আরামবাগের দ্বারকেশ্বর নদে চলছে বালি তোলার কাজ। ফাইল চিত্র।
বেআইনি ভাবে বালি ও মাটি কাটা নিয়ে সম্প্রতি কলকাতার বৈঠকে হুগলির নেতাদের কড়া বার্তা দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তারপরই নড়ে বসেছে জেলা প্রশাসন ও দলীয় সংগঠন। দলীয় স্তরে বালি বা মাটি বিক্রির সঙ্গে কারা যুক্ত, পুলিশ-প্রশাসনেরই বা তাতে সহযোগিতা কতটা, দলের কারা পুলিশ-প্রশাসনের কাজে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে, তা নিয়ে রাজ্য নেতৃত্বের কাছে তথ্য দেওয়া শুরু হয়েছে। শুধু তাই নয়, আরামবাগে বিএলআরও দফতরের অভিযোগের ভিত্তিতে বেআইনি ভাবে বালি ও মাটি কাটায় অভিযুক্তদের ধরপাকড়ও শুরু হয়েছে।
এ বিষয়ে তৃণমূলের আরামবাগ সাংগঠনিক জেলার সভাপতি রামেন্দু সিংহরায় বলেন, ‘‘কলকাতায় বৈঠকের পর দলনেত্রীর নির্দেশ অনুয়ায়ী আমরা দলে ও প্রশাসনিক স্তরে দফায় দফায় কথা বলেছি। সেই অনুয়ায়ী পুলিশ ও প্রশাসন ব্যবস্থা নিচ্ছে। বিভিন্ন বিষয়ে নিয়মিত রাজ্য নেতৃত্বের সঙ্গে সমন্বয় রেখেই কাজ করা হচ্ছে।’’
জেলার তৃণমূল নেতৃত্বের একাংশের অভিযোগ, বেআইনি ভাবে বালি ও মাটি কাটায় দলের অনেক নেতার প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ মদত রয়েছে। দলের নেতৃত্বের একাংশের স্বেচ্ছাচারিতায় খানাকুল-১ পঞ্চায়েত সমিতি এলাকায় মুণ্ডেশ্বরী নদীর উপর খেয়াঘাটগুলিতে বিধিবদ্ধ টেন্ডার হয়নি বলে অভিযোগ। সেখানে একতরফা ভাবে পারঘাটগুলির দখল নিয়ে নৌকা চালানো হচ্ছে। ওই এলাকারই এক স্থানীয় তৃণমূল নেতার অভিযোগ, ‘‘আগে পারঘাটগুলিতে ৪ টাকা ভাড়া ছিল। এখন সেই ভাড়া ১২টাকা। সরকার যেখানে বছরে ১০ লক্ষ টাকা ডাক পেত সেখানে ৫০ হাজার টাকা জমা দিয়ে পারঘাটের দখল নেওয়া হয়েছে।’’ অন্য এক ভুক্তভোগীর অভিযোগ, ‘‘খানাকুলে কাঠের সেতু দিয়ে চার চাকা গাড়ি নদী পারাপারের জন্য আগে দশ টাকা করে নেওয়া হত। এখন যাতায়াতের জন্য দিতে হচ্ছে ৭০ টাকা। কোনও রসিদও দেওয়া হচ্ছে না।’’
আরামবাগ মহকুমারই তাঁতিশালের মদনপুরের এক গ্রামবাসীর অভিযোগ, ‘‘প্রতিদিন ৩০টি ট্রাক্টর নামিয়ে স্থানীয় একটি জলাভূমি থেকে বেআইনিভাবে মাটি কাটা হচ্ছে। এলাকার এক নাম করা নেতা এতে জড়িত। পুলিশও তাই তাকে ধরছে না।’’ মুখ্যমন্ত্রী নির্দেশ ও জেলা তৃণমূল নেতৃত্বের তথ্য সংগ্রহের পরও কি অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে? ধন্দে দলের নেতারাও। আরামবাগের এক তৃণমূল নেতার ক্ষোভ, ‘‘আগে দলের কাছে আরামবাগ থেকে লিখিত অভিযোগ জানানো হয়েছিল অনেকের নামে। তার মধ্যে তিনজনকে মাত্র শো-কজ করা হয়েছিল। তাঁদের মধ্যে একজন প্রধানও রয়েছেন। গুরুতর অনিয়মের বিরুদ্ধে জেলা নেতৃত্ব কী ব্যবস্থা নিল জানতেই পারলাম না। আর যাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, তাঁরা তো বহাল তবিয়তেই রয়েছেন।’’
কটাক্ষ করছেন বিরোধী নেতারাও। পুড়শুড়ার বিজেপি বিধায়ক বিমান ঘোষ বলেন, ‘‘২০১১ সাল থেকেই আরামবাগ মহকুমায় তৃণমূল নেতারা পুলিশের একাংশকে সঙ্গে নিয়ে অনৈতিক কাজকর্ম করে চলেছেন। এখানে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এলেও কিছু করতে পারবেন না। সেই জন্যই তৃণমূল আরামবাগ মহকুমায় চারটে বিধানসভা আসনেই হেরেছেন।’’
সিপিএমের জেলা সম্পাদক দেবব্রত ঘোষ বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী অনেক কথাই বলেন। কিন্তু তাঁর দলের যাঁরা দায়িত্বে আছেন তাঁরা শুনছেন কোথায়? বালি আর মাটির টানেই শাসকদলের ডাকাবুকোরা বিভোর। মানুষ বোকা নয়। তাঁরা সব বোঝেন।’’
এ বিষয়ে হুগলি জেলা পুলিশের (গ্রামীণ) এক পদস্থ কর্তা বলেন, ‘‘বালি বা মাটি কোথাও বেআইনিভাবে তোলা হলে সাধারণ গ্রামবাসী বা বিএলআরও দফতরের অভিযোগ পেলেই ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। কোথাও পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ পেলেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy