Advertisement
২৭ ডিসেম্বর ২০২৪
Firecrackers Shop

বাজার ভরছে কোন বাজিতে, লাইসেন্সের ধোঁয়াশায় উঠছে প্রশ্ন

পরিবেশকর্মীদের দাবি, বাজি ব্যবসায়ীদের একাংশ এবং প্রশাসনের তরফে পরস্পর বিরোধী তথ্য প্রচারিত হওয়ায় পরিস্থিতি আরও ঘোরালো হয়ে উঠেছে।

—প্রতীকী চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ০৩ নভেম্বর ২০২৩ ০৯:২৩
Share: Save:

পুলিশি নজরদারিতে শহরে বৈধ বাজি বাজার হওয়ার কথা পাঁচটি। সেগুলিতে সব মিলিয়ে দোকান হতে পারে দেড়শোরও বেশি! এ ছাড়াও শহরে চোরাগোপ্তা বাজির দোকান বসে আরও প্রায় হাজারখানেক! কিন্তু এই বিশাল বাজারে বিক্রি করার মতো সবুজ বাজি প্রস্তুতকারী সংস্থা রাজ্যে ছ’টি! ফলে প্রশ্ন উঠছে, এই সব বাজারে বিক্রি করার মতো বাজি আসছে কোথা থেকে? কারাই বা সেগুলি বানাচ্ছেন? আদৌ কি সেগুলি সবুজ বাজি? অনেকে এ-ও আশঙ্কা করছেন, আলোর উৎসব ঘিরে ফের বেআইনি বাজির রমরমা বাজার তৈরি হবে না তো?

পরিবেশকর্মীদের দাবি, বাজি ব্যবসায়ীদের একাংশ এবং প্রশাসনের তরফে পরস্পর বিরোধী তথ্য প্রচারিত হওয়ায় পরিস্থিতি আরও ঘোরালো হয়ে উঠেছে। তাঁদের দাবি, বছরখানেক আগে থেকে রাজ্যে সবুজ বাজি তৈরির ব্যাপারে জোর দেওয়া হলেও সেই অর্থে সুফল মেলেনি। বছরখানেক আগে দক্ষিণ ২৪ পরগনায় গিয়ে হাতেকলমে সবুজ বাজি তৈরির প্রশিক্ষণ দিয়েছিলেন ‘ন্যাশনাল এনভায়রনমেন্টাল ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউট’-এর (নিরি) বিজ্ঞানীরা। এর পর দফায় দফায় রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় এই শিবির হয়েছে। তার পরে রাজ্যের প্রায় ৪২টি বাজি প্রস্তুতকারী সংস্থা নিরি-র পরীক্ষায় বসে। তাতে ২৩টি সংস্থা পাশ করে বলে জানাচ্ছে বাজি ব্যবসায়ীদের সংগঠন ‘পশ্চিমবঙ্গ গ্রিন ফায়ার ওয়ার্কস উন্নয়ন সমিতি’। কিন্তু তার পরেও হাতেগোনা সংস্থা শেষ পর্যন্ত এই রাজ্যে সবুজ বাজি তৈরির ছাড়পত্র পেয়েছে বলে দাবি ওই সংগঠনের সম্পাদক শুভঙ্কর মান্নার।

‘প্রদেশ আতশবাজি ব্যবসায়ী সমিতি’ নামে আরও একটি সংগঠনের সম্পাদক তথা সবুজ বাজি তৈরির ছাড়পত্র পাওয়া সংস্থার প্রধান শুকদেব নস্করের দাবি, ‘‘পুজোর মুখে প্রচুর লাইসেন্স দেওয়া হবে বলে হুজুগ তৈরি করা হয়েছিল। কার্যক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে হাতেগোনা কয়েকটি ছাড়া বেশির ভাগ আবেদনই বাতিল করে দেওয়া হয়েছে। আসলে বাইরের রাজ্যের বাজি বিক্রি করার সুযোগ করে দিতেই এমনটা করা হয়েছে। এখানে সবুজ বাজি তৈরির লাইসেন্স দিয়ে দিলে তো যে বিশেষ গোষ্ঠী ভিন্ রাজ্যের তৈরি বাজি এখানে ঢুকিয়ে ব্যবসা করেন, তাঁদের ব্যবসা ধাক্কা খাবে!’’

যদিও এমন দাবি উড়িয়ে রাজ্যের ‘আতশবাজি উন্নয়ন সমিতি’-র চেয়ারম্যান বাবলা রায় দাবি করলেন, ‘‘ছ’টি নয়। দুশোটি প্রস্তুতকারী সংস্থাকে লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া সবুজ বাজি বিক্রির লাইসেন্স পেয়েছে ৭৮০টি সংস্থা।’’ কিন্তু এই লাইসেন্স দিল কারা? নিরি-র তথ্য অনুযায়ী, তাদের কাছে সবুজ বাজি বানানোর আবেদন জানিয়েছিল তো মাত্র ৪২টি সংস্থা! সেখানে পাশ করেছে যে সংস্থাগুলি তাদের মধ্যেও বেশির ভাগ আটকে গিয়েছে জেলাশাসক লাইসেন্স না দেওয়ায়। বাবলার দাবি, ‘‘ভুল তথ্য রটানো হচ্ছে। আসলে এ বার জেলাশাসক নন, লাইসেন্স দেওয়া হচ্ছে মাইক্রো, স্মল অ্যান্ড মিডিয়াম এন্টারপ্রাইজ়েস অ্যান্ড টেক্সটাইলস (এমএসএমই) দফতর থেকে।’’

এমএসএমই দফতরের দুই আধিকারিক মন্তব্য করতে চাননি। পুরোটাই উপর মহল থেকে করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তাঁরা। উপর মহল মানে কারা? এ ব্যাপারেও স্পষ্ট উত্তর মেলেনি। এমএসএমই দফতরের যুগ্ম অধিকর্তা পার্থ চৌধুরী অবশ্য বলেছেন, ‘‘আমরা কোনও লাইসেন্স দিচ্ছি না। যা দিচ্ছেন জেলাশাসক।’’

কালীপুজো বা দীপাবলির পরে বাজির জেরে বাতাস যেমন ধোঁয়াটে হয়ে থাকে বাজির লাইসেন্সের আকাশও তেমনই ধোঁয়াটে।

অন্য বিষয়গুলি:

Balagarh
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy