রাতের চন্দননগর মহাকুমা হাসপাতাল। ছবি: তাপস ঘোষ।
মাদক খাইয়ে লুট, চুরি, মদ্যপান— গত কয়েক বছরে এমন নানা ঘটনার স্বাক্ষী থেকেছে চন্দননগর মহকুমা হাসপাতালের রাত। বিভিন্ন সময়ে এ নিয়ে হইচই হয়। রাতের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। পুলিশের নিশি-টহল বাড়ে। তারপর যে কে সেই! আর জি কর কাণ্ডের পরে ফের একই প্রশ্ন সামনে আসছে।
সোমবার গভীর রাতে প্রায় ৫ একরের এই হাসপাতাল ঘুরে বোঝা গেল, কেন দুষ্কৃতীদের ‘পছন্দ’ এই চৌহদ্দি। হাসপাতালে গেট ৩টি। জিটি রোডের অদূরে প্রধান গেট। অক্সিজেন ঘরের দিকে দ্বিতীয়, পরিত্যক্ত কর্মী আবাসনের দিকে তৃতীয় গেট। স্থানীয়দের অভিযোগ, তৃতীয় গেট দিয়ে রাতে অসামাজিক লোকেদের আনাগোনা বাড়ে। হাসপাতাল সূত্রের খবর, সংস্কারের অভাবে গেটটি বন্ধ করা যায় না। স্থানীয় পঞ্চাশোর্ধ্ব এক মহিলা বলেন, ‘‘রাতে ওই গেট পেরোতে হলে গা ছমছম করে। পরিত্যক্ত আবাসন চত্বরে অনেকেই ঘোরাফেরা করেন। যেন মুক্তাঞ্চল।’’
রাতে জায়গাটি ‘বিশেষ সুবিধার নয়’, মানছেন হাসপাতাল সুপার সন্তু ঘোষও। তিনি বলেন, ‘‘ওই দিকটা আগাছায় ভরা। গেটটি বন্ধ করা যায় না। গেটটি বন্ধ রাখলেই যে কারও প্রবেশ আটকানো যাবে তেমনটাও নয়!’’ তবে, আর জি কর কাণ্ডের পরে ওই অংশের নিরাপত্তা নিয়ে ভাবা হচ্ছে বলে সুপারের দাবি। তিনি জানান, মাস খানেক আগে একটি গোলমলের ঘটনার পরে মূল হাসপাতাল চত্বরে ২৪ ঘণ্টা পুলিশ থাকছে। সিসি ক্যামেরা বাড়ানোর জন্য স্বাস্থ্য দফতরে জানানো হয়েছে।
চন্দননগর পুলিশ কমিশনারেটের এক কর্তা বলেন, ‘‘হাসপাতালের নিরাপত্তা সুনির্দিষ্ট করতে আমরা বদ্ধপরিকর। অন্যান্য হাসপাতালের মতো চন্দননগর হাসপাতালেও একটি ফোন নম্বর দেওয়া হয়েছে। প্রয়োজনে ফোন করলেই পুলিশ পৌঁছে যাবে। রাতে টহল বাড়ানো হয়েছে।’’
জানা গিয়েছে, ২৯০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালটিতে নিরাপত্তাকর্মী ২০ জনও নন। তিন শিফটে ৪-৫ জন করে থাকেন। পর্যাপ্ত জিডিএ (জেনারেল ডিউটি অ্যাসিস্ট্যান্ট) না থাকায় বেসরকারি সংস্থার নিরাপত্তাকর্মীদের রোগীকে নামানো-ওঠানো, অক্সিজেন সিলিন্ডার বওয়া, শয্যা প্রস্তুত করার কাজে হাত লাগাতে হয়। সুপারের বক্তব্য, ‘‘নিয়ম অনুযায়ী শয্যাপিছু এক জন সাফাই কর্মী, এক জন জিডিএ থাকার কথা। অর্থাৎ, সব মিলিয়ে সংখ্যাটা ছ’শোর আশপাশে হওয়া উচিত। কিন্তু রয়েছেন ৬০-৬৫ জন। তাই নিরাপত্তাকর্মীদের এগিয়ে আসতে হয়।’’
হাসতে হাসতে এক স্বাস্থ্যকর্মীর উক্তি, ‘‘নিরাপত্তাকর্মীরাই পাহারা দেন, জিডিএ-র কাজ করেন, যখন যেটা প্রয়োজন, সব করেন। মাল্টিপারপাস (বহুমুখী) আর কী!’’
কয়েক মাস আগে দিনের আলোয় হাসপাতাল চত্বরে এক যুবককে পিটিয়ে মারার ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনাতেও নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। আর জি কর কাণ্ডের প্রেক্ষিতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে স্মারকলিপি দেওয়া হয়েছে চন্দননগর নাগরিক সমাজের তরফে। তাতে বলা হয়, চিকিৎসক, নার্স ও অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মীদের নিরাপত্তা নিয়ে নাগরিক সমাজ চিন্তিত। তারা প্রত্যক্ষ করেছে, হাসপাতালে অবাঞ্ছিত লোকেদের যাতায়াত অবাধ। রাতেও এমন লোকজনকে ওই চত্বরে দেখা যায়।
এই পরিস্থিতিতে নাগরিক সমাজের প্রস্তাব, রাত ১০টার পরে নির্দিষ্ট কার্ড ছাড়া হাসপাতালের ভিতরে কেউ যাতে থাকতে না পারেন, তার ব্যবস্থা হোক। রাত ১০টা থেকে সকাল ৬টা পর্যন্ত হাসপাতালের গেটগুলি বন্ধ রাখা হোক। সেখানে নিরাপত্তারক্ষী রাখা হোক যাতে প্রয়োজনে গেট খুলে দেওয়া যায়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy