ডিপফেক প্রযুক্তির ভয় দেখিয়ে হাজার হাজার টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠল হুগলির মানকুণ্ডুতে। সাইবার প্রতারণার শিকার হয়ে পুলিশের দ্বারস্থ হলেন মানকুণ্ডুর বাসিন্দা ওই তরুণী। অভিযোগ, প্রতারকদের দাবি মতো টাকা দিয়েও রেহাই মেলেনি। আরও আরও টাকা চেয়ে ফোন আসছে তাঁর কাছে। টাকা না দিলে ডিপফেকের মাধ্যমে তরুণীর ‘সুপার ইমপোজড্’ ছবি তাঁর পরিচিতদের ফোনে পাঠানো হচ্ছে। অভিযোগ পেয়ে তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ।
সম্প্রতি দক্ষিণী অভিনেত্রী রশ্মিকা মন্দনার ডিপফেক ভিডিয়ো নিয়ে তোলপাড় সমাজমাধ্যম। কালো জিম পোশাকে অভিনেত্রীর একটি ভিডিয়ো ছড়িয়ে পড়তেই অনুরাগীদের সন্দেহ হতে শুরু করে। ভিডিয়োয় যে মহিলাকে দেখা গিয়েছে, তাঁর মুখ এবং কণ্ঠস্বর হুবহু রশ্মিকার মতো হলেও চেহারায় কিছু অসঙ্গতি রয়েছে। তদন্তে প্রমাণিত হয়, সেই ভিডিয়োটি আসলে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে তৈরি করা ‘ডিপফেক’ ভিডিয়ো। এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে জানানো হয়েছে ‘ডিপফেক’ তৈরি করা এবং সেগুলি ছড়িয়ে দেওয়া দু’টিই আইনত অপরাধ। সচিন-কন্যা সারা তেন্ডুলকরও তাঁর ইনস্টাগ্রাম হ্যান্ডলে ডিপফেক প্রযুক্তি নিয়ে প্রতিবাদ করেছেন। নেটদুনিয়ায় ক্রমশ মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে ডিপফেক প্রযুক্তি। এক জনের শরীরে অন্যের মুখ বসিয়ে দিয়ে চলছে ব্ল্যাকমেল। সেই এআই প্রযুক্তির ভয় দেখিয়ে প্রতারণার অভিযোগ তুললেন মানকুণ্ডুর এক তরুণী।
তরুণীর এক সহকর্মীর কথায়, ‘‘সে দিন ক্রিকেট বিশ্বকাপের ফাইনালের খেলা চলছিল। মোবাইলে খেলা দেখছিল আমার বন্ধু। হঠাৎই একটা ফ্ল্যাশ মেসেজ ভেসে ওঠে ওর ফোনে। সেটা খুলতেই একটা মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন ডাউনলোড হয়ে যায়। তার পর ‘অ্যাকসেস নোটিফিকেশন’ আসে। আমার বন্ধু সেখানে মোবাইল নম্বর দিয়ে দেয়। তখনই ওর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ১১ হাজার টাকা পাঠানো হয়। তবে লোন হিসাবে। ও অবাক হয়ে যায়।’’ ওই ব্যক্তি জানান, তার দু’ দিন পর থেকে বিভিন্ন নম্বর থেকে ফোন আসতে শুরু করে ওই তরুণীর কাছে। আসতে থাকে টাকা ফেরত দেওয়ার জন্য চাপ। এমনকি, টাকা না দিলে ডিপফেক করা অশ্লীল ছবি এবং ভিডিয়ো ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়। শুধু তাই নয়, তরুণীর ফোনের কনট্যাক্ট লিস্টে থাকা বেশ কয়েক জনকে ডিপফেক ছবি পাঠানো শুরু করে প্রতারকেরা। সম্মানহানির ভয় পেয়ে ১৯ হাজার টাকা অনলাইনে পেমেন্ট করেন তরুণী। কিন্তু সমস্যা বাড়তেই থাকে। সাইবার প্রতারকেরা বুঝে যায় যে, ভয় পাইয়ে দিয়ে কাজ হয়েছে। তারা আবারও টাকা চেয়ে ফোন করতে থাকে। একের পর এক ওই হুমকি ফোন আসতে থাকায় ভয়ে সিঁটিয়ে যান তরুণী। তিনি কাছের কয়েক জনকে পুরো ঘটনা খুলে বলেন।
শুক্রবার ওই তরুণীকে নিয়ে ভদ্রেশ্বর থানায় গিয়ে অভিযোগ দায়ের করেছেন তাঁর এক আত্মীয়। সেখান থেকে চন্দননগর পুলিশ কমিশনারেটের সাইবার ক্রাইম থানা চুঁচুড়ায় এসে অভিযোগ দায়ের করেন তাঁরা। পুলিশ জানাচ্ছে, ফ্ল্যাশ মেসেজের মাধ্যমে ফোন ক্লোনিং অ্যাপ ডাউনলোড করিয়ে হ্যাকাররা অনেককে প্রতারিত করছে। এখন ভয় দেখাতে ডিপফেক প্রযুক্তিকেও হাতিয়ার করছে তারা। সম্মানহানির ভয়ে অনেকেই ওই প্রতারকদের পাতা ফাঁদে পা দিচ্ছেন কিংবা পা দিতে বাধ্য হচ্ছেন। চন্দননগর পুলিশ কমিশনারেটের এক পদস্থ আধিকারিকের কথায়, ‘‘এগুলো থেকে স্মার্টফোন ব্যবহারকারীদের সাবধান হতে হবে। এই রকম ফোন কিংবা মেসেজ এলে সঙ্গে সঙ্গে তা ‘ব্লক’ করতে হবে। আর মোবাইল স্ক্রিনে ভেসে ওঠা ফ্ল্যাশ মেসেজ পাত্তা না দেওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ।’’ তাঁর আরও পরামর্শ, ‘‘কোনও অ্যাপ ডাউনলোড করলে, সেখানে যতটা সম্ভব কম ব্যক্তিগত তথ্য দেওয়া যায়, ততই ভাল।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy