সিঙ্গুর স্টেশন। —নিজস্ব চিত্র।
কথা ছিল নতুন বছরের সকাল থেকেই সিঙ্গুর হয়ে তারকেশ্বর যাওয়ার। কিন্তু বিক্ষোভের মুখে পড়ে সিঙ্গুর থেকেই হাওড়ার দিকে ফিরে যেতে হল ট্রেনটিকে! রাজ্যের মন্ত্রী তথা সিঙ্গুরের তৃণমূল বিধায়ক বেচারাম মান্নার নেতৃত্বে প্রায় দু’ঘণ্টা ধরে বিক্ষোভ দেখান সিঙ্গুরবাসী এবং তৃণমূল কর্মীরা। তার পর স্টেশনমাস্টারের কাছে একটি স্মারকলিপিও দেন তাঁরা। মন্ত্রীর হুঁশিয়ারি, রেল যদি তাদের সিদ্ধান্ত থেকে সরে না আসে, তা হলে আবার ট্রেন আটকানো হবে।
হাওড়া থেকে সিঙ্গুরগামী ‘সিঙ্গুর আন্দোলন লোকাল’ ট্রেনটির যাত্রাপথ কোনও ভাবেই সম্প্রসারণ করা চলবে না, এই দাবিতে নতুন বছরের সকাল থেকেই সিঙ্গুর স্টেশনে বিক্ষোভ দেখান সিঙ্গুরবাসীরা। সকাল সাড়ে ছ’টা থেকেই সেখানে ভিড় জমাতে শুরু করেন তাঁরা। রাজ্যের মন্ত্রী তথা সিঙ্গুরের তৃণমূল বিধায়ক বেচারাম মান্নার নেতৃত্বে জড়ো হন তৃণমূল কর্মী ও সমর্থকেরা। ছিলেন বেচারামের স্ত্রী তথা হরিপালের বিধায়ক করবী মান্নাও।
হাওড়া থেকে আসা ট্রেনটি সিঙ্গুর স্টেশনের ১ নং প্ল্যাটফর্মে ঢোকে বুধবার সকাল ৬টা ৪৫ মিনিট নাগাদ। সম্প্রসারিত নতুন রুটে তারকেশ্বর যাওয়ার কথা ছিল ট্রেনটির। কিন্তু ট্রেনের সামনে দাঁড়িয়ে পড়েন বিক্ষোভকারীরা। পরিস্থিতি এমন হয় যে, সামাল দিতে ঘটনাস্থলে পৌঁছয় রেলপুলিশ ও হুগলি জেলা গ্ৰামীণ পুলিশ। মন্ত্রী বেচারাম স্পষ্ট জানিয়ে দেন, যত ক্ষণ না রেল এই সিদ্ধান্ত বাতিল করছে, তত ক্ষণ পর্যন্ত আন্দোলন চলবে। কারণ, এই ট্রেনের সঙ্গে সিঙ্গুরের মানুষের আবেগ জড়িয়ে রয়েছে। বেচারাম এ-ও জানিয়ে দেন, সিঙ্গুর আন্দোলন লোকাল ছাড়া অন্য ট্রেন তাঁরা আটকাবেন না। শেষমেশ বিক্ষোভের মুখে ৮টা ১২ মিনিট নাগাদ আটকে থাকা ট্রেনটি পুনরায় হাওড়ার দিকে ফিরে যায়। একে একে ফিরে যান বিক্ষোভকারীরাও। তবে যাওয়ার আগে তাঁরা জানিয়ে গিয়েছেন, বৃহস্পতিবার সকালে যদি ট্রেনটি তারকেশ্বরের দিকে যাওয়ার চেষ্টা করে, তা হলে ফের বিক্ষোভ শুরু হবে।
পূর্ব রেলের জনসংযোগ আধিকারিক দীপ্তিময় দত্ত জানিয়ে দিয়েছেন, পরবর্তী বিজ্ঞপ্তি জারি না হওয়া পর্যন্ত নির্দিষ্ট সময়সূচি মেনেই ট্রেন চালানো হবে। দীপ্তিময় বলেন, ‘‘কোনও ট্রেন বাতিল করা হয়নি, বৃহত্তর স্বার্থে ট্রেনের যাত্রাপথ সম্প্রসারণ করা হয়েছে মাত্র। যদি একটি নির্দিষ্ট অঞ্চলের লোক তাতে বাধা দেন, তা হলে তা সেই স্বার্থের পরিপন্থী।’’
সোমবার রেল বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানিয়েছিল, নতুন বছরের প্রথম দিন থেকেই বদলে যাবে হাওড়া-সিঙ্গুর লোকালের যাত্রাপথ। বুধবার থেকে এক জোড়া সিঙ্গুর লোকালের একটি হরিপাল পর্যন্ত যাওয়ার কথা, অন্যটি যাবে তারকেশ্বর পর্যন্ত। সোমবার দু’টি লোকালের যাত্রাপথ সম্প্রসারণের নোটিস পড়তেই শুরু হয় রাজনৈতিক বিতর্ক। এলাকার তৃণমূল নেতৃত্ব অভিযোগ তোলেন, সিঙ্গুর আন্দোলনের স্মৃতিবিজড়িত সিঙ্গুর লোকাল ‘বন্ধ করে দেওয়া’ হচ্ছে। এ নিয়ে মঙ্গলবারও তৃণমূলের নেতৃত্বে সিঙ্গুর ১ নম্বর প্ল্যাটফর্মে অবস্থান বিক্ষোভে শামিল হন এলাকার মানুষ।
প্রসঙ্গত, ২০০৯ সালে রেলমন্ত্রী থাকার সময় এক জোড়া সিঙ্গুর লোকাল চালু করেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সিঙ্গুরে জমি আন্দোলনের সময় লড়াই করা কৃষকদের সম্মান জানিয়ে লোকাল ট্রেনের নাম দেওয়া হয়েছিল ‘আন্দোলন লোকাল’। দু’টি ট্রেনের মধ্যে একটি ট্রেন সকাল সাড়ে ৬টায় সিঙ্গুরে পৌঁছয় এবং সকাল ৮টা ১২ মিনিটে সিঙ্গুর থেকে ছেড়ে যায়। অপর ট্রেনটি রাত ৮টা ১৫ মিনিটে সিঙ্গুরে ঢোকে এবং ৯টায় সিঙ্গুর ছাড়ে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy