রাস্তায় চলে বিকিকিনি। সেখানে আজও গড়ে ওঠেনি বিক্রিবাটার পরিকাঠামো। ফলে বছরের যে সময়ে আলু ওঠে, অর্থাৎ ফেব্রুয়ারি থেকে এপ্রিল মাস পর্যন্ত এখানে তিল ধারণের জায়গা থাকে না। এখান থেকে বস্তাবন্দি আলুর বেশ কিছু সরাসরি বাজারে চলে যায়। আবার অনেক সময় তা হিমঘরে পাঠানো হয়। গাড়ির ভিড়ে সাধারণ মানুষের হাঁটাচলা দায় হয়। অনেক সময় আলুর ট্রাক জায়গা না পেয়ে দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ে লাগোয়া উড়ালপুলেও গিয়ে দাঁড়ায়। আলুর মোড়ের অদূরেই কামারকুণ্ডু রেল গেট। সেখানে লেভেল ক্রসিংয়ে একবার গেট পড়লে রাস্তার ভিড় সিঙ্গুরের আলুর মোড় পর্যন্ত চলে আসে।
কৃষি-মানচিত্রে সিঙ্গুরের গুরুত্ব বিবেচনা করেই রাজ্য সরকার সিঙ্গুরে কৃষক মান্ডি তৈরি করেছে। সেই মান্ডির কাজ দীর্ঘদিন আগে শেষও হয়েছে। কিন্তু এখনও তা চাষিদের কোনও কাজেই লাগেনি। চাষিদের প্রশ্ন, লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করে এখানে ‘তাপসী মালিক কিষান-মান্ডি’ গড়ে তোলা হল। অথচ, তা ব্যবহারের জন্য কেন খুলে দেওয়া হল না? কেউ কেউ মনে করেন, ওই মান্ডির মধ্যে যে বড় জায়গা রয়েছে, তা থেকে ব্যবসায়ীদের জন্য অনায়াসেই কিছুটা ছেড়ে দেওয়া যায়। তাতে সব পক্ষেরই সুবিধা হয়।
মির্জাপুরের চাষি সোমনাথ দাস বলেন, “ফসল ফলিয়ে আমরা ন্যায্য দাম পাই না। কিষান মান্ডি চালু হলে এই অবস্থা থেকে মুক্তি মিলবে ভেবেছিলাম। কিন্তু কবে তা চালু হবে, তা তো বুঝতে পারছি না।” তাঁর সংযোজন, “আলু চাষিরা দাম পাচ্ছেন না। সরকারের নজরদারিতে কিষান-মান্ডিতে আলু বেচতে পারলে হয়তো অনেকটা সুরাহা হত।” একই সুর সিঙ্গুরের অনেক চাষির গলায়।
কেন এখনও চালু হল না কিষান মান্ডি?
প্রশাসনের একটি সূত্রে জানানো হয়েছে, স্থানীয় বিডিও, বিধায়ক এবং জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে তৈরি কমিটির হাতেই কিষান মান্ডির জায়গা বিতরণের জন্য তালিকা তৈরির ভার দেওয়া হবে। কিন্তু সেই প্রক্রিয়া কবে মিটবে, সে প্রশ্নের উত্তর মেলেনি। রাজ্যের মন্ত্রী তথা সিঙ্গুরে জমি-আন্দোলনের অন্যতম নেতা বেচারাম মান্নার দাবি, “কাজ অনেকটাই এগিয়ে গিয়েছে। আশা করছি, কিষাণ মান্ডি দ্রুত চালু করা যবে।”
শুধু কিষান-মান্ডি নয়, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যখন রেলমন্ত্রী ছিলেন, সেই সময় এলাকার চাষিদের সুবিধার জন্য সিঙ্গুর স্টেশন লাগোয়া বুড়োশান্তি মাঠে বহুমুখী হিমঘর তৈরি করে ছিল রেল। সেই হিমঘর পরীক্ষামূলক ভাবে কিছুদিন চালানোর পর রেলের তরফে আর কোনও উদ্যোগ দেখা যায়নি। মমতা রেলমন্ত্রীর দায়িত্ব ছাড়ার পর ওই হিমঘর নিয়ে সব পক্ষ চুপচাপ। আর দরজা খোলেনি হিমঘরের। ফলে, কোটি কোটি সরকারি টাকা খরচ করে যে প্রকল্প গড়া হয়েছিল, তা স্রেফ পড়ে নষ্ট হচ্ছে। এ ছাড়া, ফসল বিপণনের লক্ষ্যে বুড়োশান্তি মাঠ লাগোয়া রেলের জমিতেই কিষান-ভিশন প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছিল। কয়েকটির দরজা খোলা থাকলেও সেখান থেকে কৃষিজ পণ্য কিছু বিক্রি হয় না। পরিকাঠামোও এখনও পুরোপুরি গড়ে ওঠেনি। ফলে, সেই তিমিরেই রয়েছে গিয়েছে সিঙ্গুরের সফল-সব্জি বিপণনের ব্যবস্থা।
কৃষকদের নিয়ে আন্দোলনের জেরেই রাজ্যে ক্ষমতায় এসেছে বর্তমান শাসক দল। কিন্তু সেই সিঙ্গুরেই চাষিদের স্বার্থ অবহেলিত, এই আক্ষেপ এখন সেখানে মুখে মুখে ফিরছে। (শেষ)
কেমন লাগছে আমার শহর? নিজের শহর নিয়ে আরও কিছু বলার থাকলে আমাদের জানান। ই-মেল পাঠান district@abp.in-এ। subject-এ লিখুন ‘আমার শহর সিঙ্গুর। ফেসবুকে প্রতিক্রিয়া জানান: www.facebook.com/anandabazar.abp অথবা চিঠি পাঠান ‘আমার শহর’, হাওড়া-হুগলি বিভাগ, জেলা দফতর, আনন্দবাজার পত্রিকা, ৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা ৭০০০০১ ঠিকানায়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy