Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪
দলের কিছু কর্মীও দুষ্কর্মের সঙ্গে যুক্ত: সমীর পাঁজা
soil mafia

Mafia: মাটি-মাফিয়াদের দৌরাত্ম্য বাড়ছে গ্রামীণ হাওড়ায়

এই নয়া উৎপাতে গ্রামীণ হাওড়ায় শুধু চাষযোগ্য জমির পরিমাণই কমছে না, সরকার বহু টাকা রাজস্বও হারাচ্ছে।

অবৈধ: এ ভাবেই কাটা হচ্ছে মাটি।

অবৈধ: এ ভাবেই কাটা হচ্ছে মাটি। নিজস্ব চিত্র।

নুরুল আবসার
উলুবেড়িয়া শেষ আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০২২ ০৬:৪৬
Share: Save:

মাসখানেক ধরে মাটি-মাফিয়াদের দৌরাত্ম্য শুরু হয়েছে গ্রামীণ হাওড়ায়। জগৎবল্লভপুর, উদয়নারায়ণপুর, পাঁচলা প্রভৃতি এলাকার বিঘার পর বিঘা চাষযোগ্য বা শালি জমিতে কোপ পড়ছে। রাতারাতি পাচার হয়ে যাচ্ছে মাটি। কৃষিজমি পুকুর বা ডোবায় পরিণত হয়ে যাচ্ছে ভূমি দফতরের অনুমতি ছাড়াই।

এই নয়া উৎপাতে গ্রামীণ হাওড়ায় শুধু চাষযোগ্য জমির পরিমাণই কমছে না, সরকার বহু টাকা রাজস্বও হারাচ্ছে। শাসক- বিরোধী— দু’পক্ষই মাটি কাটার বিরোধিতা করলেও তা এখনও বন্ধ হয়নি। মাটি কাটার প্রতিবাদ জানিয়ে পথে নেমেছেন উদয়নারায়ণপুরের তৃণমূল বিধায়ক সমীর পাঁজা। তাঁর উদ্যোগে শুরু হয়েছে মাইকে প্রচার। তিনি স্বীকার করেছেন, ‘‘দলীয় কর্মীদের কেউ কেউ এই দুষ্কর্মের সঙ্গে যুক্ত।’’ হাতেনাতে ধরা গেলে তাঁদেরও পুলিশের হাতে তুলে দিতে হবে বলে তিনি নির্দেশ দিয়েছেন। সমীরবাবু জেলা (গ্রামীণ) তৃণমূলের চেয়ারম্যানও।

জেলা ভূমি দফতর সূত্রের খবর, কৃষিজমি থেকে মাটি কাটতে গেলে এই দফতরের অনুমতি নিতে হয়। কতটা গভীর করে মাটি কাটা হবে তা জানিয়ে প্রতি ঘনফুট মাটি বাবদ রয়্যালটির টাকা জমা দিতে হয়। কিন্তু এখানে সে সব কিছুই হচ্ছে না। বিপুল টাকার রাজস্বের ক্ষতি হচ্ছে।

অতিরিক্ত জেলাশাসক (ভূমি ও ভূমি সংস্কার) দেবারতি রায় বলেন, ‘‘বিষয়টি দেখছি।’’ গ্রামীণ জেলা পুলিশের এক কর্তার দাবি, মাটি কাটার খবর পেলেই তা বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে।

কোথায় যাচ্ছে এত মাটি?

গ্রামবাসীদের দাবি, মুম্বই রোড, হাওড়া-আমতা রোড এবং বাগনান-মানকুর রোডের ধারে কারখানার জন্য জমি কেনা হচ্ছে। সেই সব জমি ভরাটের কাজে এই মাটি ব্যবহার করা হচ্ছে। সম্প্রতি ছাই এবং বালির দাম অনেকটা বেড়ে যাওয়ায় মাটি- মাফিয়াদের নজর পড়েছে জমিতে। বিভিন্ন কারখানা সংলগ্ন জমি থেকেই মাটি কাটা হচ্ছে। ফলে, পরিবহণ খরচ অনেক কম পড়ছে।

চাষি বা জমির মালিকদের তরফে প্রতিবাদ নেই কেন?

গ্রামবাসীদের একাংশের দাবি, মাটি-কারবারিরা প্রথমে ‘টার্গেট’ করছে বিভিন্ন কারখানা লাগোয়া অ-কৃষিজমি। কম দামে সেই জমি কিনে মাটি কাটতে শুরু করছে। একইসঙ্গে আশপাশের কৃষিজমির মালিকদের কাছ থেকেও জমি নেওয়ার জন্য চাপ দিচ্ছে। একটি জমির মাটি কাটলে পাশের জমিতে ধস নামে। এ ভাবে নিজের কৃষিজমি নষ্ট হলেও তাৎক্ষণিক লাভের জন্য চাষিদের একাংশ বিক্রি করে দিচ্ছেন। তা ছাড়া, ভয়েও অনেকে প্রতিবাদ করছেন না।

ওই সব জমির জন্য কারবারিরা মাটি কাটার যন্ত্র এবং মাটি পরিবহণের ট্রাক নিয়ে যাওয়ার ফলে আশপাশের জমি এবং রাস্তারও দফারফা হচ্ছে বলে অভিযোগ। গোটা বিষয়ে ভূমি দফতর এবং পুলিশের একাংশও যুক্ত বলে গ্রামবাসীদের অভিযোগ। সে কথা মানেনি ওই দু’পক্ষ।

পাঁচলার ফরওয়ার্ড ব্লকের পক্ষ থেকে সম্প্রতি সেখানকার বিডিওকে মাটি কাটা বন্ধ করার জন্য স্মারকলিপি দেওয়া হয়। দলের নেতা ফরিদ মোল্লা বলেন, ‘‘এ ভাবে মাটি কাটা হলে কৃষি বলে আর কিছু থাকবে না।’’ জগৎবল্লভপুরের তৃণমূল বিধায়ক সীতানাথ ঘোষ বলেন, ‘‘আমার বিধানসভা এলাকায় মাটি কাটার খবর পেয়েই আমি ব্লক ভূমি দফতরকে দেখতে বলি। যতদূর খবর, মাটি কাটা বন্ধ হয়েছে।’’ উদয়নারায়ণপুরের বিধায়ক বলেন, ‘‘দলীয় কর্মীদের বলেছি, মাইকে প্রচার করে মানুষকে সচেতন করতে। কোথাও মাটি কাটা হচ্ছে দেখতে পেলেই তাঁরা যেন গাড়ি আটক করে পুলিশে খবর দেন।’’

অন্য বিষয়গুলি:

soil mafia Howrah
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy