Advertisement
১১ জানুয়ারি ২০২৫
Gopal Chandra Majumdar

অধ্যক্ষের ছবিতে মালা দিতেন ট্রেনের চালক

গোপালবাবুর সঙ্গে এলাকার ছিল নিবিড় সম্পর্ক। কলেজকে গড়ে তুলতে তিনি প্রাণপাত করেছেন। সন্ধে নামলে হোমিয়োপ্যাথি ওষুধের বাক্স হাতে ঝুলিয়ে ছুটেছেন কলেরা, ম্যালেরিয়ার প্রকোপ থাকা প্রত্যন্ত পান্ডুয়া ব্লকের গ্রাম থেকে গ্রামান্তরে।

গোপালচন্দ্র মজুমদার। 

গোপালচন্দ্র মজুমদার।  —ফাইল চিত্র।

শেষ আপডেট: ০৪ জুলাই ২০২৪ ০৮:১৩
Share: Save:

আজ, ৪ জুলাই। ৭৫ বছরে পা দিচ্ছে খন্যানের ইটাচুনা বিজয়নারায়ণ মহাবিদ্যালয়। দীর্ঘ ইতিহাসে নানা ঘটনার সাক্ষী এই প্রতিষ্ঠান। তার মধ্যে প্রথমেই থাকবে এখানকার প্রথম অধ্যক্ষ গোপালচন্দ্র মজুমদারকে কেন্দ্র করে এমন এক ঘটনা, যা কলেজের চৌহদ্দির বাইরে হলেও এই প্রতিষ্ঠানের ইতিহাসে জুড়ে গিয়েছে।

গোপালবাবুর সঙ্গে এলাকার ছিল নিবিড় সম্পর্ক। কলেজকে গড়ে তুলতে তিনি প্রাণপাত করেছেন। সন্ধে নামলে হোমিয়োপ্যাথি ওষুধের বাক্স হাতে ঝুলিয়ে ছুটেছেন কলেরা, ম্যালেরিয়ার প্রকোপ থাকা প্রত্যন্ত পান্ডুয়া ব্লকের গ্রাম থেকে গ্রামান্তরে। বহু মানুষের চিকিৎসা করেছেন পয়সা না নিয়ে। ঝড়ে বাড়ির চাল উড়ে গিয়েছে, ছাত্রদের নিয়ে বাঁশ কেটে সারিয়ে দিয়েছেন তিনি। কোনও ছাত্র বা ছাত্রী দীর্ঘদিন কলেজ অনুপস্থিত! সোজা তার বাড়িতে হাজির গোপালবাবু। প্রয়োজনে নিজের স্বল্প আয় থেকেই তাদের মাইনে দিয়ে দিয়েছেন। জনপ্রিয় হতে উঠতে তাঁর সময় লাগেনি।

তার পরে এল সেই দিন। ১৯৬৬ সালের ১৬ নভেম্বর। ধুতি-পাঞ্জাবি পরে আর ঝোলা ব্যাগ কাঁধে খন্যান স্টেশনের দিকে যাচ্ছিলেন গোপালবাবু। রোজকার মতোই পথচলতি মানুষের সঙ্গে কুশল বিনিময় করছিলেন। হঠাৎ দেখলেন, একটি বাচ্চাকে নিয়ে আনমনে রেললাইন পেরিয়ে আসছেন এক ব্যক্তি। একটি ট্রেন আসছে। গোপালবাবুর মতো অনেকেই চিৎকার করে তাঁদের সতর্ক করছেন। কিন্তু সে কথা তাঁদের কানে পৌঁছল না।

বাচ্চাটি লাইনের মাঝে। ট্রেন কার্যত ঘাড়ের কাছে। সাক্ষাৎ মৃত্যু! কেউ কিছু বুঝে ওঠার আগেই তড়িৎ গতিতে ছেলেটিকে লাইনের ওধারে ঠেলে দিলেন গোপালবাবু। ছেলেটি প্রাণে বাঁচল। আর গোপালবাবুর ধুতি আটকে গেল ট্রেনের চাকায়। চলে গেল ট্রেন। গোপাল মজুমদারের রক্তে ভিজে উঠল রেললাইন। তাঁর মৃত্যুতে সে দিন হাওড়া-বর্ধমান শাখার ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। শ্রদ্ধা জানাতে তাঁর নিথর দেহের ময়নাতদন্ত
হল খন্যান স্টেশনের উপরে। শবযাত্রায় হাজার হাজার মানুষ চোখের জল ফেললেন।

এই ঘটনার পরে দীর্ঘ এক বছর খন্যান স্টেশনে তাঁর ছবি রাখা ছিল। যে ট্রেনটি প্রথম স্টেশনে ঢুকত, সেটির চালক মালা দিতেন তাঁর ছবিতে।

তথ্য: পার্থ চট্টোপাধ্যায়, আঞ্চলিক ইতিহাস চর্চাকারী।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy