‘বন্ধ্যা জমি চাষযোগ্য করতে হবে। নয়তো শিল্প করতে হবে।’ মুখ্যমন্ত্রীর কাছে ওই দাবি নিয়ে চিঠি পাঠাচ্ছেন আন্দোলনকারীরা। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
১৮ বছর পর আবার সিঙ্গুরে জমি আন্দোলনের প্রস্তুতি! এ বার টাটার কাছ থেকে ফেরত পাওয়া ‘বন্ধ্যা’ জমিকে চাষযোগ্য করার দাবি তুলে গঠিত হল কমিটি। সরকারের কাছে ‘বন্ধ্যা জমি পুনর্ব্যবহার কমিটি’র দাবি, হয় জমি চাষযোগ্য করে দেওয়া হোক, নয়তো শিল্প হোক। এই মর্মে আবেদনপত্র তাঁরা পাঠাচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী বন্দ্যোপাধ্যায়কে। স্থানীয় তৃণমূল বিধায়ক তথা রাজ্যের কৃষি বিপণন মন্ত্রী বেচারাম মান্নার দাবি, ন্যানো কারখানার জন্য যে জমি অধিগৃহীত হয়েছিল, তার ৯১ শতাংশ জায়গাতেই এখন চাষবাস হয়। উল্টো দিকে, কৃষকদের একাংশ জানাচ্ছেন তাঁরা আন্দোলনের জন্য কোমর বাঁধছেন। আন্দোলনের নেতৃত্ব দিচ্ছেন স্থানীয় তৃণমূল নেতা।
২০০৬ সালে ন্যানো কারখানার জন্য এক হাজার একর জমি অধিগ্রহণ করা হয় সিঙ্গুরে। জমি জোর করে কেড়ে নেওয়া হয়েছে, এই অভিযোগ তুলে আন্দোলন শুরু করেছিলেন অনিচ্ছুক কৃষকেরা। গড়ে ওঠে ‘সিঙ্গুর কৃষিজমি রক্ষা কমিটি।’ ক্রমে যে আন্দোলনের মুখ হয়ে উঠেছিলেন রাজ্যের তৎকালীন বিরোধী নেত্রী তথা বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী মমতা। বাম সরকারের ভিত নড়িয়ে দিয়েছিল ওই আন্দোলন।
সিঙ্গুরে ‘কৃষিজমি রক্ষা কমিটি’র অন্যতম মুখ ছিলেন দুধকুমার ধাড়া। রাজ্যে ক্ষমতার পালাবদলের পর বেড়াবেরি গ্রাম পঞ্চায়েতে প্রধান থেকে সিঙ্গুর পঞ্চায়েত সমিতির কর্মাধ্যক্ষ হন তৃণমূল নেতা দুধকুমার। তবে গত পঞ্চায়েত ভোটে তাঁকে টিকিট দেয়নি তৃণমূল। সেই দুধকুমারই কৃষকদের নিয়ে সিঙ্গুরে নতুন করে আন্দোলন শুরু করার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। তাঁর দাবি, ‘‘বন্ধ্যা জমিকে চাষযোগ্য করে দিতে হবে। আর চাষ না হলে সেখানে শিল্প করতে হবে।’’ তিনি জানান, এ জন্য ইতিমধ্যেই কৃষকদের জন্য ‘ফর্ম’ বিলি শুরু হয়েছে। যা মুখ্যমন্ত্রীর কাছে পাঠানো হবে। পাশাপাশি দুধকুমারের ঘোষণা, ‘‘আগামী ৩০ অগস্ট থেকে সিঙ্গুরে অবস্থান শুরু করবে সিঙ্গুর বন্ধ্যা জমি পুনরুদ্ধার কমিটি।’’
আন্দোলনের কারণ এবং দাবি হিসাবে দুধকুমারের যুক্তি, ‘‘আট বছর পেরিয়ে গিয়েছে। সিঙ্গুরে ৬৫০ থেকে ৭০০ একর জমি বন্ধ্যা হয়ে পড়ে আছে। ২০১৬ সালে সুপ্রিম কোর্ট যে রায় দিয়েছিল তাতে বলা হয় জমি চাষযোগ্য করে ফেরত দিতে হবে। কিন্তু জমি চাষযোগ্য হয়নি। জমির সীমানাও নির্ধারণ হয়নি। চাষের জন্য কিছু ‘মিনি ডিপ টিউবওয়েল’ বসানো হয়েছিল। তার খরচ অনেক। সেগুলোকে সোলার সিস্টেমে আনার দাবি জানাচ্ছি। জমি অধিগ্রহণের আগে কৃষকদের যে অধিকার ছিল, সেই অধিকারই তাঁদের ফিরিয়ে দিতে হবে।’’
স্থানীয় কৃষকদের দাবি, হাজার চেষ্টার পরেও যদি তাঁদের জমি চাষযোগ্য করা-না যায় সে ক্ষেত্রে সরকারি বা বেসরকারি উদ্যোগে শিল্প হোক। তাঁরা সহযোগিতা করবেন। তাঁরা এ-ও জানাচ্ছেন, সমস্যা সমাধানের জন্য এর আগে স্থানীয় প্রশাসনের দ্বারস্থ হয়েও ফল মেলেনি। তাই ১৮ বছর আগে যেমন আন্দোলন সংগঠিত হয়েছিল, তেমনই অনিচ্ছুক এবং ইচ্ছুক চাষিরা দলমত নির্বিশেষে এই কমিটি তৈরি করেছেন।
মন্ত্রী তথা সিঙ্গুরের বিধায়ক বেচারাম জানান, আন্দোলন করা মানুষের অধিকার। যে কেউ সেটা করতে পারে। কিন্তু এই আন্দোলনের কোনও যৌক্তিকতা নেই বলে জানিয়েছেন তিনি। বেচারাম বলেন, ‘‘সিঙ্গুরে জমির প্রায় ৯১ শতাংশ চাষযোগ্য হয়ে গিয়েছে। যাঁরা চাষ করার তাঁরা চাষ করছেন। রাস্তার পাশে যাঁরা পেট্রল পাম্প করার জন্য জমি কিনেছিলেন, তাঁরা চাষি নন। তাঁরা চাষ করছেন না। এখন যাঁরা আন্দোলনের কথা বলছেন তাঁরাই দালালি করে ওই জমিগুলো কিনে দিয়েছিলেন। তা ছাড়া যাঁরা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে সিঙ্গুর আন্দোলন করেছিলেন, তাঁরা এই আন্দোলনে নেই।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy