সরানো হচ্ছে দুর্ঘটনাগ্রস্ত গাড়িটিকে। পাশে মৃত পায়েল চক্রবর্তী। ছবি: দীপঙ্কর দে।
শীতের দুপুরে বেড়াতে যাওয়ার কথা ছিল বোলপুরের ইকো-ট্যুরিজম পার্কে। হইহই করে সকলে গাড়িতে উঠেছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আর বেড়াতে যাওয়া হল না। শুক্রবার সিঙ্গুরের বড়া-তেলিয়া মোড়ের কাছে দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়েতে গাড়ি দুর্ঘটনায় মৃত্যু হল বাঘাযতীনের একটি নাচের স্কুলের তিন ছাত্রীর। জখম হন আর এক ছাত্রী, ওই স্কুলের কর্ণধার এবং গাড়ির চালকও। তাঁদের হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে।
পুলিশ জানায়, মৃতদের নাম পায়েল চক্রবর্তী (৩৩), অতলীনা দত্ত (২২) এবং সায়ঙ্কি মজুমদার (২২)। পায়েল কলকাতার তালতলার বাসিন্দা। এ মাসেই একটি বেসরকারি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে তাঁর শিক্ষিকা হিসেবে যোগ দেওয়ার কথা ছিল। দুর্ঘটনায় বাকি হতাহতেরা সকলেই বাঘাযতীনের বাসিন্দা। অতলীনা ইংরেজিতে এমএ পড়ছিলেন। সায়ঙ্কি যোগেশচন্দ্র আইন কলেজের ছাত্রী ছিলেন।
পুলিশ ও সূত্রে খবর, ৬ জানুয়ারি বাংলাদেশে একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিতে যাওয়ার কথা ছিল ওই নাচের স্কুলের ছাত্রীদের। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাঁদের যাওয়া বাতিল হয়। তাতে মন খারাপ হয়ে যায় অতলীনা, পায়েল, সায়ঙ্কি ও ডোনা আইচ নামে চার ছাত্রীর। তাই ওই স্কুলের কর্ণধার চন্দ্রা কোলে বিশ্বাস একটি গাড়ি ভাড়া করে ওই চার জনকে নিয়ে এ দিন বোলপুরের ইকো-ট্যুরিজম পার্কে বেড়াতে যাওয়ার পরিকল্পনা করেন।
বেলা সাড়ে ১২টা নাগাদ গাড়িটি বড়া-তেলিয়া মোড়ের কাছে পৌঁছতেই নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে উল্টে গিয়ে রাস্তার ধারের একটি গাছে ধাক্কা মারে। ঘটনাস্থলেই মারা যান অতলীনা, পায়েল এবং সায়ঙ্কি। ডোনা, চন্দ্রাদেবী এবং চালক কৃষ্ণ বিশ্বাসকে জখম অবস্থায় প্রথমে সিঙ্গুর গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে সেখান থেকে কৃষ্ণ এবং চন্দ্রাদেবীকে কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে স্থানান্তরিত করানো হয়। ডোনাকে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
গাড়িটি উদ্ধার করতে গিয়ে পুলিশ দেখে পিছনের ডান দিকের চাকা ফাটা। দ্রুত গতিতে চলার সময়ে সেই চাকা ফেটে যাওয়ায় দুর্ঘটনা কি না, সে ব্যাপারে পুলিশ নিশ্চিত নয়। পুলিশ জানায়, চাকাটি দুর্ঘটনার আগে না পরে ফেটেছে, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথেই চন্দ্রাদেবী জেনে যান তাঁর তিন ছাত্রী আর নেই। স্বগতোক্তি করতে থাকেন, “মেয়েগুলোর মুখ বারবার মনে পড়ছে। ওঁদের বাবা-মায়ের কাছে কী জবাব দেব?” পরে সিঙ্গুর গ্রামীণ হাসপাতালে যান চন্দ্রাদেবীর স্বামী গৌতম বিশ্বাস। তিনিও বলেন, “এই রকম দুর্ঘটনা কল্পনাও করতে পারছি না। সবাই হাসিমুখে বেরোল। আর এই কাণ্ড!” রাতে সিঙ্গুর থানায় যান মৃতদের বাড়ির লোকেরা। তাঁরা কথা বলার অবস্থায় ছিলেন না।
এই নিয়ে চলতি মাসেই ওই সড়কে নিয়ন্ত্রণ হারানো গাড়ির দুর্ঘটনায় মারা গেলেন আট জন। বছরের প্রথম দিন গুড়াপের মাজিনানে চার জনের মৃত্যু হয়েছিল। মঙ্গলবার সাইকেলে বাড়ি ফেরার পথে ডানকুনিতে ট্রাকের ধাক্কায় মারা যান খড়িয়ালের এক যুবক। তবে, শুধু এই তিনটিই নয়, তার আগেও দুর্ঘটনায় প্রাণহানি হয়েছে ওই সড়কে। অনেকের কাছেই দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ে এখন সাক্ষাৎ মরণফাঁদ। সড়কে না আছে গাড়ির গতিবেগের উপরে নির্দিষ্ট ‘লেন’, না আছে রাস্তার ডিভাইডারের ‘কাট’ দিয়ে উল্টো দিকের গাড়ির ঢুকে পড়া রুখতে নজরদারি। এসডিপিও (চন্দননগর) দীনেশ কুমার জানান, পথ নিরাপত্তার বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে ভাবা হচ্ছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy