ট্রেনের দু’টি কামরার মাঝের ভেস্টিবিউলে বসে ঘুমিয়ে পড়েছিলেন বছর ছাব্বিশের এক পরিযায়ী শ্রমিক। ঘুমের মধ্যে তিনি আচমকাই ভেস্টিবিউলের ফাঁক গলে রেললাইনে পড়ে যান। মুহূর্তের মধ্যে তাঁর গলার উপর দিয়ে ট্রেনের চাকা চলে যাওয়ায় মাথা থেকে দেহটি আলাদা হয়ে যায়। রবিবার রাত সাড়ে ১১টা থেকে ১২টার মধ্যে ঘটনাটি ঘটেছে দক্ষিণ-পূর্ব রেলের বালিটিকুরি কেবিনের কাছে। মৃত ওই যুবকের সঙ্গীরা ঘটনার কথা রেলকে জানানো সত্ত্বেও সেই ভাবেই দেহটি লাইনে ন’ঘণ্টা পড়ে থাকার অভিযোগ উঠল। রেলের দাবি, ঘটনাস্থলটি কার এলাকা, এই দোটানায় পড়েছিল দেহটি।
বেঙ্গালুরু থেকে আসা ভাগলপুরগামী অঙ্গ এক্সপ্রেসে ছিলেন ওই শ্রমিক। তিনি পেশায় রাজমিস্ত্রি। মৃতের নাম পিন্টু কুমার। তিনি বিহারের বালিয়ার বাসিন্দা। তাঁর পরিবারে বাবা-মা ছাড়াও রয়েছেন স্ত্রী এবং একটি তিন বছরের শিশু সন্তান। তিনি কাজ করতে বেঙ্গালুরু গিয়েছিলেন। রবিবার অঙ্গ এক্সপ্রেসে বন্ধুদের সঙ্গে বালিয়ার বাড়িতেই ফিরছিলেন।
অভিযোগ, সোমবার সকাল ৯টা পর্যন্ত যুবকের বিচ্ছিন্ন দেহ ওই অবস্থায় পড়ে ছিল রেললাইনে। কারণ, দেহটি কে তুলবে, তা নিয়ে শালিমার জিআরপি আর হাওড়া সিটি পুলিশের দাশনগর থানার মধ্যে টানাপড়েন চলতে থাকে। শেষে দাশনগর থানা দেহটি উদ্ধার করে ময়না তদন্তে পাঠিয়ে দেয়।
মৃত যুবকের সহযাত্রী বন্ধু সত্যেন্দ্র যাদব বলেন, ‘‘আমরা ট্রেনের অসংরক্ষিত কামরায় ভ্রমণ করছিলাম। ট্রেন ছিল ভিড়ে ঠাসা। তীব্র গরমের জন্য পিন্টু দু’টি কামরার মাঝের অংশে গিয়ে বসে ছিল। ঘুমের ঘোরে ওই ট্রেন থেকে আমাদের চোখের সামনেই পড়ে যায়। আমরাই পরের স্টেশনে গিয়ে ট্রেনের গার্ডকে ঘটনাটা জানাই। তিনি দাশনগর থানাকে একটি মেমো লিখে দিয়ে ট্রেন নিয়ে চলে যান।’’
মৃত যুবকের বন্ধুদের আরও অভিযোগ, এর পর প্রায় ন’ঘণ্টা দ্বিখণ্ডিত দেহটি রেললাইনে পড়ে থাকে। তাঁরা বার বার শালিমার ও দাশনগর থানার মধ্যে ছোটাছুটি করেও দেহটি উদ্ধারের ব্যবস্থা করতে পারেননি বলে জানিয়েছেন। শেষে সকাল ন’টার পরে দাশনগর থানার পুলিশ দেহ উদ্ধার করে। পিন্টুর বন্ধুদের দাবি, দুর্ঘটনার পরে তাঁরা গার্ডকে বিষয়টি জানিয়ে পিন্টুর দেহ খোঁজার চেষ্টা করেন। কিন্তু দেখতে পাননি। অবশেষে রাত ৩টে ৪৫ মিনিট নাগাদ রেলপুলিশ ঘটনাস্থলে এলে খোঁজাখুঁজির পরে যুবকের দ্বিখণ্ডিত দেহটি দেখতে পাওয়া যায়। কিন্তু ওই এলাকা তাদের নয় জানিয়ে দেহটি না তুলেই চলে যায় তারা।
শালিমার জিআরপির এক পদস্থ কর্তা বলেন, ‘‘যে জায়গায় দুর্ঘটনাটি ঘটেছে, সেটি দাশনগর থানার আওতায়। এখনও সেটি রেলপুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়নি। তাই দেহ আমরা তুলতে যাইনি।’’
অন্য দিকে, হাওড়া সিটি পুলিশের এক কর্তা বলেন, ‘‘দেহটি ঠিক কার এলাকায় পড়েছিল, তা প্রথমে বোঝা না গেলেও পরে জানা যায় যে ঘটনাটি দাশনগর থানা এলাকার মধ্যে হয়েছে। দেহটি উদ্ধার করে ময়না তদন্তে পাঠানো হয়েছে।’’
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)