পোলবা ব্লক অফিসের সামনে সারাংপুরের বাসিন্দারা। নিজস্ব চিত্র।
বাড়িতে শৌচাগার নেই। মাঠেঘাটে গেলে তাড়া খেতে হয়। ফলে, মহা সমস্যায় পোলবা-দাদপুর ব্লকের সারাংপুরের বাসিন্দারা। শৌচাগারের দাবিতে প্রশাসনের দরজায় ঘুরে তাঁরা নাজেহাল। গ্রামটি আদিবাসী অধ্যুষিত। সব বাড়িতে শৌচাগার কবে হবে, পঞ্চায়েত থেকে প্রশাসনিক কর্তা বা জনপ্রতিনিধির কাছে সে প্রশ্নের উত্তর মেলে না। শৌচাগারের দাবিতে রাস্তায় নেমেছেন কলকাতার কাছের জেলা হুগলির এই গ্রামের মহিলারা। অথচ, খাতায়-কলমে হুগলি ‘নির্মল’ জেলা।
কিছু দিন আগেই গোঘাট-১ ব্লকের গোঘাট পঞ্চায়েত, পান্ডুয়া ব্লক এবং বৈদ্যবাটী শহরের বিভিন্ন বাড়িতে শৌচাগার না থাকার কথা সামনে এসেছিল। এর পরে কয়েকটি জায়গায় শৌচাগার তৈরির কাজ শুরু হয়। তারমধ্যেই পোলাবার এই গ্রামের অনেক বাড়িতে শৌচাগার না-থাকার জেরে মহিলাদের পথে নামার ঘটনা নিঃসন্দেহে অস্বস্তি বাড়াবে প্রশাসনের।
বিডিও (পোলবা-দাদপুর) মৈত্রেয়ী ভৌমিক জানিয়েছেন, গ্রামবাসীদের আবেদনপত্র সংশ্লিষ্ট দফতরে পাঠানো হয়েছে। জেলা প্রাশাসনের এক কর্তা বলেন, ‘‘এমনটা হওয়ার কথা নয়। ওই গ্রামে প্রশাসন খোঁজ নিয়েব্যবস্থা নেবে।’’
প্রশাসন ‘ব্যবস্থা’ নেওয়ার আশ্বাস দিলেও গ্রামবাসীদের দাবি, গত চার বছরের বেশি সময় ধরে তাঁরা পঞ্চায়েত এবং ব্লক অফিসে দরবার করেছেন। লিখিত আবেদন, স্মারকলিপি দিয়েছেন। সুরাহা মেলেনি। বিষয়টি নিয়ে প্রশাসনের সমালোচনায় সরব বিরোধীরা। তাঁদের কটাক্ষ, সরকারের তরফে পরিষেবা মানুষের দুয়ারে পৌঁছে দেওয়ার কথা বলা হচ্ছে। অথচ, শৌচাগারেরজন্য মহিলাদের সরকারের দুয়ারে ঘুরতে হচ্ছে।
সারাংপুরের পদ্মমণি মুর্মু, বাসন্তী মুর্মু, অঞ্জলি মুর্মুদের অভিযোগ, বছর চারেক আগে স্থানীয় পঞ্চায়েতের তরফে গ্রামের সব পরিবার থেকে ৯০০ করে টাকা নেওয়া হয় শৌচাগার তৈরির আশ্বাস দিয়ে। কিন্তু, পরে সেই টাকা ফেরত দেওয়া হয়। মিনু মুর্মু নামে এক গ্রামবাসী বলেন, ‘‘পঞ্চায়েত আর বিডিও অফিস থেকে বলা হয়, সমীক্ষায় আমাদের এলাকার বহু বাড়ি বাদ গিয়েছে। কেন, সেটাই আমাদের প্রশ্ন। আমাদের কি লাজলজ্জার ব্যাপার নেই! মেয়ে-বৌদের চিরকাল বনবাদাড়েই যেতে হবে?’’
গ্রামের এক প্রবীণার ক্ষোভ, ‘‘এখন বর্ষাকাল। আমাদের অবস্থা বুঝুন। গ্রামে প্রায় ৮০ ঘর আদিবাসী পরিবার। মাত্র ১০-১৫ ঘরে শৌচাগার আছে। তার আবার অনেকগুলির দরজা ভাঙা। মাঠেঘাটে গেলে চাষিদের আপত্তি। আমরা যাই কোথায়?’’ মহিলারা গত ১১ তারিখে স্বাক্ষর সংগ্রহ অভিযান করে শৌচালয় নির্মাণের দাবিতে বিডিও-র কাছে যান।
গ্রামবাসীরা সমস্যার কথা জানালেও পোলবা পঞ্চায়েতের উপপ্রধান তৃণমূলের রমেন হালদার এর মধ্যে রাজনীতি খুঁজে পাচ্ছেন। তাঁর বক্তব্য, ‘‘ওই গ্রামে শৌচাগার নিয়ে কিছু সমস্যা আছে ঠিকই। তবে যতটা বলা হচ্ছে, ততটা নয়। পঞ্চায়েত ভোটের মুখে রাজনীতি হচ্ছে। জমি নিয়ে অনেকের সমস্যা থাকায় শৌচাগার করা যায়নি।’’ রমেনবাবুর পাল্টা সিপিআই (এমএল) লিবারেশন নেতা সজল অধিকারী বলেন, ‘‘পঞ্চায়েতর তরফে অসত্য বলা হচ্ছে। সরকারি প্রকল্পে কাজ হলে মানুষ পঞ্চায়েতে বা বিডিও অফিস শখে যাচ্ছেন?’’ আদিবাসী অধিকার ও বিকাশ মঞ্চের নেতা পাগান মূর্মু বলেন, ‘‘হাজার একটা নতুন প্রকল্পের ঘোষণা প্রতিদিন করছেন মুখ্যমন্ত্রী। সারাংপুরের হাল একবার দেখে যান নবান্নের কর্তারা। পরিস্থিতি দেখেযদি লজ্জা হয়!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy