(বাঁ দিক থেকে) দীপ্সিতা ধর, কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় এবং সোহিনী সরকার। —ফাইল চিত্র।
আরজি কর-কাণ্ডের প্রেক্ষিতে সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় চেয়েছেন ‘জাস্টিস ফর কোন্নগর’ (কোন্নগরের জন্য বিচার)। আরজি কর মেডিক্যাল কলেজে ‘বিনা চিকিৎসায়’ কোন্নগরের যুবকের মৃত্যুর প্রতিবাদে কেন অভিনেতা-শিল্পীরা নেই, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তিনি। অন্য দিকে, দলীয় ঝান্ডা ছাড়া শ্রীরামপুরের সাংসদকে আন্দোলনে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানান অভিনেত্রী সোহিনী সরকার। তাতে রাজি হয়ে গেলেন তৃণমূল সাংসদ। শুধু তাই নয়, আরজি কর-কাণ্ডের প্রতিবাদ মিছিলে তাঁর এক পাশে অভিনেত্রী সোহিনী এবং অন্য পাশে বাম নেত্রী দীপ্সিতা ধরকে নিয়ে পথে হাঁটতে চাইলেন তিনি। তবে শর্ত একটাই।
চিকিৎসকের ধর্ষণ এবং খুনের বিচারের দাবিতে আন্দোলনের মাঝেই আরজি কর মেডিক্যাল কলেজে হুগলির কোন্নগরের এক যুবকের মৃত্যু নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছে। অভিযোগ, শুক্রবার আরজি করে বিনা চিকিৎসায় মৃত্যু হয়েছে দুর্ঘটনাগ্রস্ত ২২ বছরের বিক্রম ভট্টাচার্যের। এই প্রেক্ষিতে তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় চাইলেন ‘জাস্টিস ফর কোন্নগর’। তাঁর যুক্তি, আরজি করে চিকিৎসকের ধর্ষণ এবং খুনের বিচার যেমন দরকার, তেমনই ওই হাসপাতালে চিকিৎসা না পেয়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়া যুবকের জন্যেও বিচার প্রয়োজন। শনিবার সন্ধ্যায় কোন্নগরে মৃত যুবকের বাড়ি থেকে বেরিয়ে শ্রীরামপুর সাংসদ বলেন, ‘‘গরিব মানুষ, মফস্সলের মানুষ বলে তাঁর জন্য আওয়াজ তোলার কেউ থাকবে না? তাঁর জন্য এলিট ক্লাস নামবে না? তার জন্য কোন গায়ক-গায়িকা, ফিল্ম আর্টিস্টরা নামবেন না?’’ তার পাল্টা অভিনেত্রী সোহিনী জানান, তাঁরা যে মিছিলে হাঁটছেন, সেটা নির্দিষ্ট এক জনের বিচারের দাবিতে নয়। তাঁরা চান, সিস্টেমের বদল। দুর্নীতিমুক্ত সমাজের জন্য পথে হাঁটছেন। সেখানে সবার জন্যই বিচার চাওয়া হচ্ছে। চাইলে কল্যাণও ওই প্রতিবাদ মিছিলে যোগ দিতে পারেন। তবে তাঁকে আসতে হবে দলীয় পতাকা ছাড়া।
সোহিনীর এই আহ্বানের পরে কল্যাণ জানিয়েছেন, তিনিও মিছিলে হাঁটতে চান। আনন্দবাজার অনলাইনকে তৃণমূল সাংসদ বলেন, ‘‘আমি সোহিনী সরকারের অভিনয় পছন্দ করি। ওঁকে আমার ভাল লাগে। কিন্ত উনি কথা দিন যে ওঁদের কর্মসূচিতে রাজনীতির কোনও স্লোগান বা কথা থাকবে না, আমি রাস্তায় নামতে রাজি আছি। ওই কর্মসূচিতে দলীয় পতাকা ছাড়াই আমি হাঁটব।’’ উল্লেখ্য, সোহিনীর ননদ দীপ্সিতা ধর গত লোকসভা ভোটে কল্যাণের বিরুদ্ধে ভোটে দাঁড়িয়েছিলেন। নির্বাচনী প্রচারে দুই প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী একে অন্যকে আক্রমণ করে বেশ কিছু ঝাঁজালো কথা বলেন। সোহিনীর ‘আহ্বানে’ কল্যাণের খোঁচা, ‘‘ওঁর নতুন স্বামীই তো বলেছেন পশ্চিমবঙ্গ দখল করবেন। অভিনেত্রী আগে তাঁর ঘর সামলান।’’
উল্লেখ্য, আরজি করের ঘটনার প্রতিবাদে সোহিনী সরকার, স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়, সুদীপ্তা চক্রবর্তীর মতো অভিনেত্রীরা টানা আন্দোলন করছেন। ওই প্রেক্ষিতে সোহিনীর স্বামী গায়ক শোভন গঙ্গোপাধ্যায় সমাজমাধ্যমে লিখেছিলেন, “পরবর্তী শুনানিতে যদি কোনও ভুল সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, তবে বাংলার মেয়েরা, মায়েরা শুধু রাত দখল আর নবান্ন দখল নয়, পুরো পশ্চিমবঙ্গ দখল করবে।” সেই প্রসঙ্গ টেনে দীপ্সিতার তুতো ভাইকে কটাক্ষ করেছেন কল্যাণ। তৃণমূল সাংসদ এ-ও বলেন, ‘‘যদি সোহিনী বলেন রাজনীতিকে বাদ দিয়ে বিচারের কথা বলবেন, তাহলে ননদ (দীপ্সিতা) এবং বৌদি (সোহিনী) দু’জনকে দু’পাশে নিয়ে আমি মিছিলে হাঁটতে রাজি আছি।’’
কল্যাণের এই মন্তব্যের প্রেক্ষিতে দীপ্সিতার অভিযোগ, কল্যাণের মন্তব্যে পুরুষতান্ত্রিক মনোভাবের প্রকাশ ঘটেছে। আনন্দবাজার অনলাইনকে তিনি বলেন, ‘‘ননদ-বৌদি ছাড়াও আমার আর সোহিনীদির ব্যক্তিগত স্বতন্ত্র পরিচয় আছে। এই যে ক্রমাগত মহিলাদের এর বৌ, ওর বোন বলে দাগিয়ে দেওয়ার প্রচেষ্টা, এটা পুরুষতান্ত্রিক মনোভাব থেকেই আসে।’’ দীপ্সিতা আরও বলেন, ‘‘কোন্নগরের যুবকের মৃত্যু দুঃখজনক। কিন্তু যে ভাবে শাসকদল তাঁকে এই আন্দোলনের বিরুদ্ধে ব্যবহার করার চেষ্টা করছে, সেটা লজ্জাজনক। গরিব মানুষের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার হাল ফেরাতে সরকারি হাসপাতাল, স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোতে ঢেলে বিনিয়োগ করতে হবে। শ্রীরামপুরের স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোর অবস্থা সাংসদ জানেন কি?’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy